ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় গত রোববার রাতে ডাইনি সন্দেহে তিন নারীসহ এক পরিবারের পাঁচজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। পূর্ণিয়া জেলা পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল প্রমোদকুমার মন্ডল খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ডাইনি বলে যাঁদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই আদিবাসী এবং ওরাওঁ জনগোষ্ঠীর মানুষ। ওরাওঁরা মূলত পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও ছত্তিশগড়ে বসবাস করে।

পুলিশ বলছে, মৃত ব্যক্তিরা হলেন বাবুলাল ওরাওঁ (৫০), মঞ্জিত ওরাওঁ (২৫), কাতো দেবী (৬৫), সীতা দেবী (৪৮) ও রানী দেবী (২৩)। তাঁরা সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিশেষত আদিবাসী অঞ্চলে ডাইনি প্রথা কয়েক শ বছর ধরে চলে আসছে। সরকারি–বেসরকারি স্তরে এ প্রথার বিরোধিতায় নানা প্রচার চালানো হলেও প্রথাটি যে বন্ধ করা যায়নি, সাম্প্রতিক এ ঘটনা তারই প্রমাণ।

পুলিশ কর্মকর্তা প্রমোদকুমার মন্ডল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা রামদেব মাহাতোর সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি চিকিৎসার জন্য বাবুলাল ওরাওঁয়ের কাছে যান। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। তিন দিন আগে শিশুটির মৃত্যু হয়। এর জেরে রামদেব সদলবল বাবুলাল ওরাওঁ ও তাঁর পরিবারের ওপর চড়াও হন। তাঁদের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। মরদেহ বস্তায় ভরে ফেলে দেওয়া হয়।

পরিবারের একমাত্র সদস্য বাবুলাল ওঁরাওয়ের ১৬ বছর বয়সী ছেলেসন্তানটি বেঁচে যায়। সে কোনোমতে পালিয়ে তার দাদার বাড়িতে চলে যায়। সে তার দাদাকে ঘটনার বিস্তারিত জানানোর পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।

বাবুলাল ওঁরাওয়ের ছেলে পুলিশকে জানিয়েছে, প্রায় ২০০ লোককে একত্র করে স্থানীয় সালিসি সভা বসানো হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে ওরাওঁয়ের পরিবারকে হত্যা করা হবে। কারণ, ওই পরিবারে ডাইনি রয়েছে। এরপর তাঁদের পিটিয়ে মারা হয় এবং অর্ধমৃত অবস্থায় পেট্রল ঢেলে তাদের জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছে জেলা পুলিশ ও প্রশাসন।

বিহার রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ ঘটনা ঘিরে রাজ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা রাষ্ট্রীয় জনতা দলের তেজস্বী যাদব একটি দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করে বলেছেন, কীভাবে গত কয়েক মাসে বিভিন্ন জায়গায় জনজাতি ও তফসিলি জাতির মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের প্রশাসনকে প্রধানত দায়ী করেছেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। রাষ্ট্রীয় জনতা দল এসব মৃত্যু নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাবে বলেও হুমকি দিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ