ডাইনি সন্দেহে বিহারে একই পরিবারের পাঁচজনকে পুড়িয়ে হত্যা
Published: 8th, July 2025 GMT
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় গত রোববার রাতে ডাইনি সন্দেহে তিন নারীসহ এক পরিবারের পাঁচজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। পূর্ণিয়া জেলা পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল প্রমোদকুমার মন্ডল খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডাইনি বলে যাঁদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই আদিবাসী এবং ওরাওঁ জনগোষ্ঠীর মানুষ। ওরাওঁরা মূলত পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও ছত্তিশগড়ে বসবাস করে।
পুলিশ বলছে, মৃত ব্যক্তিরা হলেন বাবুলাল ওরাওঁ (৫০), মঞ্জিত ওরাওঁ (২৫), কাতো দেবী (৬৫), সীতা দেবী (৪৮) ও রানী দেবী (২৩)। তাঁরা সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিশেষত আদিবাসী অঞ্চলে ডাইনি প্রথা কয়েক শ বছর ধরে চলে আসছে। সরকারি–বেসরকারি স্তরে এ প্রথার বিরোধিতায় নানা প্রচার চালানো হলেও প্রথাটি যে বন্ধ করা যায়নি, সাম্প্রতিক এ ঘটনা তারই প্রমাণ।
পুলিশ কর্মকর্তা প্রমোদকুমার মন্ডল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা রামদেব মাহাতোর সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি চিকিৎসার জন্য বাবুলাল ওরাওঁয়ের কাছে যান। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। তিন দিন আগে শিশুটির মৃত্যু হয়। এর জেরে রামদেব সদলবল বাবুলাল ওরাওঁ ও তাঁর পরিবারের ওপর চড়াও হন। তাঁদের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। মরদেহ বস্তায় ভরে ফেলে দেওয়া হয়।
পরিবারের একমাত্র সদস্য বাবুলাল ওঁরাওয়ের ১৬ বছর বয়সী ছেলেসন্তানটি বেঁচে যায়। সে কোনোমতে পালিয়ে তার দাদার বাড়িতে চলে যায়। সে তার দাদাকে ঘটনার বিস্তারিত জানানোর পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
বাবুলাল ওঁরাওয়ের ছেলে পুলিশকে জানিয়েছে, প্রায় ২০০ লোককে একত্র করে স্থানীয় সালিসি সভা বসানো হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে ওরাওঁয়ের পরিবারকে হত্যা করা হবে। কারণ, ওই পরিবারে ডাইনি রয়েছে। এরপর তাঁদের পিটিয়ে মারা হয় এবং অর্ধমৃত অবস্থায় পেট্রল ঢেলে তাদের জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছে জেলা পুলিশ ও প্রশাসন।
বিহার রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ ঘটনা ঘিরে রাজ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা রাষ্ট্রীয় জনতা দলের তেজস্বী যাদব একটি দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করে বলেছেন, কীভাবে গত কয়েক মাসে বিভিন্ন জায়গায় জনজাতি ও তফসিলি জাতির মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের প্রশাসনকে প্রধানত দায়ী করেছেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। রাষ্ট্রীয় জনতা দল এসব মৃত্যু নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাবে বলেও হুমকি দিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান যে পাঁচজনকে নিয়ে কথা বলেছেন, তাঁরা দেশে আসেননি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের ‘জঙ্গি ট্যাগ’ দেওয়া ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশে যে তিনজনকে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের কেউ জঙ্গি না। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রেস রিলিজও দিয়েছিল। মূলত ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
আজ রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রপ্তানি কার্গো ভিলেজ ও সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের হিমাগার পরিদর্শন করেছেন। পরে সেখানে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান যে পাঁচজনকে নিয়ে কথা বলেছে—সেই পাঁচজন দেশে আসেনি। তাদের সঙ্গে আমাদের সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা তদন্ত করে দেখব। তবে বাংলাদেশে এদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
বাংলাদেশে বর্তমানে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ নেই উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
গত ১০ মাসে আপনারা জঙ্গিবাদের কোনো তথ্য দিতে পেরেছেন—এমন প্রশ্ন তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘যখন ছিল, তখন দিয়েছেন। এখন নেই, তাই দিতে পারেন না। বাংলাদেশে বর্তমানে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ নেই।’
রপ্তানি কার্গো ভিলেজ পরিদর্শন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এখান থেকে শাকসবজি, ফলমূল প্রভৃতি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। রপ্তানি প্রক্রিয়া দেখার জন্যই তিনি কার্গো ভিলেজ পরিদর্শনে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, কিছুদিন আগে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে আমাদের ফলমূল ও শাকসবজি রপ্তানি করতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। সে সময় আমাদের ব্যবসায়ীদের অনেকেই কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন।’ উপদেষ্টা এ সময় বলেন, ‘যেহেতু আমাদের দেশের রপ্তানির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে, সেহেতু এখানে যে কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে, সেটিকে আরও বড় করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’