বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমির ড. শফিকুর রহমান বলেছেন, “আমরা চাই বাংলাদেশ একটা দুর্নীতি মুক্ত মানবিক সমাজ হোক, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। জাত, ধর্ম, দল নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ যেখানে নিরাপত্তা পাবে, সম্মানের সঙ্গে বসবাস করবে, হিংসা-প্রতিহিংসা থাকবেনা। বাংলাদেশ স্বাক্ষী, বিশ্ব স্বাক্ষী- জামায়াত একটা মজলুম দল।”

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চর মিরকামারি গ্রামের জামায়াত কর্মী মুস্তাফিজুর রহমান কলমের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে জামাতের আমির বলেন, “দুর্দান্ত প্রতাপের পর ক্ষমতা ছেড়ে তারা চলে গেছেন, কিন্তু কারো বিরুদ্ধে আমরা কোনো প্রতিশোধ নেইনি। তবে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, তারা বিচার পাওয়া অধিকার রাখেন। তাদের আমরা সহযোগিতা করব, এটা আমাদের অঙ্গিকার। এজন্যই আমরা বিচার চেয়েছি, সংস্কার চেয়েছি।”

আরো পড়ুন:

জামায়াতের আমির খুলনায় আসছেন মঙ্গলবার

কেয়ামত পর্যন্ত জামায়াত ক্ষমতায় আসতে পারবে না: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

এর আগে, সকালে খুলনার দাকোপ উপজেলা জামায়াতের আমীর আবু সাঈদের কবর যিয়ারত করে হেলিকপ্টার যোগে পাবনার ঈশ্বরদীর স্টেডিয়াম মাঠে পৌঁছান। এরপর চর মিরকামারী গ্রামে জামায়াত কর্মীর কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়াও সোমবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করেন।

এরপর তিনি পার্শ্ববর্তী আলহাজ টেক্সটাইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহতের স্মরণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা.

শফিকুর রহমান বলেন, “যেখানে দুর্নীতি হবে, সেখানেই প্রতিবাদ করা হবে। যতদিন দেশের মানুষের মুক্তি না মিলবে, ততদিন লড়াই চলবে। পিছনের জালিম ও সামনের জালিম যতই শক্তিশালী হোক, জামায়াত তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী হবে। এই সংগঠন কোনো জালিমকে ভয় করে না।”

‎অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়তে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “‎একটি বার্তা নিয়ে আসছি, সেটা হলো ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৩১ জন নিহত, এটা বিশ্বাস করি না। এর চেয়ে বেশি সংখ্যা হবে। আমরা দোয়া করি তারা যেন জান্নাতবাসী হয়। নিহতদের পরিবার ও আহতদের পাশে আমরা সংগঠন হিসেবে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। অর্থ-রক্ত যা যা লাগবে, আমাদের সহকর্মীরা দেবে।”

পাবনা জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডলের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক মাওলানা আব্দুর রহিম, নায়েবে আমির মাওলানা জহুরুল ইসলাম খান, সেক্রেটারি আব্দুল গাফ্ফার খান, সহকারী সেক্রেটারি আবু সালেহ আব্দুল্লাহ প্রমুখ।

ঢাকা/শাহীন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত র আম র র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ