ময়মনসিংহের নান্দাইলে ওয়াজ মাহফিলের টাকা লুটপাটের অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনসহ ১৪ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের নয় বছর পর মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ময়মনসিংহ জেলা সমন্বিত দুদুক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বুলু মিয়া বাদী হয়ে মামলা করেন। 

অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রকল্প কার্যক্রম তদন্ত করে অনিয়মের সত্যতা পেয়ে ২০১৭ সালে মামলা করার অনুমতি চেয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করে জেলা কার্যালয়।

মামলা আসামিরা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক চৌধুরী স্বপন, সাবেক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবিএম সিরাজুল হক ও  ১১ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানেরা।

আরো পড়ুন:

নরসিংদীতে অস্ত্রসহ ১২ মামলার আসামি সোহেল গ্রেপ্তার 

মামলার হুমকি দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেন জামাল: পুলিশ সুপার

মামলার বিবরণে জানাযায়, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ১৩২টি ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ৩৬৪ মেট্রিক টন জিআর চাল, যার আর্থিক মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ ৭৪ হাজার ৯৭২ টাকা এবং ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ২২৮টি ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ৪৭১ মেট্রিক টন জিআর চাল, যার আর্থিক মূল্য  ১ কোটি ৬৭ লাখ ১১ হাজার ৫৫১ টাকা আসামিরা লুটপাট করেছেন।

এরমধ্যে ৩৭৮টি প্রকল্পের বিপরীতে প্রত্যেক প্রকল্পের সভাপতি ওয়াজ মাহফিল/ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অনুকূলে অনুষ্ঠানভেদে ৩/২/১ মেট্রিক টন হারে চাল উত্তোলনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন।

আবেদনপত্রগুলোতে সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান (তুহিন), উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরা সনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমিটি একটি ব্যবহারিক প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করেন। 

মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক বুলু মিয়া জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সত্যতা পাওয়ার পর মামলার জন্য প্রধান কার্যালয়ে ২০১৭ সালে আবেদন করা হয়। গত ২০ জুলাই মামলা করতে প্রধান কার্যালয় থেকে নির্দেশনা আসলে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) মামলা করা হয়।

তিনি আরো বলেন, এখন মামলাটির অধিকতর তদন্ত করা হবে। এখানে যদি আরো কারও দায় থাকে তাহলে তাদেরও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

ঢাকা/মিলন/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নভেম্বরে বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির

বাড়ির সামনে ১৫ শতক জমিতে সবজি আবাদ করেছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বয়রা গ্রামের কৃষক শাম্মত আলী (৬০)। পালংশাক, মুলা, ডাঁটা ও মরিচের বীজ বুনেছেন তিনি। মরিচের বীজ বোনার দুই দিন পর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে বীজ পচে গেছে। নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে তিনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

ইতিমধ্যে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান কাটতে শুরু করেন কৃষকেরা। এ ছাড়া শীত মৌসুমকে সামনে রেখে কৃষকেরা সবজি চাষ শুরু করেছেন। ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলগুলোতে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। তবে নভেম্বরের শুরুতে টানা বৃষ্টি এসব ফসলের ওপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর প্রভাব বাজারেও পড়তে পারে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ১৩টি ‍উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার শর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে শর্ষে আবাদ করা যাচ্ছে না। ২১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বাঁধাকপি, ফুলকপি, করলা, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়ার কিছুটা সমস্যা হতে পারে। বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।

নভেম্বরের বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. পারভেজ আনোয়ার বলেন, নিম্নচাপের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। নভেম্বরে এমন বৃষ্টি অপ্রত্যাশিত। ইতিমধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকেরা ধান শুকাতে সমস্যায় পড়বেন। যাঁরা কাটতে পারেননি, তাঁদের জমিতে পানি ওঠায় ধানের অপচয় বেশি হবে। রবি ফসলের ক্ষেত্রে ভুট্টা, ডাল-জাতীয় শস্য ও শর্ষে লাগানো দেরি হয়ে যাবে। ফসল লাগাতে দেরি হলে পরে বোরো ফসল লাগাতেও দেরি হয়ে যাবে।

অধ্যাপক পারভেজ আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, শীতকালীন সবজি যাঁরা দেরিতে লাগাচ্ছেন, তাঁদের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। আগাম যাঁরা আবাদ করেছেন, অতিবৃষ্টির কারণে পচে যাবে এবং রোগবালাই ও পোকার আক্রমণও বাড়বে। সব মিলিয়ে ধান, রবি শস্য ও শীতকালীন সবজি—সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে অসময়ের বৃষ্টির কারণে।

কৃষক শাম্মত আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মরিচ বুনছিলাম। বৃষ্টিতে সব পইচ্চা গেছে। আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সব গাইব হয়ে গেছে। আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি হইছে। এমন বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছিন না। এমন সময়ে ছিডাছাডা বৃষ্টি হইলেও এমন বৃষ্টি আর কখনো হয় নাই।’

গতকাল শনিবার রাত আড়াইটা থেকে রোববার সকাল ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ময়মনসিংহ আবহাওয়া কার্যালয়ের উচ্চ পর্যবেক্ষক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৪টা ২৫ মিনিট থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

ময়মনসিংহ শহরের দীঘারকান্দা এলাকার লাল মিয়া বলেন, ‘২ কাডা জমিতে শাকসবজি করছিলাম। বৃষ্টিতে সব ক্ষতি হইয়া গেছে। এমন টাইমে তো বৃষ্টি হয় না।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর মাসের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় সবজি লাগানো কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। শর্ষে আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, বৃষ্টির কারণে লাগাতে দেরি হলে অর্জন কিছুটা কম হবে। এখন শর্ষে আবাদের ভালো সময়। এ সময় শর্ষের বীজ বুনতে না পারলে আবাদ কমে যাবে। বৃষ্টি কয়েক দিনের মধ্যে থেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নভেম্বরে বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির
  • মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা
  • মাহিদুল-মজিদের সেঞ্চুরির দিনে মুমিনুলের ৮ রানের আক্ষেপ
  • দেশজুড়ে বৃষ্টি ও তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস
  • জুলাই সনদ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে: মামুনুল হক
  • এনসিএল: তিন সেঞ্চুরি ও মিরপুরে উইকেটের মিছিল
  • রংপুরকে পেয়েই আবার নাঈমের সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি মাহফিজুল ও সাদিকুরেরও
  • রাতে বাড়িতে পুলিশের অভিযান, ভোরে ধানখেতে পাওয়া গেল রক্তাক্ত মরদেহ
  • সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে অটোরিকশার ধাক্কা, নিহত ২
  • জেমাইমার কান্নার ম্যাচে টুপটাপ ভাঙল রেকর্ডও