এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে কম্বোডিয়ায় হামলা চালাল থাইল্যান্ড
Published: 24th, July 2025 GMT
সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সংঘাতে জড়িয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনী। সংঘাতে থাইল্যান্ডে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্যাংকক সরকার। আজ বৃহস্পতিবার প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হয়। এই সংঘাতের মধ্যে কম্বোডিয়ায় এফ–১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে বোমাবর্ষণ করেছে থাইল্যান্ড।
কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সীমান্ত দ্বন্দ্ব শত বছরের বেশি পুরোনো। সীমান্তে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটি ‘এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল’ নামে পরিচিত। এই অঞ্চলে ১১ শতকের একটি মন্দির নিয়ে ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড শত্রুতা বাড়ে। এরপর বছরের পর বছর ধরে সীমান্ত সংঘাতে দুই দেশে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
সীমান্তে তা মোয়ান থম নামের একটি মন্দিরের কাছে আজ প্রথম দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। সংঘাত শুরুর জন্য একে অপরের ওপর দোষারোপ করছে তারা। থাইল্যান্ডের দাবি, সীমান্তের কাছে তাদের বাহিনীর ওপর কম্বোডিয়া নজরদারি করতে ড্রোন মোতায়েনের জেরে সংঘাত শুরু হয়েছে। আর কম্বোডিয়ার দাবি, চুক্তি লঙ্ঘন করে ওই মন্দিরের দিকে অগ্রসর হয়েছিল থাই বাহিনী।
থাইল্যান্ডের কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, কম্বোডিয়ার হামলায় দেশটির সুরিন, উবন রাতচাথানি ও শ্রিসাকেত প্রদেশে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সমসাক থেপসুথিন বলেছেন, হামলায় নিহত ১২ জনের মধ্যে এক শিশুসহ ১১ জনই বেসামরিক লোকজন। আর একজন সেনাসদস্য রয়েছেন। কম্বোডিয়ার গোলাবর্ষণে ২৪ জন বেসামরিক নাগরিক ও ৭ সেনাসদস্য আহত হয়েছেন।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিজেদের কোনো হতাহতের তথ্য জানায়নি কম্বোডিয়া সরকার। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডের যুদ্ধবিমান কম্বোডিয়ার একটি সড়কে দুটি বোমা বর্ষণ করেছে। বোমা হামলার কথা স্বীকার করে থাইল্যান্ডের সেনা কর্মকর্তা রিচা সুকসুওয়ানন রয়টার্সকে বলেছেন, তাঁদের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কম্বোডিয়ার সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
সংঘাত শুরুর পর সীমান্ত এলাকা থেকে নিজ নিজ দেশের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড। নিরাপদ স্থানে ৪০ হাজার জনকে সরিয়ে নিচ্ছে ব্যাংকক সরকার। এ ছাড়া কম্বোডিয়ার সঙ্গে নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করেছে থাইল্যান্ড। আর প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক অবনমন করেছে কম্বোডিয়া। কম্বোডিয়ার অভিযোগ, থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী ‘অত্যধিক শক্তি’ প্রয়োগ করেছে।
দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার শুরু মে মাসে। সে সময় সংঘাতে কম্বোডিয়ার এক সেনা নিহত হন। বিগত কয়েক সপ্তাহে সীমান্তে সেনা উপস্থিতিও বাড়িয়েছে দুই দেশ। এরই মধ্যে সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে থাইল্যান্ডের এক সেনা আহত হন। এরপর গত বুধবার কম্বোডিয়া থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নেয় থাইল্যান্ড। কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের হুমকিও দেওয়া হয়। এতে উত্তেজনা বাড়ে।
সংঘাত শুরুর পর থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব আন্তর্জাতিক আইন মেনে সমাধান করতে হবে। অপরদিকে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেছেন, তাঁর দেশও শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। তবে সামরিক ‘আগ্রাসনের’ জবাব সামরিকভাবে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। এমন পরিস্থিতিতে দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের বর্তমান সভাপতি। এই জোটের সদস্য থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ব ড য় র বল ছ ন র একট
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।