থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত কোন দিকে যাচ্ছে
Published: 25th, July 2025 GMT
সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সংঘাত শুরু হয়েছে। এতে থাইল্যান্ডে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকক। তাঁদের মধ্যে ১১ জনই বেসামরিক মানুষ। কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে এখনো হতাহতের কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শত বছরের বেশি সময় ধরে বিরোধ চলছে। ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসকেরা দুই দেশের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে।
২০০৮ সালে দুই দেশের বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। কম্বোডিয়া বিরোধপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চলে ১১ শতকে নির্মিত একটি মন্দিরকে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিলে এ পরিস্থিতি দেখা দেয়। থাইল্যান্ড এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করে। এরপর বিভিন্ন সময় সীমান্ত এলাকায় সংঘাতে দুই দেশের সেনা ও বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
গত মে মাসে এক সংঘর্ষে কম্বোডিয়ার একজন সেনা নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এতে দুই দেশের সম্পর্ক এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছায়। গত দুই মাসে একে অপরের ওপর সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তারা। কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড থেকে ফলমূল ও শাকসবজি আমদানি বন্ধ করেছে, পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা নেওয়াও বন্ধ করেছে।
সংঘাত শুরুর পর থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেছেন, কম্বোডিয়ার সঙ্গে তাঁদের বিরোধ আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে সমাধান করতে হবে। অন্যদিকে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেছেন, তাঁর দেশ শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান চায়। তবে সামরিক আগ্রাসনের জবাবও সশস্ত্রভাবেই দিতে হবে।
বর্তমানে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার এই সংঘাত যুদ্ধে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে দুই দেশে এমন শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী নেতৃত্ব নেই, যাঁরা তাদের এই টানাপোড়েন থেকে সরিয়ে নিতে পারেন।
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এখনো নিজস্ব কর্তৃত্ব অর্জন করতে পারেননি। অন্যদিকে তাঁর বাবা সাবেক ক্ষমতাধর নেতা হুন সেন নিজের জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি সুদৃঢ় করতে এ সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে।
অন্যদিকে থাইল্যান্ডেও বর্তমানে সাবেক নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রার সমর্থনে একটি দুর্বল জোট সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। থাকসিন বিশ্বাস করতেন—তাঁর ও হুন সেনের পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু হুন সেনের সিদ্ধান্তে ব্যক্তিগত একটি কথোপকথন ফাঁসের পর তিনি প্রতারিত হয়েছেন বলে মনে করেন। ওই ফোনকল ফাঁসের ফলে তাঁর মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন‘এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল’ নিয়ে কম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড দ্বন্দ্ব কেন৩ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ব ড য় র কম ব ড য
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।