সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সংঘাত শুরু হয়েছে। এতে থাইল্যান্ডে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকক। তাঁদের মধ্যে ১১ জনই বেসামরিক মানুষ। কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে এখনো হতাহতের কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শত বছরের বেশি সময় ধরে বিরোধ চলছে। ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসকেরা দুই দেশের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে।

২০০৮ সালে দুই দেশের বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। কম্বোডিয়া বিরোধপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চলে ১১ শতকে নির্মিত একটি মন্দিরকে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিলে এ পরিস্থিতি দেখা দেয়। থাইল্যান্ড এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করে। এরপর বিভিন্ন সময় সীমান্ত এলাকায় সংঘাতে দুই দেশের সেনা ও বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

গত মে মাসে এক সংঘর্ষে কম্বোডিয়ার একজন সেনা নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এতে দুই দেশের সম্পর্ক এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছায়। গত দুই মাসে একে অপরের ওপর সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তারা। কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড থেকে ফলমূল ও শাকসবজি আমদানি বন্ধ করেছে, পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা নেওয়াও বন্ধ করেছে।

সংঘাত শুরুর পর থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেছেন, কম্বোডিয়ার সঙ্গে তাঁদের বিরোধ আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে সমাধান করতে হবে। অন্যদিকে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেছেন, তাঁর দেশ শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান চায়। তবে সামরিক আগ্রাসনের জবাবও সশস্ত্রভাবেই দিতে হবে।

বর্তমানে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার এই সংঘাত যুদ্ধে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে দুই দেশে এমন শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী নেতৃত্ব নেই, যাঁরা তাদের এই টানাপোড়েন থেকে সরিয়ে নিতে পারেন।

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এখনো নিজস্ব কর্তৃত্ব অর্জন করতে পারেননি। অন্যদিকে তাঁর বাবা সাবেক ক্ষমতাধর নেতা হুন সেন নিজের জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি সুদৃঢ় করতে এ সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে।

অন্যদিকে থাইল্যান্ডেও বর্তমানে সাবেক নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রার সমর্থনে একটি দুর্বল জোট সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। থাকসিন বিশ্বাস করতেন—তাঁর ও হুন সেনের পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু হুন সেনের সিদ্ধান্তে ব্যক্তিগত একটি কথোপকথন ফাঁসের পর তিনি প্রতারিত হয়েছেন বলে মনে করেন। ওই ফোনকল ফাঁসের ফলে তাঁর মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন‘এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল’ নিয়ে কম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড দ্বন্দ্ব কেন৩ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কম ব ড য় র কম ব ড য

এছাড়াও পড়ুন:

স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন, মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে বাসের চাকায় মৃত্যু নারীর

চট্টগ্রামের পটিয়ায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ার পর বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম ফজিলাতুন নেসা (২৮)। তিনি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার মহেশপুর গ্রামের আলিমুজ্জামান সুজনের স্ত্রী।

পুলিশ জানায়, স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে গতকাল রোববার চট্টগ্রামে বেড়াতে আসেন ফজিলাতুন নেসা। তাঁদের ছয় বছর বয়সী সন্তানও সঙ্গে ছিল। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের একটি বাসায় তাঁরা রাত্রিযাপন করেন। সকালে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেন। আলিমুজ্জামান মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন এবং তাঁর পেছনে ছয় বছর বয়সী সন্তান হুমায়ের হাম্মাদ, এরপর ফজিলাতুন নেসা বসে ছিলেন।

সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার নয়াহাট এলাকায় পৌঁছায় মোটরসাইকেলটি। সেখানে সামনে থাকা একটি লেগুনা হঠাৎ সড়কে থেমে গেলে তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেলটির ব্রেক কষেন আলিমুজ্জামান। এ সময় ফজিলাতুননেসা মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন। এর পরপরই পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস ফজিলাতুন নেসাকে পিষ্ট করে। তাঁকে উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল রাতে চট্টগ্রাম নগরের যে বাসাটিতে ফজিলাতুন নেসা ছিলেন, সেটি তাঁর স্বামী আলিমুজ্জামানের বন্ধু রবিউল ইসলামের। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রবিউল ইসলামের বোন আশরিফা আহমদ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফজিলাতুন নেসার স্বামী নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক। পরিবার নিয়ে পাহাড় দেখতে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি। বেড়াতে যাওয়ার পথেই স্বামী-সন্তানের সামনে দুর্ঘটনায় তাঁর প্রাণহানি হয়েছে।

পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট ওয়াসিম আরাফাত দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিহত নারীর লাশ আইনি–প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লেগুনা ও বাসের চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ