প্যানক্রিয়াটাইটিস বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ পেটব্যথার অন্যতম কারণ। এই রোগ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। অনেক সময় একে গ্যাসের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যার কারণে রোগটি সময়মতো শনাক্ত হয় না এবং এ থেকে জরুরি অবস্থা হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে জীবনহানির ঝুঁকি থাকে।

প্যানক্রিয়াটাইটিস কী?

প্যানক্রিয়াটাইটিস হচ্ছে অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ। পেটের বাঁয়ে পেছন দিকে রয়েছে প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় যা পাচক রস, ইনসুলিনসহ বিভিন্ন হরমোন তৈরি করে থাকে। এই অঙ্গে দুই রকম প্রদাহ হতে পারে:

১.

অ্যাকিউট বা আকস্মিক শুরু হওয়া প্যানক্রিয়াটাইটিস

২. ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী প্যানক্রিয়াটাইটিস

কারণ কী

পিত্তথলিতে পাথর আমাদের দেশে অন্যতম কারণ বলে বিবেচিত। যাঁরা অত্যধিক মদ্যপান করেন, তাঁদের এটা হওয়ার ঝুঁকি বেশি। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি হলেও এটি হতে পারে। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় প্যানক্রিয়াটাইটিস হয়। সংক্রমণের মধ্যে মাম্পস থেকে প্যানক্রিয়াটাইটিস হওয়ার ঘটনা বেশি। এ ছাড়া অজানা বা অটো–ইমিউনের কারণেও হতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন

প্যানক্রিয়াটাইটিসের ব্যথার কিছু সুপরিচিত উপসর্গ আছে। পেটের ওপরের দিকে বা মাঝখানে তীব্র ব্যথা হয়। ব্যথাটি পিঠের দিকে ছড়িয়ে যেতে পারে। শুয়ে থাকলে ব্যথা বেড়ে যায় আর সামনের দিকে ঝুঁকে থাকলে প্রশমিত হয়। এর সঙ্গে বমি ভাব বা প্রচণ্ড বমি হতে পারে। রোগী খুবই অসুস্থ বোধ করেন এবং ব্যথা বাড়তে থাকলে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়।

ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসেও পেটের ওপরের অংশে ব্যথা থাকে, তবে তা অ্যাকিউটের মতো তীব্র হয় না। মাঝেমধ্যে ব্যথা হয়। তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খেলে এ ব্যথা বাড়তে পারে। পায়খানা ফ্যাকাসে, তৈলাক্ত ও গন্ধযুক্ত হতে পারে। হজমে ঘাটতি হয়, ওজন কমে যায়, নানা ধরনের পুষ্টির ঘাটতি হয়। খাওয়ার পর ব্যথা বেড়ে যাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসে প্যানক্রিয়াসের ইনসুলিন নিঃসরণের ক্ষমতা কমে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়, ফলে ডায়াবেটিস দেখা দেয়।

করণীয়

যেকোনো পেটব্যথাকে গ্যাসের ব্যথা হিসেবে না নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্যানক্রিয়াটাইটিসে সময়মতো চিকিৎসা না পেলে অনেক সময় রোগী মারা যেতে পারে। তাই অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিসের তীব্র ব্যথা দেখা দিলে বিলম্ব না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, যেমন তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়া, ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করা। পিত্তথলিতে পাথর বা রোগ থাকলে তার চিকিৎসা নিতে হবে। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকলে চিকিৎসা নিন।


ডা. সাইফ হোসেন খান:মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ