‘উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ১৫ ছাত্রীকে বহিষ্কারের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা বলেছে, প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতার কারণে গণহারে শিক্ষার্থী বহিষ্কার পুরোনো স্বৈরাচারী মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।

আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। কমিটির পক্ষে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন প্ল্যাটফর্মটির সদস্য সামিনা লুৎফা, সীমা দত্ত, ফেরদৌস আরা রুমী ও মারজিয়া প্রভা।

গত জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে বাকৃবি প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। ২০ জুলাই বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো.

হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষরিত এক আদেশে জানানো হয়, জানুয়ারি মাসের সেই ঘটনার তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় এক শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৪ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে একাডেমিক ও আবাসিক হল থেকে বহিষ্কারের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২৩ জুলাই এই আদেশের বিষয়টি জানাজানি হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হওয়া উচিত গণতান্ত্রিক চর্চার কেন্দ্র। কিন্তু গত ১৫ বছর আওয়ামী শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একটা ফ্যাসিবাদী পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। প্রশাসনের দলীয়করণ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-দখলদারত্ব, দুর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জিম্মি করা হয়েছিল।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই আওয়ামীকরণের অংশ ছিল রাজনৈতিক বিবেচনায় আবাসিক হল ও অন্যান্য স্থাপনার নামকরণ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা আশা করেছিলাম সন্ত্রাস-দখলদারত্ব ও দলীয়করণমুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আগের ধারাবাহিকতা লক্ষ করা যাচ্ছে।’

সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপনার নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আবারও রাজনৈতিক বিবেচনায় নামকরণ করতে দেখা গেছে উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, শিক্ষার্থীরা এগুলোর বিরোধিতা করলে তাঁদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্যে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম ‘জুলাই ৩৬’ করা হলে অনেক শিক্ষার্থী এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। হলের নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামত না নেওয়ায় তাঁরা এর প্রতিবাদ করেন।

বাকৃবি প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, প্রশাসনের যেকোনো সিদ্ধান্তের যে কেউ বিরোধিতা করতে পারে। এটাই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। কিন্তু বিরোধিতা করার জন্য গণহারে শিক্ষার্থী বহিষ্কার পুরোনো স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিভাগে তালা ঝুলিয়ে চুয়েটের পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

বিভাগ ও ডিগ্রির পুরোনো নাম ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে এবং বিভাগের সঙ্গে চলমান বৈষম্যের প্রতিবাদে আবারও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকাল নয়টায় বিভাগের মূল ফটক, ক্লাসরুম এবং ল্যাবগুলোতে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১৫ সালে বর্তমান পানিসম্পদ কৌশল বিভাগ চুয়েটের পুরকৌশল অনুষদের অধীনে পুর ও পানিসম্পদ কৌশল নামে যাত্রা শুরু করে। তবে এর তিন বছর পর ২০১৮ সালে বিভাগের নাম এবং ডিগ্রি পরিবর্তন করে পানিসম্পদ কৌশল নামকরণ করা হয়। নতুন নামকরণের ফলে বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিসিএসসহ প্রকৌশল ক্ষেত্রের বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। তাই বিভাগের পূর্ব নাম ও ডিগ্রি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে আন্দোলন করে আসছেন তাঁরা। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা আলোচনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তবে কমিটি গঠনের প্রায় তিন মাস পার হলেও কোনো সমাধান না আসায় আবারও ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।

জানতে চাইলে পুর ও পরিবেশ কৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক সুদীপ কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে গিয়েছে। এর সমাধানে একটি যাচাই-বাছাই কমিটি করা হয়েছে। কমিটি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলছে, শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে কাজ করছে। সবকিছু যাচাই–বাছাই করে কমিটি প্রতিবেদন দেবে।

তিনি আরও বলেন, বারবার এভাবে বিভাগে তালা দেওয়া দুঃখজনক। এতে বিভাগের অনেক কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও সৈয়দ মুজতবা আলীর নামে দুই ভবনের নামকরণ
  • বিভাগে তালা ঝুলিয়ে চুয়েটের পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন