বাকৃবির ১৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের ঘটনা স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ
Published: 25th, July 2025 GMT
‘উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ১৫ ছাত্রীকে বহিষ্কারের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা বলেছে, প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতার কারণে গণহারে শিক্ষার্থী বহিষ্কার পুরোনো স্বৈরাচারী মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।
আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। কমিটির পক্ষে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন প্ল্যাটফর্মটির সদস্য সামিনা লুৎফা, সীমা দত্ত, ফেরদৌস আরা রুমী ও মারজিয়া প্রভা।
গত জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে বাকৃবি প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। ২০ জুলাই বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো.
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হওয়া উচিত গণতান্ত্রিক চর্চার কেন্দ্র। কিন্তু গত ১৫ বছর আওয়ামী শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একটা ফ্যাসিবাদী পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। প্রশাসনের দলীয়করণ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-দখলদারত্ব, দুর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জিম্মি করা হয়েছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই আওয়ামীকরণের অংশ ছিল রাজনৈতিক বিবেচনায় আবাসিক হল ও অন্যান্য স্থাপনার নামকরণ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা আশা করেছিলাম সন্ত্রাস-দখলদারত্ব ও দলীয়করণমুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আগের ধারাবাহিকতা লক্ষ করা যাচ্ছে।’
সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপনার নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আবারও রাজনৈতিক বিবেচনায় নামকরণ করতে দেখা গেছে উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, শিক্ষার্থীরা এগুলোর বিরোধিতা করলে তাঁদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্যে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম ‘জুলাই ৩৬’ করা হলে অনেক শিক্ষার্থী এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। হলের নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামত না নেওয়ায় তাঁরা এর প্রতিবাদ করেন।
বাকৃবি প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, প্রশাসনের যেকোনো সিদ্ধান্তের যে কেউ বিরোধিতা করতে পারে। এটাই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। কিন্তু বিরোধিতা করার জন্য গণহারে শিক্ষার্থী বহিষ্কার পুরোনো স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।
রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি
ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।
যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।
কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী