মুখের দুর্গন্ধ বা মুখ থেকে বাজে গন্ধ (Bad Breath) শুধু ব্যক্তিগত অস্বস্তির কারণ নয়, বরং সামাজিক ও পেশাগত পরিবেশেও বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার পেছনে যেমন স্বাস্থ্যগত কারণ রয়েছে, তেমনি কিছু অভ্যাসগত ভুলও দায়ী। সচেতনতা ও চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে মুখের দুর্গন্ধের সমস্যা সহজেই সমাধান করা সম্ভব।

ডা.

মো. ইমরান হোসেন,  চীফ কনসালট্যান্ট, ডেন্টাল ভিউ অর্থোডন্টিকস অ্যান্ড ইমপ্লান্ট সেন্টার, বনানী মুখে দুর্গন্ধের কারণ, লক্ষণ এবং কখন চিকিৎসা গ্রহণ জরুরি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

মুখের দুর্গন্ধের প্রধান কারণ

আরো পড়ুন:

পেটের ওপরের অংশে ব্যথা, রেড ফ্ল্যাগ সিনড্রোমগুলো জেনে নিন

জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ জাতি ভুলে যেতে পারে না: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবারের কণা

দাঁত ও মাড়ির সংক্রমণ (জিঞ্জিভাইটিস, পেরিওডন্টাইটিস)

জিভের ওপর জীবাণু জমে থাকা

দীর্ঘ সময় পানি না খাওয়া, মুখ শুকিয়ে যাওয়া

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার

পেটের গ্যাস ও হজমের সমস্যা

কিছু ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া

মুখের দুর্গন্ধের লক্ষণ

সকালে উঠেই মুখে বাজে গন্ধ

কথা বলার সময় অপর ব্যক্তি নাক ঢেকে ফেলেন

নিজে বোঝতে না পারলেও অন্যদের থেকে সংকেত পাওয়া

জিহ্বা সাদা বা হলদে আবরণ

দাঁতের গোড়া লাল ও ফুলে যাওয়া

দুর্গন্ধ দূর করার উপায়

দাঁত ব্রাশ ও ফ্লস: দিনে অন্তত দুইবার ব্রাশ এবং রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই ফ্লস ব্যবহার করুন।

জিহ্বা পরিষ্কার করুন: জিহ্বার ওপর জমে থাকা জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া মুখের দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ। প্রতিদিন জিহ্বা পরিষ্কার করা দরকার।

মুখে পানির পরিমাণ বজায় রাখুন: বেশি করে পানি পান করুন। মুখ শুকিয়ে গেলে দুর্গন্ধ বেড়ে যায়।

মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন: অ্যালকোহলমুক্ত অ্যান্টিসেপ্টিক মাউথওয়াশ দিনে ১–২ বার ব্যবহার করতে পারেন।

চুইংগাম বা লবঙ্গ: চিনিমুক্ত চুইংগাম বা লবঙ্গ মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে।

ধূমপান পরিহার করুন: ধূমপান শুধু মুখের দুর্গন্ধই নয়, দাঁত ও মাড়ির ক্ষয়ও ঘটায়।

দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি সব চেষ্টা সত্ত্বেও দুর্গন্ধ না যায়, তবে একজন অভিজ্ঞ দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

চিকিৎসার প্রয়োজন কখন

মুখের দুর্গন্ধ ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হলে

দাঁতে ব্যথা বা রক্ত পড়লে

জিহ্বায় বা মুখে ফোস্কা হলে

মুখের ভেতর থেকে অদ্ভুত স্বাদ পেলে

এসব লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি না করে একজন দন্ত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি।

ডা. মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘‘এটি আপনার ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস ও সম্পর্কের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিকভাবে দাঁতের যত্ন নিলে এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে এই সমস্যার সহজ সমাধান সম্ভব। চিকিৎসা শুধু দাঁতের নয়, এটি সুস্থ জীবনযাপনের প্রথম ধাপ । মুখের দুর্গন্ধকে কেউ কেউ ছোট সমস্যা মনে করলেও, এটা আসলে শরীরের ভেতরের অনেক বড় সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। দাঁতের যত্ন না নিলে এই দুর্গন্ধ দিন দিন বেড়ে যায় এবং সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে।’’

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব স থ যকর জ বন ত চ ক ৎসক র ব যবহ র হ র কর র পর ম র কর ন সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ

কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।

এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।

তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।

স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।

জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ