আস্ত একটি ছাগল খাওয়ার চেষ্টা করছিল একটি অজগর। এটি দেখে প্রাণীটিকে লাঠিসোঁটাসহ যে যা পেয়েছেন, তা দিয়ে পিটিয়ে মেরেছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা বোবারথল (করইছড়া) গ্রামে।

গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেলের ঘটনা এটি। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি স্থানীয় পরিবেশকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, একটি মৃত অজগর পড়ে আছে। সঙ্গে কালো রঙের মৃত ছাগলটি। অজগর ও ছাগলটিকে ঘিরে আছেন বিভিন্ন বয়সের স্থানীয় কিছু লোক। তাঁদের কারও হাতে লাঠি, কেউ মোবাইল ফোনে ছবি তুলছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের মধ্যে বোবারথল (করইছড়া) গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে ৫–৬টি ছাগল নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে। গ্রামের লোকজন ধারণা করেছিলেন, ছাগলগুলো হয়তো কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার স্থানীয় কয়েকজন দেখতে পান, একটি বিশাল অজগর একটি ছাগল গিলে খাওয়ার চেষ্টা করছে। খবরটি দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন লাঠিসোঁটাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে জড়ো হন, অজগরকে ঘিরে ফেলেন। একপর্যায়ে এটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়ে সাপটি মারার সঙ্গে কারা জড়িত, তা জানার চেষ্টা করছে।

বড়লেখার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন গ্রামের কয়েকটি ছাগল খেয়ে ফেলেছে অজগর। সাপটিকে ছাগল খেতে দেখে স্থানীয় লোকজন মেরে ফেলেন।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী সাঈব আহমদ ইয়াসের বলেন, একটি ছাগল খাওয়াকে কেন্দ্র করে অজগরের মতো একটি সাপকে পিটিয়ে মারা সত্যিই দুঃখজনক। এটি শুধু অমানবিক নয়, আইনগতভাবেও অপরাধ।

বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো.

রেজাউল মৃধা আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি দুর্গম এলাকার। বৃষ্টি-বাদলে তো যাওয়াই যায় না। বিষয়টি দ্রুত বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে জানানো হয়েছে।

বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাঁদের লোকজন সেখানে (বোবারথল) গিয়েছিলেন। কারা অজগর হত্যায় জড়িত, তাঁদের নাম জোগাড় করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি এলাকায় বন্য প্রাণী সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির কার্যক্রম নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন য প র ণ ছ গল খ ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন

তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের। 

দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত। 

আরো পড়ুন:

রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন

টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়

প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।

তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।

গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে। 

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। 

ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে। 

২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ