কালো জাদুর অভিযোগে নিশ্চিহ্ন পরিবার, বিহারের গ্রামটিতে এখন নিস্তব্ধতা
Published: 2nd, August 2025 GMT
ভারতের বিহার রাজ্যের টেটগামা গ্রামে ৬ জুলাই রাতে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ ঘটনায় এখনো স্তব্ধ হয়ে আছে একটি পরিবার। ‘কালো জাদুবিদ্যা’ চর্চার অভিযোগে একদল মানুষ ওই রাতে পরিবারটির পাঁচ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
এ ঘটনার তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পরিবারটির বেঁচে যাওয়া সদস্যরা এখনো সেই বিভীষিকার ধাক্কা সামলাতে পারেননি।
মনীষা দেবী (ছদ্মনাম) নামের পরিবারটির এক স্বজন বলেন, ৬ জুলাই রাতটা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার এক রাত। রাত প্রায় ১০টার দিকে এক দল উচ্ছৃঙ্খল জনতা তাঁদের এক আত্মীয়ের বাড়ির সামনে জড়ো হন। আর ভোর হওয়ার আগেই ৭১ বছরের বিধবা কাটো ওঁরাওসহ পাঁচজন নিহত হন।
বিহারের এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে শুধু কালো জাদুবিদ্যার চর্চাকারী সন্দেহে ভারতে ২ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই নারী।
তবে টেটগামায় যা ঘটেছে, তা আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ, সেখানে একসঙ্গে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
অধিকারকর্মীরা বলছেন, ভারতের অনেক পিছিয়ে পড়া আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষেরা এখনো কুসংস্কার আর কালো জাদুবিদ্যায় বিশ্বাস করেন। বিহারের এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরাও সেই সব গোষ্ঠীরই মানুষ।
নিহত আর অভিযুক্ত—দুই পক্ষই ওঁরাও আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষ। তাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একসঙ্গে বসবাস করছিলেন। কিন্তু ৬ জুলাই রাতে যা ঘটেছে, তা তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে এমন একটা বড় ফাটল তৈরি করেছে, যা সহজে ঠিক হওয়ার নয়।
টেটগামা গ্রাম এখন একদম নিস্তব্ধ। কাটো দেবীর চার ছেলে ও তাঁদের পরিবার ছাড়া সবাই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। কিছু ঘরে তালা লাগানো, আবার কিছু ঘর এমনভাবে ফেলে রাখা হয়েছে, যেন মানুষজন হঠাৎ করে পালিয়ে গেছে।
নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন, পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার রাতের চিত্র বোঝার চেষ্টা করেছে বিবিসি।
মনীষা দেবী বলেন, তিনি ঘটনার রাতে হঠাৎ হইচই শুনে বাইরে বের হয়ে আসেন। তখন দেখেন, কাটো দেবীর বড় ছেলে বাবুলাল ওঁরাওয়ের বাড়ির সামনে একটা বড়সড় জটলা তৈরি হয়েছে।
ওই রাতে কাটো দেবী ছাড়াও ছেলে বাবুলাল, তাঁর স্ত্রী সীতা, তাঁদের ছেলে মঞ্জিত এবং পুত্রবধূ রানি দেবীকে হত্যা করা হয়। তাঁদের কিশোর বয়সী ছোট ছেলে শুধু প্রাণে বেঁচে যায়।
বিহারের এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে শুধু কালো জাদুবিদ্যার চর্চাকারী সন্দেহে ভারতে ২ হাজার ৫০০-এর বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই নারী।পুলিশের প্রাথমিক অভিযোগে (এফআইআর) একই গ্রামের বাসিন্দা রামদেব ওঁরাওকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, রামদেবের ছেলে প্রায় ১০ দিন আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। এরপর তিনি অভিযোগ করেন যে কাটো দেবী ও তাঁর পরিবার কালো জাদুবিদ্যা করে তাঁর ছেলেকে মেরে ফেলেছেন। তবে সে অভিযোগের কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই।
পুলিশ বলছে, রামদেব এখন পলাতক। তাঁকে খোঁজা হচ্ছে।
যেদিন খুনের ঘটনা ঘটে, সেদিন রাতে রামদেব তাঁর কিশোর বয়সী অসুস্থ ভাতিজাকে কাটো দেবীদের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। মনীষা দেবী বলেন, তিনি দেখেছিলেন ওই কিশোরকে মাটিতে শুইয়ে রাখা হয়েছিল। গ্রামের ওঝা তখন মন্ত্র পড়ছিলেন এবং ঝাড়ফুঁক দিচ্ছিলেন।
মনীষা দেবী পুলিশের কাছে করা অভিযোগে বলেছেন, কাটো দেবী ও বাবুলালের স্ত্রী সীতা দেবীকে ‘ডাইনি’ বলে দোষারোপ করছিলেন গ্রামের ওঝা। রামদেবের পরিবারের সদস্যের মৃত্যু এবং অসুস্থ হওয়ার জন্য এই দুজনকে দায়ী করা হয়।
মনীষা বলেন, কাটো দেবীকে ঘর থেকে টেনে বাইরে আনা হয় এবং বলা হয়, আধঘণ্টার মধ্যে অসুস্থ ছেলেটিকে সুস্থ করতে হবে। সীতা দেবী তখন পাশের গ্রামে মায়ের বাড়িতে ছিলেন। তাঁকে বলা হয়, তাড়াতাড়ি ফিরে না এলে পরিবারের সদস্যদের আর জীবিত দেখতে পাবেন না।
আরও পড়ুনফাঁসিতে ঝুলিয়ে ‘ডাইনি’ হত্যা০২ জুন ২০২৩দুই কক্ষের এই বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকতেন বাবুলাল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ব র র মদ ব সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ