ভারতের বিহার রাজ্যের টেটগামা গ্রামে ৬ জুলাই রাতে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ ঘটনায় এখনো স্তব্ধ হয়ে আছে একটি পরিবার। ‘কালো জাদুবিদ্যা’ চর্চার অভিযোগে একদল মানুষ ওই রাতে পরিবারটির পাঁচ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

এ ঘটনার তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পরিবারটির বেঁচে যাওয়া সদস্যরা এখনো সেই বিভীষিকার ধাক্কা সামলাতে পারেননি।

মনীষা দেবী (ছদ্মনাম) নামের পরিবারটির এক স্বজন বলেন, ৬ জুলাই রাতটা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার এক রাত। রাত প্রায় ১০টার দিকে এক দল উচ্ছৃঙ্খল জনতা তাঁদের এক আত্মীয়ের বাড়ির সামনে জড়ো হন। আর ভোর হওয়ার আগেই ৭১ বছরের বিধবা কাটো ওঁরাওসহ পাঁচজন নিহত হন।

বিহারের এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে শুধু কালো জাদুবিদ্যার চর্চাকারী সন্দেহে ভারতে ২ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই নারী।

তবে টেটগামায় যা ঘটেছে, তা আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ, সেখানে একসঙ্গে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।

অধিকারকর্মীরা বলছেন, ভারতের অনেক পিছিয়ে পড়া আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষেরা এখনো কুসংস্কার আর কালো জাদুবিদ্যায় বিশ্বাস করেন। বিহারের এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরাও সেই সব গোষ্ঠীরই মানুষ।

নিহত আর অভিযুক্ত—দুই পক্ষই ওঁরাও আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষ। তাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একসঙ্গে বসবাস করছিলেন। কিন্তু ৬ জুলাই রাতে যা ঘটেছে, তা তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে এমন একটা বড় ফাটল তৈরি করেছে, যা সহজে ঠিক হওয়ার নয়।

টেটগামা গ্রাম এখন একদম নিস্তব্ধ। কাটো দেবীর চার ছেলে ও তাঁদের পরিবার ছাড়া সবাই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। কিছু ঘরে তালা লাগানো, আবার কিছু ঘর এমনভাবে ফেলে রাখা হয়েছে, যেন মানুষজন হঠাৎ করে পালিয়ে গেছে।

নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন, পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার রাতের চিত্র বোঝার চেষ্টা করেছে বিবিসি।

মনীষা দেবী বলেন, তিনি ঘটনার রাতে হঠাৎ হইচই শুনে বাইরে বের হয়ে আসেন। তখন দেখেন, কাটো দেবীর বড় ছেলে বাবুলাল ওঁরাওয়ের বাড়ির সামনে একটা বড়সড় জটলা তৈরি হয়েছে।

ওই রাতে কাটো দেবী ছাড়াও ছেলে বাবুলাল, তাঁর স্ত্রী সীতা, তাঁদের ছেলে মঞ্জিত এবং পুত্রবধূ রানি দেবীকে হত্যা করা হয়। তাঁদের কিশোর বয়সী ছোট ছেলে শুধু প্রাণে বেঁচে যায়।

বিহারের এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে শুধু কালো জাদুবিদ্যার চর্চাকারী সন্দেহে ভারতে ২ হাজার ৫০০-এর বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই নারী।

পুলিশের প্রাথমিক অভিযোগে (এফআইআর) একই গ্রামের বাসিন্দা রামদেব ওঁরাওকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, রামদেবের ছেলে প্রায় ১০ দিন আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। এরপর তিনি অভিযোগ করেন যে কাটো দেবী ও তাঁর পরিবার কালো জাদুবিদ্যা করে তাঁর ছেলেকে মেরে ফেলেছেন। তবে সে অভিযোগের কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই।

পুলিশ বলছে, রামদেব এখন পলাতক। তাঁকে খোঁজা হচ্ছে।

যেদিন খুনের ঘটনা ঘটে, সেদিন রাতে রামদেব তাঁর কিশোর বয়সী অসুস্থ ভাতিজাকে কাটো দেবীদের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। মনীষা দেবী বলেন, তিনি দেখেছিলেন ওই কিশোরকে মাটিতে শুইয়ে রাখা হয়েছিল। গ্রামের ওঝা তখন মন্ত্র পড়ছিলেন এবং ঝাড়ফুঁক দিচ্ছিলেন।

মনীষা দেবী পুলিশের কাছে করা অভিযোগে বলেছেন, কাটো দেবী ও বাবুলালের স্ত্রী সীতা দেবীকে ‘ডাইনি’ বলে দোষারোপ করছিলেন গ্রামের ওঝা। রামদেবের পরিবারের সদস্যের মৃত্যু এবং অসুস্থ হওয়ার জন্য এই দুজনকে দায়ী করা হয়।

মনীষা বলেন, কাটো দেবীকে ঘর থেকে টেনে বাইরে আনা হয় এবং বলা হয়, আধঘণ্টার মধ্যে অসুস্থ ছেলেটিকে সুস্থ করতে হবে। সীতা দেবী তখন পাশের গ্রামে মায়ের বাড়িতে ছিলেন। তাঁকে বলা হয়, তাড়াতাড়ি ফিরে না এলে পরিবারের সদস্যদের আর জীবিত দেখতে পাবেন না।

আরও পড়ুনফাঁসিতে ঝুলিয়ে ‘ডাইনি’ হত্যা০২ জুন ২০২৩দুই কক্ষের এই বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকতেন বাবুলাল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পর ব র র মদ ব সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।

কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।

১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)

আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)

ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।

৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।

৪. ঋণের মেয়াদ

কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।

৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)

শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।

৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)

ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।

৭. প্রসেসিং ফি

আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।

৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)

বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।

৯. জামানত (কোলেটারাল)

ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও

আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ