গিল ইতিহাস গড়তে পারেননি, গড়তে হবে ইংল্যান্ডের
Published: 2nd, August 2025 GMT
সুনীল গাভাস্কারের রেকর্ড ভাঙতে পারলেন না শুবমান গিল। কোনো টেস্ট সিরিজে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গাভাস্কারের। ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজে ৭৭৪ রান করেছিলেন গাভাস্কার। সেই রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা জাগিয়েও গিল থেমেছেন ৭৫৪ রানে।
সব মিলিয়ে গিলের ৭৫৪ রানের শীর্ষ দশেও নেই, আছে ১৯ নম্বরে। সর্বোচ্চ রান ডন ব্র্যাডম্যানের। ১৯৩০ সালের অ্যাশেজে ৯৭৪ রান করেছিলেন তিনি। তবে কোনো সফরকারী অধিনায়কের টেস্ট সিরিজে সর্বাধিক রানের রেকর্ড এটি। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে এক সিরিজে চারটি সেঞ্চুরিও করেছেন গিল। অধিনায়ক হিসেবে এক সিরিজে এর চেয়ে বেশি রান আছে শুধু ডন ব্র্যাডম্যানের, ৮১০।
এবারের অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির শেষ ইনিংসে গিল করেছেন ১১ রানে। দ্বিতীয় সেশনের প্রথম বলেই গাস অ্যাটকিনসনের বলে আউট হন গিল। এই টেস্টের প্রথম ইনিংসেও গিল বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ২১ রানে রানআউট হয়ে যান।
গিলের ব্যর্থ হওয়া টেস্টে সেঞ্চুরি পেয়েছেন যশস্বী জয়সোয়াল। ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন জয়সোয়াল। ৮৫ রান নিয়ে দ্বিতীয় সেশনে ব্যাটিং করতে নামা জয়সোয়াল আউট হয়েছেন ১১৮ রান করে। এই সিরিজে আরও একটি সেঞ্চুরি পেয়েছেন জয়সোয়াল। সেটি সিরিজের প্রথম ইনিংসে। গিল ও জয়সোয়াল ছাড়া এই সেশনে আউট হয়েছেন করুণ নায়ার। তিনি করেছেন ১৭ রান।
দ্বিতীয় সেশন শেষে ভারতের লিড দাঁড়িয়েছে ২৮১। ৬ উইকেটে ৩০৪ রান করেছে দলটি। রবীন্দ্র জাদেজা ২৬ ও ধ্রুব জুরেল ২৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। ওভালে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ সফল রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড হলো ২৬৩। ইংল্যান্ড এই কীর্তি গড়েছিল ১২৩ বছর আগে, ১৯০২ সালে। সেই ম্যাচে তারা জিতেছিল ১ উইকেটে। মানে ওভাল টেস্ট জিতে সিরিজ নিজেদের করতে হলে ইতিহাস গড়তে হবে ইংল্যান্ডের।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র কর ড জয়স য় ল র ন কর কর ছ ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
সরকার ও ষুধশিল্পে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে
ওষুধশিল্পের মালিকেরা মনে করছেন, মালিকদের বাদ দিয়ে সরকার ওষুধের বিষয়ে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সরকারের এই নীতি ওষুধশিল্পকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় শিল্পমালিকেরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রায় এক হাজার ওষুধের অনুমোদন দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বাপি) কার্যালয়ে আজ শনিবার দুপুরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সমিতির নেতারা এসব কথা বলেন। ‘ওষুধশিল্প-কারখানা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম। আর এই আয়োজনে সহযোগিতা করে বাপি।
মতবিনিময় সভার শুরুতে বাপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ইউনিমেড ইউনিহেলথের চেয়ারম্যান এম মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের মানুষের প্রয়োজনের ৯৮ শতাংশ ওষুধই এখন দেশে তৈরি হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ দেড় শর মতো দেশে ওষুধ রপ্তানিও করছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন সহজে ওষুধ পাওয়া যায়। ওষুধ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি নেই। ওষুধের এই সাফল্যের পেছনে আছে ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি।
ওষুধশিল্প খাতের এই সাফল্য এখন হুমকির মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ওষুধশিল্পের মালিকেরা। সমিতির সহসভাপতি ও রেনাটা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ কায়সার কবির সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক কমিশনের কিছু সুপারিশ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু নীতি ও পদক্ষেপ ওষুধশিল্পকে আবারও আশির দশকের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
মতবিনিময় সভায় ওষুধশিল্পের মালিকেরা অভিযোগ করেন, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত ১৮ সদস্যের টাস্কফোর্সে ওষুধশিল্পের কোনো প্রতিনিধি রাখেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটিসহ আরও তিনটি কমিটিতে শিল্পমালিকদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। যদিও অতীতে এসব কমিটিতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রাখা হতো।
বাপির কোষাধ্যক্ষ ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, ‘ওষুধশিল্পের মালিকেরা স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। কিন্তু তাঁদের কথা কেউ শুনছে না। মনে হচ্ছে এই শিল্পটাকে নিশানা করা হয়েছে, শিল্পটাকে কেউ নষ্ট করে দিতে চায়। সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ ওষুধশিল্পকে আবারও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।’
বাপির পক্ষ থেকে সম্প্রতি সাংবাদিকদের ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বিভিন্ন কারখানা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকেরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি মালিকদের নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সভায় উপস্থিত একাধিক শিল্পমালিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতি ওষুধশিল্পের জন্য ইতিবাচক, নাকি নেতিবাচক হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ ওষুধের মেধাস্বত্বের ক্ষেত্রে ছাড় পায়, তাই দেশে ওষুধের দাম কম বা সহনশীল। বাপির মহাসচিব ও ডেল্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে মেধাস্বত্বের সেই ছাড় আর পাবে না বাংলাদেশ। ফলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে নিবন্ধন না থাকা নতুন ওষুধের দাম অনেক বেশি হবে।
সভায় উপস্থিত একাধিক ওষুধ কোম্পানির মালিক অভিযোগ করেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ওষুধ নিবন্ধন প্রদানের ক্ষেত্রে বিলম্ব করছে। সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাও ঠিকমতো হচ্ছে না। অধিদপ্তর যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাজারখানেক ওষুধের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শেষ করে, তবে তাতে দেশের মানুষ উপকৃত হবেন।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকেরা জানতে চান ওষুধের কাঁচামালের বিষয়ে শিল্পমালিকেরা কী করছেন। এ সময় তাঁরা জানতে চান, ওষুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও ওষুধের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল এখনো কেন আমদানি করতে হচ্ছে। জবাবে বাপির মহাসচিব মো. জাকির হোসেন বলেন, গজারিয়ায় এপিআই শিল্প পার্কের প্লটগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই ছোট ছোট। বর্তমানে এপিআই শিল্প পার্কে ওষুধ কারখানার মালিক আছেন ২৭ জন। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে কয়েকটিকে প্লটকে একত্র করে প্লটের আকার বাড়ানো হবে। তাতে মালিকের সংখ্যাও কমে ১০-১২ জনে দাঁড়াবে। এ ছাড়া এপিআই শিল্প পার্কে গ্যাসের সংযোগ না থাকায় সেখানে কাঁচামালের কারখানা গড়ে উঠছে না।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক শিল্পমালিক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বীকার করেন, একদল অসাধু লোক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ওষুধ নকল করে বাজারে ছাড়ছে। এসব অসাধু লোক এখন শহর ছেড়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বাপির নির্বাহী কর্মকর্তা মে. জে. (অব.) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, নিপ্রো জেএমআই ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।