পুলিশের বাধা উপেক্ষা ক‌রে ‌বি‌ক্ষোভ মি‌ছিল ও সমাবেশ ক‌রে‌ছে জাতীয় পা‌র্টি।

শ‌নিবার (২ আগস্ট) বিকে‌লে কাকরাই‌লে কেন্দ্রীয় কার্যাল‌য়ের সাম‌নে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কা‌দে‌রের না‌মে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দা‌বি‌তে এই কর্মসূ‌চি পালন ক‌রে দল‌টির নেতাকর্মীরা।এই কর্মসূ‌চির মধ‌্য দি‌য়ে দ‌লের নতুন মহাস‌চিব ব‌্যা‌রিস্টার শামীম হায়দার পা‌টোয়া‌রীর নেতৃ‌ত্বে রাজপ‌থে শোডাউন ক‌রে দল‌টি।

দু‌দিন আগে জিএম কা‌দে‌রের বিরু‌দ্ধে দলীয় কার্যক্রম প‌রিচালনায় নি‌ষেধাজ্ঞা আদেশ দেন আদালত।

আরো পড়ুন:

কর্মীদের মতের মূল্য নাই, জিএম কা‌দের দল চালান স্ত্রীর কথায় 

জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা

জাপার পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের দুপুর থেকে পুলিশ বাধা দেয়। বিকে‌লের ম‌ধ্যে খণ্ড খণ্ড মি‌ছিল এসে যোগ দেয় কাকরাই‌লের কেন্দ্রীয় কার্যাল‌য়ে। দ‌লের প্রেসি‌ডিয়াম সদস‌্য মীর আব্দুস সবুর আসু‌দের নেতৃ‌ত্বে ঢাকা মহানগীরর বিশাল মি‌ছিল সমা‌বে‌শে যোগ দি‌লে সমা‌বে‌শে নেতাকর্মী‌দের উপ‌স্থি‌তি দে‌খে পু‌লিশ পিছু হ‌টে। একপর্যা‌য়ে নেতাকর্মীরা পা‌র্টি অফিসের সাম‌নে সমা‌বেশ ক‌রে।

জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সভাপ‌তি‌ত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, শেরীফা কাদের, মহসিন ইসলাম হাবুল, যুগ্ম মহাসচিব সামছুল হক।

দ‌লের মহাস‌চিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ব‌লেন, “আমাদের অধিকার এবং মানবাধিকার আদায় করতে আইন অমান্য করতে হলেও আমরা পিছপা হবো না। আমাদের এই সমাবেশটি আরো সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারতো কিন্তু বি‌ভিন্ন বিভাগের অসহযোগিতার জন্য একটু এলোমেলো হ‌য়ে‌ছে। তারপরও বল‌বে, আজকের কর্মসূচি সফল হয়েছে।”

হয়রা‌নিমূলক মামলা দি‌য়ে জিএম কা‌দে‌রের কণ্ঠরোধ এবং জাতীয় পা‌র্টির অগ্রযাত্রা রোধ করার চেষ্টা চল‌ছে জা‌নি‌য়ে শামীম পা‌টোয়ারী ব‌লেন, “দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের চেয়ারম্যান জিএম কাদের বিগত সরকারের আমলেও যখন গণমানুষের পক্ষে কথা বলেছেন, তখন মামলা দিয়ে তার কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা চলেছে। এখনো মামলা দিয়ে তার কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা চলছে, আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”

তি‌নি ব‌লেন, “দেশ ডুবে যাচ্ছে, সরকার চেয়ে চেয়ে দেখছে। ভেবেছিলাম দেশে শান্তি আসবে, এখন দেখছি দেশজুড়ে অশান্তি। এই সরকার আইনের শাসনের পরিবর্তে মব এর শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে।”

“ভেবেছিলাম মানুষ চাকরি পাবে, দেখছি বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। আমরা চেয়েছিলাম এই সরকার জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে কিন্তু, আমরা দেখছি এই সরকার জাতিকে বিভক্ত করেছে। সরকার দেশে একটি গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে,” ব‌লেও সমা‌লোচনা ক‌রেন পা‌টোয়ারী।

গতকাল বগুড়ায় জাপা অফিসে হামলা হয়েছে অফিস ক‌রে দল‌টির মহাস‌চিব ব‌লেন, “আগেও যেসব স্থানে আমাদের অফিসে হামলা এবং নেতাকর্মীদের নির্যাতন করা হয়েছে আমরা এর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম। আমাদের দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে, আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানা‌চ্ছি। আমাদের অফিসগুলোতে যেভাবে আগুন দেওয়া হয়েছে তাতে প্রমাণ হয়, দেশে কোনো সরকার নেই। রাষ্ট্রে চিড় ধরেছে আমরা এই রাষ্ট্র মেরামত করতে চাই।”

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে আমরা নতুন উদ্যমে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সব বাধা অতিক্রম করে জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাবে, প্রত‌্যাশা ক‌রেন তি‌নি।

শামীম পা‌টোয়ারী ব‌লেন, “২০১৪ সালে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের দাবিতে আমরা নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। আমাদের পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ২৭০ জন প্রার্থী নির্বাচন থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছিল। আমাদের পার্টি চেয়ারম্যান কাদেরও ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল। এখনো আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চাই, যাতে দেশ ও গণতন্ত্র বাঁচতে পারে। জনগণের আকাঙ্খা পূরণের রাজনীতি করতে যদি জেলে যেতে হয় আমরা জেলে যাব। আমাদের আঘাত করলেও আমরা পিছপা হবো না।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নুরুন নাহার বেগম, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ সেলিম, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, মো.

হেলাল উদ্দিন।

প‌রে জিএম কা‌দে‌রের প‌ক্ষে শ্লোগান দি‌য়ে মি‌ছিল বের ক‌রেন নেতাকর্মীরা। ‌মি‌ছিল‌টি কাকরাইল ঘু‌রে বিজয়নগর পা‌নির ট‌্যাং‌কি হ‌য়ে দ‌লের অফিসে গি‌য়ে শেষ হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ত কর ম কর ছ ল জ এম ক আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।

ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।

১৫ দফা প্রস্তাবনা

সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।

১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ