জুলাই ঘোষণাপত্রে সশস্ত্র বাহিনী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের স্বীকৃতি দাবি
Published: 2nd, August 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রতিষ্ঠান হিসেবে সশস্ত্র বাহিনী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের অবদানের স্বীকৃতি জুলাই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করার দাবি জানানো হয়েছে। শনিবার গণ-অভ্যুত্থানে অবদান রাখা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা থেকে এ দাবি জানানো হয়।
‘গৌরবোজ্জ্বল জুলাই ৩৬’ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি নিজেদের দলীয় কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারী সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও দলটির নেতারা এ দাবি জানান। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
সভায় এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘যখন রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব একীভূত হয়, তখনই মুক্তিযুদ্ধ বা গণ-অভ্যুত্থানের সূচনা হয়। আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে বিবেকের দায় থেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনসাধারণকে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাধারণত অবসরপ্রাপ্ত সেনারা রাজনৈতিক দাবিতে রাজপথে নামেন না। কিন্তু সেদিন ডিওএইচএসগুলোতে সেই রীতির ব্যত্যয় ঘটিয়েছিলেন বলেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনী গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পেরেছিল। তাঁদের মাঠে নামার কারণেই গণ-অভ্যুত্থান সহজ হয়েছে।’
এ সময় সাবেক সেনা কর্মকর্তা মনিশ দেওয়ান বলেন, সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। জগদ্দল পাথরকে সরানো গেলেও তা সম্পূর্ণরূপে সরানো যায়নি। ফুটো বল দিয়ে খেলা চলে না।
লে.
মেজর (অব.) আবদুল ওহাব মিনার বলেন, দেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ছোটখাটো মতপার্থক্য ভুলে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারের উচিত অবিলম্বে ‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা।
এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলমের সঞ্চালয়নায় মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা কামরুজ্জামান ও আমিরুল ইসলাম, কর্নেল (অব.) মোশাররফ, মেজর (অব.) জিয়া, লেফটেন্যান্ট (অব.) খান সোয়েব আমানুল্লাহ, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ইমরান ও জামাল উদ্দিন, মেজর (অব.) আফসারী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত কর ন ল ন বল ন মতব ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
বাংলাদেশে পুলিশে পেশাদারি মনোভাব গড়ে না ওঠার জন্য এই বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারকে দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, বিভাজিত সমাজে ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’—এমন নানা তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
নিজের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি দুই সরকারপ্রধানের (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই কাজ করেছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে একটা ভদ্রতা, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হয়। দেখা করলে অনেক কথার পরও বা অল্প কথার পরও ‘এ কি আমাদের?’—এমন কথা শুনলে প্রথমেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’
সরকারের পরিবর্তনে পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাবিত হওয়ার উদাহরণ দিয়ে মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বাড়ি ফরিদপুর যদি হয় বা ফরিদপুরের আশপাশে হয়, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে না। আবার আরেক সময় বগুড়ায় বাড়ি, ঝিনাইদহে বাড়ি, দিনাজপুরের বাড়ি, তাহলে চাকরিতে নেওয়া যাবে না বা ক্ষেত্রবিশেষে পদোন্নতি হবে না।’ এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার বা পেশাদারি মনোভাব ফেরানো কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘এক অদ্ভুত ব্যাপার। এখানে দুই হাজারের মতো লোক মারা গেল। অথচ বিহেভিয়ারে চেঞ্জ নেই।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার অন্তরায় হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতি এবং সমাজে বিভাজনকে চিহ্নিত করেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই যে প্রচুর সংখ্যার লোক পয়সা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে বা এখানে হলে...অনেক পয়সা হয়, এই অ্যাটিচিউড (আচরণ) থাকলে তো ল এনফোর্সমেন্ট (আইনশৃঙ্লা নিয়ন্ত্রণ) মুশকিল। আর ল এনফোর্সমেন্টের আরেকটা বড় জিনিস হচ্ছে আমি যে সমাজে কাজ করতে যাচ্ছি, সেই সমাজ কতখানি বিভাজিত।’
সংস্কারের পটভূমিতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কর্মপদ্ধতি জানতে চেয়েছেন নুরুল হুদা। পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম বৈঠকে অংশ নেন।