চীনা সরঞ্জাম দিয়ে কীভাবে ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান
Published: 4th, August 2025 GMT
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর অপারেশন কক্ষের স্ক্রিন গত ৭ মে মধ্যরাতের পরপরই হঠাৎ লাল হয়ে ওঠে। সেখানে জ্বলে ওঠে লাল আলো। এর অর্থ হলো, ভারতের সীমান্তবর্তী আকাশে শত্রুর অনেকগুলো যুদ্ধবিমান ওড়াউড়ি করছে।
কয়েক দিন ধরে সেই অপারেশন কক্ষের পাশে একটি গদিতে ঘুমাচ্ছিলেন পাকিস্তান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জাহির সিদ্দু। কারণ, তাঁর আশঙ্কা ছিল, ভারত যেকোনো সময় হামলা চালাতে পারে।
নয়াদিল্লি অভিযোগ করে আসছিল, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে আগের মাসে সংঘটিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ হামলায় ভারতের ২৫ জন ও নেপালের ১ জন পর্যটক নিহত হয়েছিলেন।
ইসলামাবাদ বারবার নয়াদিল্লির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বে ভারত প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয়। ৭ মে ভোরে পাকিস্তানের ওপর বিমান হামলার মাধ্যমে সেই প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করে ভারত।
অপারেশন কক্ষের স্ক্রিনে লাল আলো জ্বলে ওঠার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের তৈরি পাকিস্তানের মূল্যবান জে-১০সি যুদ্ধবিমান আকাশে ওড়ানোর নির্দেশ দেন সিদ্দু। এ সময় অপারেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন—পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এমন একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, সিদ্দু তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর সেনাদের (স্টাফদের) ভারতের বহরে থাকা সবচেয়ে আধুনিক ও গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিমান রাফালকে নিশানা করার নির্দেশ দেন। ফ্রান্সের তৈরি এই জঙ্গি বিমান এর আগে আর কখনো কোনো যুদ্ধে ভূপাতিত হয়নি।
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, তিনি (সিদ্দু) কয়েকটি রাফাল বিধ্বস্ত দেখতে চেয়েছিলেন।
সেই রাতের ঘণ্টাব্যাপী আকাশ–লড়াই হয়েছিল ঘোর অন্ধকারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে প্রায় ১১০টি যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল গত কয়েক দশকে মাঝ আকাশে দুই পক্ষের যুদ্ধবিমানের মধ্যে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স মে মাসে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ভারতের সঙ্গে সংঘাতে চীনের তৈরি পাকিস্তানের জে-১০ যুদ্ধবিমান অন্তত একটি রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য জানানো হয়েছিল।
ফ্রান্সের তৈরি অত্যাধুনিক রাফাল ভূপাতিত হওয়ার খবরে সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকে হতবাক হয়েছিলেন। রাফাল ভূপাতিত হওয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে পরীক্ষিত নয়, চীনের এমন সামরিক সরঞ্জামের বিপরীতে পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জামের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ভূপাতিত হওয়ার খবর প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাফাল নির্মাতা ফরাসি কোম্পানি দাসো এভিয়েশনের শেয়ারমূল্য কমে গিয়েছিল। রাফাল কেনার জন্য ক্রয়াদেশ দেওয়া ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, তারা এখন চীনের জে-১০ যুদ্ধবিমান কেনার কথা বিবেচনা করছে।
তবে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন—ভারতের এমন দুজন ও পাকিস্তানের তিনজন কর্মকর্তা ভিন্নমত দিয়েছেন। তাঁদের মতে, রাফালের কর্মক্ষমতাই মূল সমস্যা ছিল না; বরং ভারতের গোয়েন্দা–ব্যর্থতাই রাফাল ভূপাতিত হওয়ার প্রধান কারণ।
পাকিস্তান একটি ‘কিল চেইন’ বা মাল্টি-ডোমেইন (বহুমাত্রিক) অপারেশন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল। এর মাধ্যমে আকাশ, স্থল ও মহাকাশে থাকা নজরদারি সেন্সরগুলোকে একসঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিলপাকিস্তানের চার কর্মকর্তাভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা হলো, তাদের হাতে চীনের তৈরি পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জের বিষয়ে সঠিক তথ্য ছিল না। জে-১০ যুদ্ধবিমান থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। চীনের বাইরে একমাত্র পাকিস্তানের কাছেই একই সঙ্গে যুদ্ধবিমান জে-১০ (ভিগোরাস ড্রাগনস) ও পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেন, ভুল গোয়েন্দা তথ্যের কারণে রাফাল পাইলটদের মধ্যে মিথ্যা আত্মবিশ্বাস জন্মেছিল। ভারতের পাইলটরা ধরে নিয়েছিলেন, তাঁরা পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের পরিধির বাইরে রয়েছেন। তাঁদের ধারণা ছিল, পাকিস্তানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোমিটার দূরের নিশানায় আঘাত হানতে পারে। এটিই পিএল-১৫–এর সর্বোচ্চ পাল্লা বলে ব্যাপকভাবে প্রচলিত।
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ওত পেতে ছিলাম।’ ভারতের পাইলটদের বিভ্রান্ত করতে দিল্লির প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর ইসলামাবাদ বৈদ্যুতিক যুদ্ধ (ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার) চালিয়েছিল বলেও জানান তিনি। কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা পাকিস্তানের বৈদ্যুতিক যুদ্ধের কার্যকারিতা নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন।
বৈদ্যুতিক যুদ্ধ হলো এমন একধরনের সামরিক কৌশল, যেখানে শত্রুর রাডার, যোগাযোগ ও সেন্সর সিস্টেমকে বিভ্রান্ত বা বিকল করার জন্য বৈদ্যুতিক সংকেত ব্যবহার করা হয়।
গত ৭ মে মধ্যরাতের পর ভারত-পাকিস্তানের প্রায় ১১০টি জঙ্গি বিমান ঘণ্টাখানেক যুদ্ধ করে। এটি ছিল গত কয়েক দশকে মাঝ আকাশে দুই পক্ষের যুদ্ধবিমানের মধ্যে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ।লন্ডনের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) বিমানযুদ্ধ বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেন, ‘ভারতীয়রা ভাবতেই পারেননি যে তাঁদের (যুদ্ধবিমান) লক্ষ্য করে গুলি করা (ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া) হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র যে দীর্ঘপাল্লায় অত্যন্ত কার্যকর, তা স্পষ্ট।’
পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের মতে, রাফালকে আঘাত করা পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ২০০ কিলোমিটার (প্রায় ১২৪ মাইল) দূর থেকে ছোড়া হয়েছিল। ভারতীয় কর্মকর্তাদের মতে, দূরত্বটা আরও বেশি হতে পারে। এত দূর থেকে রাফাল ভূপাতিত করার বিষয়টি সত্য হলে আকাশ থেকে আকাশে দীর্ঘতম পাল্লায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার এটাই বিশ্ব রেকর্ড।
মহড়ায় চীনের চেংদু জে-১০ যুদ্ধবিমান। রাশিয়ার রিয়াজান শহরের বাইরে ডুব্রোভিচি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আন্তর্জাতিক সামরিক প্রতিযোগিতায়, ২৭ আগস্ট ২০২১.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ক স ত ন ব ম নব হ ন র ভ প ত ত হওয় কর মকর ত দ র মত হয় ছ ল হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
ইউরোপে পাইলটদের বেতন কোন দেশে কত
ইউরোপে সবচেয়ে বেশি বেতনের পেশার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পাইলট। ফ্রান্সে এটি পঞ্চম সর্বোচ্চ মাসিক বেতনের পেশা। জার্মানিতে জটিল ভূমিকার পাইলটেরা মাসে ২৮ হাজার ৯৬ ইউরো উপার্জন করেন। যুক্তরাজ্যে পূর্ণকালীন পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা মধ্যম আয়ে পঞ্চম স্থানে। ডেনমার্কে ২০২৩ সালে মাসিক বেতন ১৩ হাজার ৫২৩ ইউরো, দেশটির হিসাবে সপ্তম সর্বোচ্চ বেতন।
অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেতনের বৈচিত্র্য
পাইলটদের বেতন দেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। যুক্তরাজ্যে বেতন শুরু হয় বছরে ৫৪ হাজার ২৮৩ ইউরো (৪৭,০০০ পাউন্ড) থেকে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য এটি প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৪৩ ইউরো (১ ইউরো সমান ১৪১ টাকা ৭৭ পয়সা, ২২ অক্টোবর ২০২৫ হিসাবে) পর্যন্ত হতে পারে, জানিয়েছে ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্যারিয়ার্স সার্ভিস।
ইআরআই অর্থনৈতিক গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতার পাইলটরা এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞ পাইলটের চেয়ে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি আয় করেন। অর্থাৎ অভিজ্ঞ পাইলটরা প্রায় তিন গুণ বেশি উপার্জন করেন।
আরও পড়ুনফ্রিল্যান্সিংয়ে নামার আগে এ পাঁচটি বিষয় ভাবুন১৯ অক্টোবর ২০২৫দেশভিত্তিক তথ্যযুক্তরাজ্য
২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এএনএসের তথ্যানুসারে, পূর্ণকালীন ‘এয়ারক্রাফট পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার’-এর বার্ষিক আয় প্রায় ৯৫ হাজার ২৪০ ইউরো (৮০,৪১৪)। ইআরআইয়ের মতে, গড় বার্ষিক বেতন ৯০ হাজার ২৫৩ ইউরো (৭৮,১৪৬ পাউন্ড), লন্ডনের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৬২ ইউরো (১০০,০৬০ পাউন্ড)।
জার্মানি
জার্মানির ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের তথ্যমতে, গড় মাসিক বেতন ১২ হাজার ৫৬৬ ইউরো (বার্ষিক ১,৫০,৭৯২ ইউরো)। মধ্যম আয় ১০ হাজার ২০৭ ইউরো (বার্ষিক ১,২২,৪৮৪ ইউরো), অভিজ্ঞ ও বিশেষায়িত পাইলটদের ক্ষেত্রে তা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭২ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। ইআরআইয়ের তথ্য অনুসারে, এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটের গড় বেতন ৭৩,৭৮৫ ইউরো, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটদের জন্য ১ লাখ ৩২ হাজার ১১৭ ইউরো।
ফ্রান্স
INSEE জানায়, ‘সিভিল এভিয়েশন টেকনিক্যাল ও কমার্শিয়াল ফ্লাইট অফিসার’দের গড় মাসিক বেতন ৯ হাজার ৩০০ ইউরো (বার্ষিক ১,১১,৬০০ ইউরো)। ERI অনুসারে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য গড় বেতন ১ লাখ ৯ হাজার ২৯২ ইউরো।
ছবি: এমিরেটসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া