রায়েরবাজার কবরস্থানের অজ্ঞাত লাশ উত্তোলন ‘আজ নয়’
Published: 4th, August 2025 GMT
ঢাকার রায়েরবাজার কবরস্থানে গত বছরের জুলাই-আগস্টে অজ্ঞাত পরিচয়ে দাফন করা ব্যক্তিদের লাশ আজ উত্তোলন করা হচ্ছে না।
সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. জুয়েল রানা এই তথ্য দিয়েছেন।
পুলিশের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, পরিচয় শনাক্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের জন্য ৪ আগস্ট বেলা ৩টায় অজ্ঞাত লাশ কবর থেকে তোলার কথা ছিল।
এডিসি জুয়েল রানা বলেন, “অনিবার্য কারণবশত আজকে রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন ও ডিএনএ প্রোফাইল সংরক্ষণের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ সময় ঘোষণা করলে আমরা আপনাদের অবগত করবো।”
পুলিশ জানায়, রায়েরবাজার কবরস্থানে জুলাই-আগস্টে গণকবর দেওয়া অজ্ঞাতদের লাশ আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে উত্তোলন করা হবে এবং ডিএনএ প্রোফাইল সংরক্ষণ করে লাশগুলোর পরিচিতি ও মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করা হবে।
গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.
সেখানে তিনি বলেন, “এখানে ১০০ জনের ওপরে দাফন করা হয়েছে। তাদের অনেককে কিন্তু শনাক্ত করা যায়নি। এগুলো আমাদের চিন্তাভাবনায় আছে। খুব তাড়াতাড়ি এদের শনাক্ত করার ব্যবস্থা করব।”
তিনি বলেন, “এতদিন তাদের আত্মীয়-স্বজন অনেকেই কবর থেকে ওঠানো হোক; এটাতে রাজি হয়নি। এখন তারা রাজি হয়েছে। যদি তারা সবাই রাজি হয়ে যায়, তাহলে তাদের মরদেহগুলো আমরা ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করব।”
“আর কেউ যদি এখান থেকে মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়, আমরা সেটাও অ্যালাউ করব,” যোগ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
কতজনের কবর আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখানে মোট ১১৪টি কবর আছে। এই মরদেহগুলোর পোস্টমর্টেম হয়নি, ডিএনএ টেস্ট হয়নি।”
এই প্রক্রিয়াগুলো হবে কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “যেহেতু ডিএনএ টেস্ট করা হবে, সেহেতু মরদেহগুলোর পোস্টমর্টেম হয়ে যাবে। এটা একটা কমিটির মাধ্যমে হবে।”
ঢাকা/এমআর/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আগস ট ড এনএ মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদদের কবরের কাজে দুই নম্বর ইট, ঠিকাদারকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের কবরের উন্নয়নকাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ ঘটনায় দোষী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আজ শনিবার সকালে জুলাই শহীদদের কবর জিয়ারতে রায়েরবাজার কবরস্থানে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তখন তিনি দেখতে পান, জুলাই আন্দোলনে নিহত ১১৪ শহীদের গণকবর ঘিরে চলমান নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঠিকাদারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শহীদদের কবরের ওপর আপনি এ রকম দুর্নীতি করছেন!’
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে থাকা কর্মকর্তাদের নিয়ে কবরস্থানের কাজ দেখছেন। ইট দেখে তিনি ঠিকাদার কে, জানতে চান। ইটের মান নিয়ে প্রশ্ন করেন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীকে ইটগুলো দেখান। তখন পাশে থাকা ঠিকাদারের প্রতিনিধি বলছিলেন, ‘এক নম্বর (ইট)।’
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘এটা কি এক নম্বর? একটা বাইর করো। এটা এক নম্বর নাকি? এটা কিসের এক নম্বর?’ ইটগুলো নির্বাহী প্রকৌশলীকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন তো কী ইট লাগাইতাছে?’
একই সঙ্গে ঠিকাদারকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আরে শোনেন, এটা কী ইট লাগাইতাসেন আপনি? শহীদদের কবরের ওপর আপনি এ রকম দুর্নীতি করতাসেন! এটা ভালো ইট নাকি?’
এ সময় পাশে ঠিকাদারের লোকদের একজন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘১০০ পার্সেন্ট ভালো ইট ছিল।’ তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ধমক দিয়ে তাঁকে থামিয়ে দেন। নির্বাহী প্রকৌশলীকে ডেকে উপদেষ্টা বলেন, ‘কই, ইঞ্জিনিয়ার সাহেব কই? আপনি দেখেন।’
ভিডিওতে এ সময় ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে যেতে দেখা যায়। এ সময় প্রকৌশলী বলেন, ‘স্যার, আমি ঠিক করে দিচ্ছি স্যার।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রকৌশলীকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কোথা থেকে পাস করেছেন?’ আইইবি (ইনস্টিটউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ) উত্তর শুনে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি আইইবি থেকে পাস করেছেন। আপনিই তো বুঝতে পারবেন, দেখেন।’ এ বলে ইটগুলো দেখান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ইটগুলো দেখিয়ে বলেন, ‘সব সরাতে হবে। ভালো ইট দাও। দুই নম্বরি ইট এখানে লাগাইতাছে। দেহেন ইঞ্জিনিয়ার সাব, দুই নম্বর। সব দুই নম্বর ইট। এ জন্যই উনি (ঠিকাদার) বলেন মোনাজাত করে চলে যেতে। এ জন্যই বলতেছে, ওই হানে মোনাজাত করেই যানগা।’
এ সময় আবারও কথা বলছিলেন ঠিকাদারের প্রতিনিধি। এতে ক্ষেপে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি যান।’ প্রকৌশলীকে বলেন, ‘এই কন্ট্রাক্টর আপনি চেঞ্জ করেন। খালি চুরি ছাড়া আর কিছু নাই।’ উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের খারাপ ইটগুলো দেখিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই যে দেখেন, ছবি তুলে নেন। ছবি উঠান, প্রচার করেন।’
ঠিকাদার ইট পাল্টে দেওয়ার কথা বললে উপদেষ্টা বলেন, ‘কেন, বলার পরে চেঞ্জ কেন?’ প্রকৌশলীকে উন্নয়নকাজের রাফ (প্রাথমকি) ঢালাই দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার সাব, রাফ ঢালাই এ রকম কোয়ালিটি হবেনি? ভাইঙ্গা গেছে। একটু ছবি উঠায় নেন। এ রকম হবে কেন?’ এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি যদি না আসতাম, তখন আপনারা কী করতেন? সে সময় এগুলো লাগাই দিতেন। এত দুর্নীতি করলে তো দেশ চলবে না। এত দুর্নীতি যদি করেন, তো দেশ চলবে?’
রায়েরবাজার কবরস্থানটি ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫ এর আওতাধীন। এ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. মিজানুর রহমান। ওই ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে ১১৪ শহীদের কবর একটি ব্লকে গণকবর হিসেবে রয়েছে। প্রশাসকের নির্দেশে ওই গণকবরের জায়গাটি অন্য কবর থেকে আলাদা করার কাজটি গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে। কাজটি টার্মস কন্ট্রাক্টের (টিসি) আওতায় বাচ্চু কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানো হচ্ছে।
এ প্রকৌশলী আরও বলেন, গত শুক্রবার রাতে এ কাজের জন্য এক ট্রাক ইট আসে। এর মধ্যে কিছু ইট খারাপ এসেছে। আজ সকালে সেখানে গিয়েই তিনি বিষয়টি দেখেন এবং ইটগুলো সরাতে বলেন। কিন্তু এর মধ্যে আজ শনিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শহীদদের কবর জিয়ারতের জন্য রায়েরবাজারে যান। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ মোতাবেক বাচ্চু কনস্ট্রাকশনকে বাদ দিয়ে সেখানে অন্য ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানো হবে বলেও জানান তিনি।