ফুটবল ইতিহাসে, কিংবা আসলে খেলাধুলার ইতিহাসেই সবচেয়ে বিখ্যাত একাডেমি কোনটা? উত্তর: সম্ভবত বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়া একাডেমি। এই একাডেমি থেকে শুধু যুগে যুগে বার্সেলোনার সেরা ফুটবলাররাই উঠে আসেননি, তাঁরা হয়েছেন ফুটবল ইতিহাসেরও অন্যতম সেরা।

এখন পর্যন্ত, লা মাসিয়াই একমাত্র একাডেমি, যেখান থেকে উঠে আসা তিন ফুটবলার একসঙ্গে ব্যালন ডি’অরের মঞ্চে সেরা তিন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। ২০১০ সালে লা মাসিয়ার ইতিহাসের তিন সেরা লিওনেল মেসি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও জাভি হার্নান্দেজ ছিলেন সেই মঞ্চে। পুরস্কারটা অবশ্য ঘরে তুলেছিলেন মেসি।

২০২০-এর পর বার্সা চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। সেই অন্ধকার থেকে আবার দলটা আলোর মুখ দেখেছে লা মাসিয়ার ছেলেদের কৃতিত্বেই। নতুন মৌসুমের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতেও দেখা যাচ্ছে, নতুন একঝাঁক প্রতিভাবান তরুণ উঠে আসছে একাডেমি থেকে।

চলুন জানা যাক, চলতি দশকের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা এমন ছয় প্রতিভার গল্প।

৬আরও পড়ুনএমি মার্তিনেজের গন্তব্য কোথায়: ইউনাইটেড, পিএসজি নাকি সৌদি আরব০৪ আগস্ট ২০২৫মার্ক কাসাদোমার্ক কাসাদো.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ড ম ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরের ‘ওল্ড কেয়ার হোম’কে অভিবাদন

বয়স বাড়লে সন্তানের অবহেলা আর সমাজে একাকিত্বের ভারে অনেক মা-বাবার জীবনই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। যে সন্তানেরা একসময় তাঁদের হাত ধরে চলতে শিখেছে, সেই সন্তানেরাই একসময় তাঁদের হাত ছেড়ে দেয়। এমন হাজারো অবহেলিত মা–বাবার গল্প আমাদের সমাজে নতুন নয়। কিন্তু সেই আঁধারের মধ্যেও কিছু মানুষ আলোর দিশা দেখান। যশোরের সমসপুর গ্রামের জ্যোৎস্না মুখার্জি তেমনই এক ব্যতিক্রমী মানুষ, যিনি অসহায় মায়েদের জন্য গড়ে তুলেছেন এক নিরাপদ আশ্রয়, যার নাম ‘ওল্ড কেয়ার হোম’।

স্বামী হারানোর পর ট্রেন দুর্ঘটনায় একমাত্র ছেলের মৃত্যু রাবেয়া বেগমকে (৮০) প্রায় নিঃস্ব করে দিয়েছিল। সেই চরম হতাশার মুহূর্তে তিনি এই বৃদ্ধাশ্রমের খোঁজ পান, তখন যেন নতুন করে জীবনের ঠিকানা খুঁজে পান। ১২ বছর ধরে এই হোমের অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁর দিন কাটছে সুখে-শান্তিতে। এটি কেবল একটি বৃদ্ধাশ্রম নয়, এটি মায়েদের জন্য একটি পরিবার। ভৈরব নদের তীরে, প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠা এ জায়গা তাই কেবল একটি ভবন নয়, এটি ভালোবাসার এক আশ্রয়স্থল।

২০০৮ সালে একটি মাটির ঘরে শুরু হয়েছিল এ বৃদ্ধাশ্রমের পথচলা, আর এখন সেখানে পাকা ভবন, প্রার্থনাকক্ষ, বিনোদনের ব্যবস্থা এবং চিকিৎসার সুবিধা রয়েছে। থাকা-খাওয়ার সুবিধা ছাড়াও মায়েদের মানসিক শান্তি নিশ্চিত করার জন্য গল্পের আসর, গান, নাচ ও ভ্রমণেরও ব্যবস্থা আছে এখানে। এখানে আসা মায়েরা জ্যোৎস্না মুখার্জিকে ভালোবাসেন নিজের মেয়ের মতোই।

জ্যোৎস্না মুখার্জির কার্যক্রমে গর্বিত এলাকার বাসিন্দারাও। সমসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাশেম আলী বলেন, ‘অজপাড়াগাঁয়ে এমন ভালো বৃদ্ধাশ্রম বাংলাদেশে আছে কি না, আমার জানা নেই। এখানকার পরিবেশ খুব সুন্দর। এখানে থাকার পাশাপাশি পায়ের জুতা থেকে শুরু করে সবকিছু বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। ওষুধও দেওয়া হয়।’

প্রশংসনীয় বিষয়, কোনো অনুদান বা কারও সাহায্য–সহযোগিতা ছাড়াই জনসেবামূলক এমন মহতী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন জ্যোৎস্না মুখার্জি। তাঁর এই বৃদ্ধাশ্রম চলে নিজস্ব আয়ে। কৃষি, পশুপালন ও ব্যবসার আয় দিয়ে তিনি এই মহৎ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি প্রমাণ করে, যদি সদিচ্ছা থাকে, তবে নিজের উদ্যোগে একটি বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। সমাজসেবা অধিদপ্তরের স্বীকৃতি এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রশংসা এ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বকেই তুলে ধরে।

ওল্ড কেয়ার হোমে শুধু মায়েরা নন, বাবারাও থাকবেন—এমন পরিকল্পনায় বৃদ্ধাশ্রমটির পরিসর আরও বাড়াতে চান জ্যোৎস্না মুখার্জি। তাঁর সেই স্বপ্নও পূরণ হোক। তাঁর এই নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা সমাজের জন্য এক দৃষ্টান্ত। তাঁর অনুপ্রেরণায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আরও সামর্থ্যবান ও উদ্যোগী মানুষ এগিয়ে আসবেন এবং অবহেলিত মানুষের শেষজীবনে ভরসার হাত হয়ে দাঁড়াবেন, সেটিই কাম্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ