Prothomalo:
2025-11-03@08:17:43 GMT

পোতাজিয়া যেন ‘গ্রাম্য ভেনিস’

Published: 5th, September 2025 GMT

‘বর্ষাকালে জলে সব ভরে ওঠে এবং দুই পাড়ার মধ্যবর্তী জল, পাড়ার জমির সমতলে এসে দাঁড়ায়। তখন নৌকোয় যাতায়াত। গ্রামটি প্রকাণ্ড, কিন্তু এ রকম “গ্রাম্য ভেনিস” আমি আর দ্বিতীয় দেখিনি।’

প্রায় ৭০ বছর আগে শাহজাদপুরের পোতাজিয়া গ্রাম সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছিলেন সাহিত্যিক পরিমল গোস্বামী। তাঁর বাবা বিহারীলাল গোস্বামী পোতাজিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বোলপুরে ইংরেজির অধ্যাপনা করার জন্য ডেকেছিলেন। বিহারীলাল পোতাজিয়া ছেড়ে যাননি।

ইতালির ভেনিস শহরে যেমন এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ির যোগাযোগের মাধ্যম ডিঙি নৌকা, বর্ষায় পোতাজিয়াও ঠিক ভেনিস হয়ে ওঠে। ‘আর বাকি ছয় মাস এই বিপুল জলরাশি কোথায় সরে যায়। তখন ছোট ছোট টিলার ওপরে গ্রামের পাড়াগুলো দেখায় যেন পশ্চিমের কোনো পাহাড়ে জায়গা। এই গ্রাম থেকে মাইলখানেক দূরে যে নদীটি প্রবাহিত সেটি “চলনবিল” নামে খ্যাত প্রচণ্ড একটি হ্রদ থেকে বেরিয়ে এসেছে। শীত-গ্রীষ্মে ছোট নদী হলেও বর্ষায় যে রূপ ধরত তাকে পদ্মার চেয়ে ছোট নদী বলা যায় না।’ পরিমল গোস্বামীর লেখা স্মৃতি চিত্রণ পড়ে এভাবেই গ্রামটির শীত-গ্রীষ্মের সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়েছেন গ্রামের জমিদারপুত্র ফনীন্দ্রনাথ রায়। ১৯৬০ সালের কথাসাহিত্য নামক মাসিকে তা প্রকাশিত হয়েছিল। ফনীন্দ্রনাথ বিহারীলাল গোস্বামীর সরাসরি ছাত্র ছিলেন। তাঁর এই লেখায় তিনি একবার চলনবিলকে ‘ভূমধ্যসাগর বিশেষ’ বলে উল্লেখ করেছেন। আবার বলেছেন, ‘নদীগুলোর তীরে ঢেউখেলানো সবুজ মাঠে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা হৃষ্টপুষ্ট গরুতে ভরা বাথানগুলো দেখে আমার আপনা থেকেই মনে পড়ত বিলেতী বইগুলোতে দেখা হল্যান্ডের অনুরূপ ছবি।’

স্মৃতি চিত্রণ বসুমতী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ১৮টি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৫৮ সালে কলকাতা থেকে জ্ঞান প্রকাশনী তা বই আকারে প্রকাশ করে।

পোতাজিয়ার পাশের গ্রাম বুড়ি পোতাজিয়ায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস হওয়াকে ঘিরে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে পোতাজিয়া গ্রামটি।

পরিমল গোস্বামীর সমগ্র স্মৃতি চিত্র। এই সমগ্রের প্রথম বইটি হচ্ছে ‘স্মৃতি চিত্রণ’। স্মৃতি চিত্রণের মূল বইয়ের মলাট আর পাওয়া যায় না।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

সিরাজগঞ্জের গ্রামটি শত শত পাখিতে মুখর

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে উলিপুর গ্রাম। চলনবিলের শান্ত এ গ্রামে বহু শতাব্দী প্রাচীন শত বিঘা আয়তনের একটি দিঘির চারপাশে গড়ে উঠেছে মানুষের ঘরবসতি। এখানকার প্রাচীন একটি বটগাছসহ বিভিন্ন গাছে বাসা করেছে শত শত শামুকখোল পাখি। পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে গ্রামটি।

আলো ফুটতে না ফুটতেই অবারিত চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় খাবারের খোঁজে যেতে থাকে পাখির দল। তাদের এই ওড়াউড়ি মুগ্ধ করে আশপাশের বাসিন্দাদের।

গতকাল শনিবার পাখিদের গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, শামুকখোল পাখিদের কোনোটি বটগাছের কচি পাতায় ঠোকর দিচ্ছে, আবার কোনোটি ছানাদের আগলে রাখছে। এক ডাল থেকে আরেক ডালে ওড়াউড়ি করছে।

উলিপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আরশেদ আলী বলেন, প্রায় এক যুগ আগে শামুকখোল পাখিরা এখানে এসে গাছে বাসা বাঁধে। এরপর প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে বাচ্চা ফোটায়। ফলে তাদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকায় গ্রামবাসী সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা কেউ পাখিদের বিরক্ত করবেন না। অন্যরা যেন না করেন, সেটাও নিশ্চিত করবেন। দর্শনার্থীরা এলে তাঁরা নিজেরাই মানুষকে সচেতন করেন।

মাহফুজা বেগম নামের এক গৃহবধূ বলেন, আগে শুধু তাঁদের আত্মীয়রা এ গ্রামে বেড়াতে আসতেন। এখন পাখি দেখতে অনেক মানুষ আসেন। পাখিদের বিশ্রামের জন্য গ্রামের মানুষ দিঘির পানিতে বাঁশ ও কঞ্চি দিয়ে গড়ে তুলেছেন আবাস। মাঝেমধ্যে খাবারও দেওয়া হয়।

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘স্বাধীন জীবন’–এর পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ মৌসুমে তিনি একাধিকবার পাখি দেখতে উলিপুর গ্রামে গেছেন। শামুকখোলের দুটি প্রজাতির মধ্যে একটি এশীয়, আরেকটি আফ্রিকান। এই গ্রামে আসা শামুকখোল পাখিগুলো এশীয় প্রজাতির। এই শামুকখোল পাখি সংরক্ষিত প্রাণীর তালিকায় আছে।

শামুকখোল পাখিদের যাতে কেউ বিরক্ত না করেন, সেটা নিশ্চিত করেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার উলিপুর গ্রামের বাসিন্দারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিরাজগঞ্জের গ্রামটি শত শত পাখিতে মুখর