১৫ বছরের প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারত তার তৃতীয় পারমাণবিক শক্তিচালিত বিমানবাহী রণতরী তৈরি করবে। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো নৌবাহিনী ভারতীয় তৈরি যুদ্ধবিমানকেও অন্তর্ভুক্ত করবে। শুক্রবার রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও পাকিস্তানের সাথে সীমান্তবর্তী ভারত মারাত্মক লড়াই করেছে। এসব সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি ক্রমবর্ধমানভাবে দেশীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করছে যাতে তারা সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং রাশিয়া, ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশী সরবরাহকারীদের উপর নির্ভরতা কমাতে পারে।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২৫ সালের রোডম্যাপে বলা হয়েছে, “যেহেতু দেশটি আসন্ন দশকগুলোতে বৃহত্তর চ্যালেঞ্জ এবং দায়িত্ব গ্রহণের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে, তাই পরিষেবাগুলোকে সেই অনুযায়ী সজ্জিত করা অত্যন্ত জরুরি। বৃহত্তর বেসরকারি-সরকারি অংশীদারিত্বই এগিয়ে যাওয়ার পথ।”

ভারতের বর্তমানে দুটি বিমানবাহী রণতরী রয়েছে। এগুলোর একটি রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা এবং অন্যটি স্ব-নির্মিত। প্রস্তাবিত নতুন রণতরীটি দীর্ঘপাল্লার এবং গোপনীয় অপারেশনের জন্য পারমাণবিক শক্তিচালিত হবে। এ ধরনের রণতরী ভারতের জন্য প্রথম বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রস্তাবটিতে ক্যারিয়ার এবং অন্যান্য ভবিষ্যতের যুদ্ধজাহাজকে সমর্থন করার জন্য কমপক্ষে ১০টি পারমাণবিক চালনা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি ভারত মহাসাগরজুড়ে ভারতের কৌশলগত নাগাল সম্প্রসারণের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরছে।

রণতরীটিতে ভারত অজ্ঞাত সংখ্যক নতুন প্রজন্মের টুইন-ইঞ্জিন, ডেক-ভিত্তিক ফাইটার এবং হালকা যুদ্ধবিমান অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনাও করেছে। এগুলো সবই নৌবাহিনীর জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড তৈরি করবে।

এপ্রিল মাসে ভারত ফ্রান্সের সাথে ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের তৈরি ২৬টি রাফায়েল-মেরিন টুইন এবং সিঙ্গেল-সিট যুদ্ধবিমানের জন্য প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই যুদ্ধবিমানগুলো বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত এবং আইএনএস বিক্রমাদিত্যে মোতায়েন করা হবে।

রোডম্যাপটিতে দুটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিমান উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা সংগ্রহেরও প্রত্যাশা করা হয়েছে। এই উৎক্ষেপক মার্কিন নৌবাহিনীতেও রয়েছে। এতে ঐতিহ্যবাহী বাষ্পীয় ক্যাটাপল্টের পরিবর্তে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তি ব্যবহার করে বাহক থেকে বিমান উৎক্ষেপণ করা যায়।
 

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ম নব হ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলনের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী মোদির

কলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৬তম সম্মিলিত সেনা সম্মেলন (সিসিসি) উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেনা সম্মেলন একটি দ্বিবার্ষিক প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত শীর্ষস্তরীয় মতবিনিময়ের আসর।

অপারেশন সিঁদুরে’র পর এটিই প্রথম সম্মিলিত সেনা সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, তিন বাহিনীর প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান, প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধানও।

আরো পড়ুন:

অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প

আসামে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ৫ বাংলাদেশি ছাত্রকে বহিষ্কার

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড সদর দপ্তর কলকাতার বিজয় দুর্গে তথা ফোর্ট উইলিয়ামে আগামী তিনদিন এই সম্মিলিত সেনা সম্মেলন চলবে। 

এই সম্মেলন সেনার তিন বাহিনীর সর্বোচ্চ চিন্তাভাবনামূলক ফোরাম, যা দেশের শীর্ষ অসামরিক ও সামরিক নেতৃত্বকে ধারণাগত ও কৌশলগত স্তরে মতামত বিনিময়ের জন্য আয়োজন করা হয়েছে ৷ কলকাতার আগে সর্বশেষ সম্মিলিত সেনা সম্মলেন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২৩ সালে ভোপালে। অপারেশন সিঁদুরের প্রেক্ষাপটে, এই বছরের সম্মেলন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এবারের সম্মেলনে সংস্কার, রূপান্তর, পরিবর্তন এবং অপারেশনাল প্রস্তুতির উপর জোর দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের  বিবৃতি অনুযায়ী, ‘সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু সশস্ত্র বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, সংহতিকরণ এবং প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণে বিশেষ জোর দেওয়া। একই সঙ্গে শীর্ষস্তরের একাধিক ক্ষেত্রে অপারেশনাল প্রস্তুতির উপরও জোর দেওয়া হবে। তিনদিনের এই সম্মেলন সশস্ত্র বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হবে, যাতে ক্রমবর্ধমান জটিল ভূ-কৌশলগত পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়।’

রবিবার আসাম সফর সেরে নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশ কিছুটা পর দমদম বিমানবন্দরে নামেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা এবং উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। দলীয় কোনো কর্মসূচি না থাকলেও মোদিকে দেখতে ভিড় ছিল বিজেপি সমর্থকদের। ভিড় দেখে গাড়ি থামিয়ে হাত নেড়ে জনসংযোগ সারেন মোদি। সেখান থেকে তার ২৪ গাড়ির কনভয় পৌঁছায় রাজভবনে। সেখানেই রাত্রিবাস করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও। তিনি রাত কাটান ফোর্ট উইলিয়ামে।

চলতি বছরে এই নিয়ে চতুর্থবার পশ্চিমবঙ্গে এলেন নরেন্দ্র মোদি। সকাল ৯ টাতেই রাজভবন থেকে ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফোর্ট উইলিয়ামে ছিলেন মোদি। দেড়টার পরে কলকাতা থেকে বিহারের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।

একদিকে বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি। অন্যদিকে অস্থির চিন সীমান্ত। তার মধ্যে আবার নেপালে পালাবদল। দিনকয়েক আগে বাংলাদেশের উত্তরে চিন বিমানঘাঁটি তৈরি করতে চলেছে বলে একটি খবর ছড়ায়। ঘাঁটিটি নাকি আবার তৈরি হবে চিকেনস নেকের কাছেই। সবমিলিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিরাট এক জটিল সমীকরণ তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় কলকাতার বিজয় দুর্গে সেনা সম্মেলনের আয়োজন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কমিউনিটি ব্যাংক ও বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের মধ্যে কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর
  • হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কতটা এগিয়ে চীন
  • প্রতিবেশী দেশগুলো অস্থির, ভারত এখন কী করবে
  • কারও ওপর আক্রমণ হলে যৌথভাবে জবাব দেবে পাকিস্তান ও সৌদি আরব
  • কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলনের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী মোদির