উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট সিলেবাস ধরে পড়াশোনা করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য কৌশলী হতে হয়। কারণ, এ ক্ষেত্রে পড়ালেখাকে কোনো সিলেবাসের গণ্ডিতে ফেলা যায় না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ধরনে থাকে ভিন্নতা। ফলে সবকিছু মাথায় নিয়ে একটি পরিপূর্ণ পরিকল্পনা সাজাতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হলে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক খুবই ভালোভাবে আত্মস্থ করা জরুরি। উচ্চ মাধ্যমিকের বিষয়গুলো হলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার মূল ভিত্তি। তাই উচ্চ মাধ্যমিক বইয়ের প্রতিটি বিষয় খুব ভালোভাবে বুঝে পড়তে হবে। প্রতিবছর দেশের লাখো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসনে ভর্তি নিশ্চিত করা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় শিক্ষার মান, আবাসিক সুযোগ-সুবিধা বেশি হওয়ায় এবং খরচ অনেক কম হওয়ায় এখনও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাঙ্ক্ষিত আসনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করে থাকেন। ফলে শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। শেষ মুহূর্তে পরীক্ষায় ভালো করার অন্যতম কাজ হলো একটি সুন্দর পরিকল্পনা তৈরি করা। কী পড়বেন, কতটুকু পড়বেন, কীভাবে পড়বেন– পাঠ পরিকল্পনায় সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করুন এবং তা মেনে চলুন। বাংলাকে দুটি অংশে ভাগ করা যায়। যথা– সাহিত্য ও ব্যাকরণ। সাহিত্য অংশটি হলো একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সাহিত্যপাঠ ও সহপাঠ বই। ব্যাকরণ অংশ হলো একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত বাংলা ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এইচএসসি পরীক্ষার জন্য এ দুই বিষয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন। সাহিত্য অংশ থেকে প্রতিবছরই নৈর্ব্যক্তিক ও লিখিত প্রশ্ন থাকে। বিশেষ করে, নাটক ও উপন্যাস থেকে। তাই পাঠ্যবইগুলো আয়ত্তে রাখার বিকল্প নেই। বাংলা ব্যাকরণ অংশে কোনো নির্দিষ্ট পাঠক্রম থাকে না। নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ থেকেও সচরাচর প্রশ্ন থাকে। বাংলা ব্যাকরণ অংশে সাধারণত যেসব বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়, সেগুলো হলো– ধ্বনি, বর্ণ, উচ্চারণের স্থান, শব্দ ও বাক্যের প্রকারভেদ, প্রকৃতি-প্রত্যয়; সন্ধি, উপসর্গ, সমাস, ণত্ব-বিধান ও ষত্ব-বিধান, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, প্রত্যয়, ধ্বনি পরিবর্তন, ব্যাকরণ শুদ্ধিকরণ। সাধারণত বানান, বাক্যের গঠন, লিঙ্গ, সন্ধি ও সমাসের যথাযথ প্রয়োগের ওপর প্রশ্ন করা হয়; ব্যাকরণের নিপাতনে সিদ্ধ নিয়ম। যেমন– নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি ও সমাসের প্রয়োগ, যুক্তবর্ণের গঠন। এ ছাড়া আরও কিছু বিষয় প্রস্তুতির বিষয়ে রাখতে হবে। যেমন– বাংলা সাহিত্যিকদের জন্ম-মৃত্যুর তারিখ, সাল, স্থান, উল্লেখযোগ্য রচনা, ছদ্মনাম/উপাধি, রচনাবলি, পুরস্কারপ্রাপ্তি, সম্পাদিত পত্রপত্রিকার নাম ও ধরন, পুরস্কারপ্রাপ্ত গ্রন্থ ইত্যাদি; সাহিত্যিকদের বিখ্যাত উক্তি; মুক্তিযুদ্ধের ওপর লিখিত গ্রন্থের নাম। সাধারণ জ্ঞানের দুটি অংশ। এখানে বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ওপর প্রশ্ন থাকবে। এ অংশে ভালো করতে হলে অবশ্যই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চলতি ঘটনাবলির ওপর নজর রাখতে হবে। এ জন্য জাতীয় দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত পড়া এবং বিবিসি, টেলিভিশন, রেডিওর সংবাদ শুনতে হবে। এর বাইরেও বাংলাদেশ অংশের জন্য দেশের ভূপ্রকৃতি, আয়তন, শিক্ষা, অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি, উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও স্থপতির নাম, প্রশাসনিক কাঠামো, চলচ্চিত্র, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, খেলাধুলা, আবহাওয়া, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতি বিষয় জানতে হবে। আন্তর্জাতিক অংশের জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বিষয়ের জন্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা, স্থাপনা, স্থাপত্য, স্থপতি, নোবেল পুরস্কার, বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, রাজধানী, মুদ্রা, ভাষা, বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার যেমন অস্কার, পুলিৎজার, বুকার, ম্যাগসেসে, বিশ্বের উচ্চতম, দীর্ঘতম, ক্ষুদ্রতম, বৃহত্তম বিষয়গুলো, আন্তর্জাতিক চুক্তি, বিশ্বের নামকরা নগর, বন্দর, ব্যয়বহুল শহর ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হবে। সাধারণ জ্ঞান অংশে ভালো করতে হলে আপনাকে অবশ্যই সবসময় আপডেট থাকতে হবে। সমকালীন ঘটনা প্রবাহের দিকে নিবিড় নজর রাখতে হবে।
ইংরেজি: বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে ইংরেজির ক্ষেত্রে গ্রামার অংশে অধিক জোর দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে Parts of speech, Article, Tense, Voice, Narration, Correction, Right form of verbs, Translation, Synonyms,  Antonyms, Transformation of sentences, Joining sentence, Comprehension প্রভৃতি বিষয় ভালোভাবে পড়তে হবে। পাশাপাশি ইংরেজ কবি ও সাহিত্যিক, বিশেষ করে যাদের লেখা এইচএসসির সিলেবাসে রয়েছে তাদের জীবন ও সাহিত্যকর্ম, লেখার বিষয়, উদ্ধৃতি ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয়ও মনে রাখতে হবে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ