দেশি–বিদেশি গন্তব্যে বাড়ল বিমান টিকিটের দাম
Published: 14th, January 2025 GMT
আকাশপথে দেশি-বিদেশি গন্তব্যে উড়োজাহাজের টিকিটের দাম বাড়িয়েছে বিমান সংস্থাগুলো। ফলে যাঁরা এখন দেশি-বিদেশি গন্তব্যে নতুন করে টিকিট কিনতে যাচ্ছেন, তাঁদের বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে আকাশপথে বিমান ভ্রমণে আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। এরই মধ্যে বর্ধিত সেই শুল্ক টিকিটের দামের সঙ্গে যুক্ত করে নতুন দামে টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বিমান সংস্থাগুলো।
অভ্যন্তরীণ পথে বিমানযাত্রায় আবগারি শুল্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করেছে সরকার। আর সার্কভুক্ত যেকোনো দেশ ভ্রমণে আবগারি শুল্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশের বাইরে এশিয়ার মধ্যে যেকোনো দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক দুই হাজার থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা এবং ইউরোপ ও আমেরিকার দেশ ভ্রমণে তা এক হাজার বাড়িয়ে চার হাজার টাকা করা হয়েছে।
দেশীয় বেসরকারি কয়েকটি বিমান সংস্থা ও ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এত দিন অভ্যন্তরীণ পথে একেকটি টিকিটে সব মিলিয়ে ৯৭৫ টাকা শুল্ক-কর ছিল। সেটি বেড়ে এখন ১ হাজার ১৭৫ টাকা হয়েছে। আবার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াগামী প্রতিটি টিকিটে এত দিন সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা শুল্ক-কর ছিল; এখন তা আরও ৫০০ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ চারজনের একটি পরিবার থাইল্যান্ডে যেতে চাইলে তাঁদের আগের চেয়ে দুই হাজার টাকা বেশি শুল্ক-কর দিতে হবে। তবে যাঁরা এনবিআরের প্রজ্ঞাপন জারির আগে টিকিট বুকিং দিয়েছেন বা অগ্রিম টিকিট কেটেছেন, তাঁরা নতুন শুল্কের আওতামুক্ত থাকছেন। কোম্পানিগুলো বলছে, যাঁরা আগাম টিকিট কেটে রেখেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে নতুন শুল্ক আরোপ করা বাস্তবসম্মত নয়।
কোম্পানিগুলো যা বলছে
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পথে শুল্ক বাড়ানোর ফলে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়বে দেশীয় বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো। দেশের অভ্যন্তরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর মধ্যে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস–বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী, যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশাল—এই আটটি পথে তাদের প্রতিদিন শতাধিক ফ্লাইট চলাচল করে।
এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, অভ্যন্তরীণ পথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। তার মানে প্রায় ৪০ শতাংশ শুল্ক বেড়েছে। এটি অস্বাভাবিক একটা বিষয়।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক মো.
কামরুল ইসলাম বলেন, আকাশপথে যাতায়াত এখন আর শৌখিন সেবা নয়। এটি অনেকটা প্রয়োজনীয় সেবার মতো হয়ে গেছে। ফলে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এই শুল্ক প্রত্যাহার করা উচিত।
অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে এমন নীতি পরিবর্তন দেশের সব বেসরকারি বিমান সংস্থার জন্য একটি গভীর ক্ষত তৈরি করবে। টিকিটের ওপর প্রায় ৪০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি হয়েছেইমরান আসিফ, প্রধান নির্বাহী, এয়ার অ্যাস্ট্রাদেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠান বিদেশে, বিশেষ করে আশপাশের দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে। কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা জানান, এখন শীতের মৌসুম; পর্যটনের চাহিদা বেশি। স্বাভাবিক সময়ে শীত মৌসুমে ভারতে প্রচুর পর্যটক যায়; কিন্তু বর্তমানে দেশটিতে পর্যটন ভিসা বন্ধ থাকায় যাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এ জন্য এয়ারলাইনসগুলো ধুঁকছে। অন্যদিকে বর্তমানে ডলারের দাম আগের তুলনায় বেশি। ফলে নতুন করে শুল্ক বাড়ানোর কারণে টিকিটের দাম আরও বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন ভোক্তারা। একজনের যাত্রার ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধির পরিমাণটি খুব বেশি মনে না হলেও চার-পাঁচজন বা পরিবার নিয়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এটি অনেকের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করবে।
এয়ার অ্যাস্ট্রার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ বলেন, অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে এমন নীতি পরিবর্তন দেশের সব বেসরকারি বিমান সংস্থার জন্য একটি গভীর ক্ষত তৈরি করবে। টিকিটের ওপর প্রায় ৪০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি হয়েছে। অথচ অর্থ উপদেষ্টা এটাকে সামান্য বৃদ্ধি বলেছেন। এ ধরনের মন্তব্য ও কর বৃদ্ধির উদ্যোগে অনেকের মধ্যে এই ধারণা তৈরি হতে পারে যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে আমরা ‘ফ্রাইং প্যান থেকে জ্বলন্ত আগুনে’ পড়েছি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিগ-বির মাধ্যমে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ
এক দশক আগে বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের জন্য বিগ-বি নামে পরিচিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট গ্রহণ করেছিল জাপান। বঙ্গোপসাগরীয় শিল্প প্রবৃদ্ধির ওই উদ্যোগে রয়েছে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ প্রকল্প আর আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার বিকাশ। মে মাসের শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরে বিগ–বির মাধ্যমে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তাঁর জাপান সফরের আগে টোকিওতে ১৫ মে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাপানের আলোচনায় কোন কোন বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে জসীম উদ্দিন বাংলাদেশের এবং জাপানের জ্যেষ্ঠ উপমন্ত্রী আকাহোরি তাকেশি তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে কোন কোন বিষয়গুলো ১৫ মের আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পাবে, তা নিয়ে মতামত নেওয়া হয়। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফরসহ সচিব পর্যায়ের সফর নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিগ–বিতে সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ খাতভিত্তিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফর নিয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, টোকিওতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে। প্রথম ভাগে থাকবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়। আর দ্বিতীয় ভাগে থাকবে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি।
আঞ্চলিক বিষয়াদিতে জাপানের বিগ–বি নিয়ে আলোচনা হবে। এ সময় ঢাকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের বাস্তবতা তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে এ প্রকল্প সামনে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও বলা হবে। পরে ভারত যদি এর সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তবে তার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হবে।
বিগ–বির সঙ্গে ২০২৩ সালে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করে জাপান। কিন্তু ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে চরম টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক। এমন এক প্রেক্ষাপটে বিগ–বিকে বিশেষ করে সংযুক্তিকে বাংলাদেশের পরিমণ্ডলে নেওয়ার পরিকল্পনায় আপাতত একটা ধাক্কা এসেছে। এ নিয়ে জাপান নানাভাবে নিজেদের অস্বস্তির বিষয়টি বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বিগ–বি জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অগ্রাধিকার প্রস্তাব হওয়ায় এটিতে বিশেষ গুরুত্ব আছে টোকিওর। তাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আগ্রহী জাপান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং প্রধান উপদেষ্টার টোকিও সফরে জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিবিড় করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কাছ থেকে সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর কয়েক বছর ধরে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে জাপান।
বাংলাদেশকে ২০২৩ সালে জাপানের সরকারি নিরাপত্তা সহায়তায় (ওএসএ) যুক্ত করা হয়েছে। মূলত জাপান নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে এই কাঠামো তৈরি করেছে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করার এবং ওই দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা দিয়ে থাকে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান একটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ঋণের পরিবর্তে অনুদান দিয়ে থাকে।