পটুয়াখালীর ধানখালীতে কয়লাভিত্তিক আরএনপিএল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্ক্র্যাপ মালপত্র চুরি ও পাচারের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ৩৪ জনের নামে মামলা হয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডেপুটি ম্যানেজার (অ্যাডমিন) আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে রোববার কলাপাড়া থানায় মামলাটি করেন। তবে মামলার ঘটনাটি প্রকাশ পেয়েছে সোমবার রাতে।

মামলায় ধানখালী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি সোহেল মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন মোল্লা, ধানখালীর ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কালাম তালুকদার, ধানখালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি ফিরোজ উদ্দিনসহ ৩৪ আসামির বেশির ভাগই স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। তাদের সবার বাড়ি উপজেলার ধানখালী, লোন্দা ও গিলাতলা গ্রামে। চোরাই করা মালপত্রের মধ্যে রয়েছে– তামার তার, লোহার সামগ্রী, স্টিলের পাতসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণসামগ্রী।

এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৪ ডিসেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সীমানা প্রাচীরের ১৩ নম্বর সিকিউরিটি পোস্টে চোর চক্র ঢুকে বিপুল পরিমাণ মালপত্র নিয়ে যায়। আরএনপিএলে কর্তব্যরত সিকিউরিটি গার্ডরা বিষয়টি দেখতে পেয়ে কর্তৃপক্ষকে জানান। ফাঁড়ির পুলিশ ও আরএনপিএলের নিজস্ব সিকিউরিটি গার্ড এবং প্লান্টে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা ২৫ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে গিলাতলায় অভিযান চালান। এ সময় সেই এলাকা থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুরি হওয়া চার টনের বেশি স্ক্র্যাপ মালপত্রসহ একটি গাড়ি জব্দ করা হয় এবং উদ্ধার করা মালপত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়। 

এর পর ৯ জানুয়ারি রাতে আসামিরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ তামার তার, লোহার সামগ্রী, স্টিলের পাতসহ ৪ লাখ টাকার মালপত্র চুরি করে গিলাতলা বাজারের কাছে নিয়ে স্তূপ করেন। পরের দিন সকালে এগুলো পাচারের জন্য তিন-চারটি গাড়িতে তোলা হচ্ছিল। এ সময়  নিরাপত্তা-কর্মীরা বিষয়টি তাদের কর্তৃপক্ষকে জানালে পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যদের সহায়তায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক (সিকিউরিটি) মোহাম্মদ সায়েম উদ্দিন বাবু, এক্সিকিউটিভ (সিকিউরিটি) মো.

মাহাবুবুর রহমান, জুনিয়ার এক্সিকিউটিভ মোহাম্মদ পারভেজ ও সিকিউরিটি সুপারভাইজার সাইদুর রহমান গিয়ে আড়াই লাখ টাকা মূল্যের পাঁচ টন মালপত্র ও একটি গাড়ি উদ্ধার করেন। বাকি দেড় লাখ টাকার মালপত্র এখনও উদ্ধার হয়নি। 

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী হুমায়ুন সিকদার বলেন, ‘তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালপত্র চুরিসহ বিভিন্ন ঘটনায় ইতোমধ্যে আমরা ইউনিয়ন ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছি এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি শুনেছি, চুরির ঘটনা করা মামলায় দলের কিছু লোক আসামি হয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। বিএনপি এর দায় নেবে না।’ 

তিনি বলেন, যারা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
  
কলাপাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম জানান, মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ঘাড়ব্যথার কারণগুলো কী কী, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা জেনে রাখুন

অনেক কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

১. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস

২. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস

৩. সারভাইক্যাল রিবস

৪. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া

৫. সারভাইক্যাল ডিস্ক প্রলেপস বা হারনিয়েশন যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে

৬. মাংসপেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি

৭. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা

৮. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগ

৯. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ এবং ক্ষয়

১০. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ

১১. হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া

১২. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস

১৩. সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস

১৪. ফাইব্রোমায়ালজিয়া

১৫. সামনে ঝুঁকে বা পাশে কাত হয়ে ভারী কিছু তুলতে চেষ্টা করা

১৬. হাড়ের ইনফেকশন

১৭. ডিস্কাইটিস (ডিস্কের প্রদাহ)

১৮. পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে রাখলে ইত্যাদি।

উপসর্গ

ঘাড়ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়াতে পারে।

কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব।

বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে।

সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে আছে মনে হয়।

ঘাড়ের মুভমেন্ট করলে, ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলার পর তীব্র ব্যথা।

হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়।

ব্যথা মাথার পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার সামনে আসতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

ঘাড়ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হতে পারে—রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, ঘাড়ের এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান।

চিকিৎসা

চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে।

কনজারভেটিভ চিকিৎসা: ১. ব্যথা বা প্রদাহনাশক ওষুধ ২.ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যেমন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিকেল ইকুইপমেন্ট যেমন ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশ ভাব দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

ঘাড়ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়

১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।

২. মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না।

৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে।

৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।

৫. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।

৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) বন্ধ করা।

৭. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।

৯. কাত হয়ে শুয়ে পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না।

১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন।

১১. গরম প্যাড, গরম পানির বোতল দিয়ে গরম সেঁক দেবেন।

১২. ঘাড়ের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।

এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুনকাঁধের ব্যথা বা কাঁধ জমে যাওয়ার কারণ ও করণীয়১৭ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ