নাকানিচুবানি তিন সংস্থার দুর্ভোগের শেষ কবে
Published: 15th, January 2025 GMT
চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতামুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নগরে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারি তিন সংস্থা। খরচ হচ্ছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে তিন ভাগ, ৭৫ শতাংশের বেশি। এর পরও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মেলেনি। গত বছর বর্ষায় সাতবার ডুবেছে চট্টগ্রাম নগর।
সাত বছর পর এসে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ২৬টি প্রতিবন্ধকতার কথা বলছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। জলাবদ্ধতামুক্ত করতে হলে তারা এ সমস্যাগুলো সারানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা সমস্যার সুরাহার চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চট্টগ্রামের মেয়র। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে ‘চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক বৈঠকে বসেছে উপদেষ্টা পরিষদ। ওই বৈঠকে ৯টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে প্রকল্পগুলোর প্রতিবন্ধকতা খতিয়ে দেখতে আগামী শনিবার সরেজমিন পরিদর্শনে আসছেন চার উপদেষ্টা।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এর মধ্যে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের’ ব্যয় হবে ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্য নিয়ন্ত্রণ জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন, নিষ্কাশন ও উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
সিংহভাগ কাজ শেষ প্রকল্পগুলোর
২০১৭ সালে নেওয়া ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের’ অধীনে ৩৬টি খালের মধ্যে ১৯টি খালের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। অন্য পাঁচটি খালের কাজও শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পটির অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। একই সময়ে নেওয়া কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ১২টি স্লুইসগেটের মধ্যে ১০টির কাজ শেষ হয়েছে। সাতটি পাম্পহাউস নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ হয়েছে ৮২ শতাংশ। ২০১৯ সালে নেওয়া চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন, নিষ্কাশন ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ৪৩ শতাংশ। প্রকল্পটির আওতায় ২১টি স্লুইসগেটের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র চারটি। ১০টির কাজ চলছে। সাতটির কাজ শুরুই হয়নি। ২০১৪ সালে নেওয়া বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ। ৩ কিলোমিটার খালের মধ্যে ২ কিলোমিটার খাল খননকাজ শেষ হয়েছে।
মিলছে না সুফল
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর চার ভাগের মধ্যে তিনটি প্রকল্পের তিন ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি প্রকল্পটির কাজও প্রায় অর্ধেক শেষ হয়েছে। তবুও বর্ষায় দফায় দফায় ডুবছে নগর। জলাবদ্ধতায় নগরের ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।
এ অবস্থায় গত ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড.
উপদেষ্টা পরিষদের ৯ সিদ্ধান্ত
চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে করণীয় নির্ধারণে গত ৫ জানুয়ারি এক সভায় ছিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সভায় আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে ৯টি করণীয় নির্ধারণ করা হয়।
এগুলো হলো– চট্টগ্রাম শহরে সব ধরনের পাহাড় কাটা বন্ধ করা, চট্টগ্রাম শহরের প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা, সিডিএ প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন ১৭টি স্লুইসগেটের মধ্যে ১৫টি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের অধীনে ২১টির মধ্যে ১২টি আগামী মের মধ্যে চালু করা, যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে গঠিত কমিটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজের সমন্বয় করবে।
সিদ্ধান্ত হয় বাস্তবায়ন হয় না
২০২১ সালের অক্টোবরে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর সমন্বয়ে বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে একটি কমিটি করা হয়। কমিটি ইতোমধ্যে অন্তত এক ডজন সভা করেছে। প্রতিটি সভায় পাহাড় কাটা বন্ধ, খাল-নালায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধসহ নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তের কোনোটিই কখনও কার্যকর হয়নি।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, নগরে অবস্থিত ৬০ শতাংশ খাল, ৩০ শতাংশ নালা ও নির্মাণাধীন রেগুলেটরের মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ করছি আমরা। এর বাইরে থাকা খাল-নালাগুলো পরিষ্কার না থাকলে পানি নিষ্কাশন হয় না। আবার অন্য রেগুলেটরগুলো চালু না হলে জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। যার কারণে প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ হলেও জলাবদ্ধতা হয়।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ও মার্কেটে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য প্লাস্টিকের বিন বিতরণ শুরু করেছি। নগরবাসীকে পলিথিন, প্লাস্টিক, কর্কশিটসহ অপচনশীল দ্রব্যাদি যত্রতত্র নালা-নর্দমায় না ফেলে সেগুলো নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলার আহ্বান জানাচ্ছি। শুরুতে সচেতন করা হবে, পরে আমরা আইনি পথে হাঁটব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ক জ শ ষ হয় ছ উপদ ষ ট সমস য নগর র ন রসন
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।