এমবাপ্পের আরেকটি গোল, নাম লেখালেন ডি স্টেফানো, রোনালদোদের পাশে
Published: 20th, October 2025 GMT
নাটকীয় এক ম্যাচে হেতাফেকে ১-০ গোলে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়ালের জয়ে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এটি চলতি মৌসুমে লিগে রিয়ালের ৯ ম্যাচে ৮ম জয়। অন্য দিকে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে এ নিয়ে টানা ১১ ম্যাচে গোল করলেন এমবাপ্পে।
পেশাদার ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো এমন কীর্তি গড়েছেন এই ফরাসি তারকা। এ ছাড়া লা লিগায় প্রথম ৯ ম্যাচে এমবাপ্পে করলেন ১০ গোল। রিয়ালের ইতিহাসে গত ৭০ বছরে তিনজন ফুটবলার এই কীর্তি গড়েছিলেন। তাঁরা হলেন আলফ্রেড ডি স্টেফানো, অ্যামানসিও এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। রোনালদো অবশ্য এই কীর্তি গড়েছিলেন চারবার।
হেতাফের মাঠে গতকাল রাতে দাপুটে ফুটবল খেললেও গোলের জন্য বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে রিয়ালকে। জাবি আলোনসো দলকে অপেক্ষায় রাখা হেতাফে প্রথম ধাক্কা খায় ৭৭ মিনিটে। এ সময় ভিনিসিয়ুসকে মারাত্মকভাবে ফাউল করে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন এক মিনিট আগে বদলি নামা অ্যালান নিয়োম।
আরও পড়ুনএমবাপ্পের দশে দশ, শীর্ষে উঠেও জার্মানির অস্বস্তি ১১ অক্টোবর ২০২৫লা লিগার ইতিহাসে এর আগে মাত্র ৬ জন ফুটবলার মাঠে নামার মাত্র এক মিনিটের মধ্যে লাল কার্ড দেখেছিলেন। ১৯৮০ সালে রিয়ালের গার্সিয়া হার্নান্দেজ, ১৯৮৫ সালে সেভিয়ার হোসে লুইস, ২০০১ সালে নুমানসিয়ার মারিনি, ২০০৭ সালে রিয়ালের মেহিয়া এবং ২০২৩ সালে কাদিজের সান এমেতেরিও।
রিয়ালের দুই জয়ের নায়ক এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুস.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এমব প প
এছাড়াও পড়ুন:
সাইনবোর্ডে ‘কলেজ’, লেখাপড়া নেই
রাজধানীর খিলগাঁও চৌরাস্তা এলাকায় একটি বহুতল ভবনের গায়ে বড় করে লেখা ‘বাংলাদেশ কমার্স কলেজ’। কিন্তু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, কলেজের কোনো অস্তিত্ব নেই। যে তলায় একসময় কলেজের ক্লাস চলত, সেখানে এখন চলছে অন্য প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। অথচ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তথ্য বলছে, এ কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন, কিন্তু পাস করেননি।
গতকাল রোববার দুপুরে ওই ভবন থেকে বের হচ্ছিলেন একজন প্রবীণ মানুষ। তিনি পাশে চায়ের দোকান করেন। তিনি বলেন, ‘বছর দুয়েক আগে ভবনটিতে কলেজের কার্যক্রম ছিল। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দেখা যেত। এখন কাউকে দেখি না।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নথি অনুযায়ী, ২০০৫ সালে কলেজটি পাঠদানের অনুমতি পায় এবং ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে। গত বছর এই কলেজ থেকে চারজন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একজন পাস করেছিলেন। বোর্ডের এক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, ‘এটা কেবল খোসা, ভেতরে কিছুই নেই।’
সাইনবোর্ডে থাকা মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়, এটি বাংলাদেশ কমার্স কলেজের কোনো নম্বর নয়।
শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। তথ্য পেলে ‘কেস টু কেস’ ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।খন্দোকার এহসানুল কবির, আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানশূন্য পাস প্রতিষ্ঠান তিন গুণের বেশি বেড়েছেঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ দেশের ৯টি সাধারণ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দুই শর বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজনও পাস করেননি, যেখানে গত বছর সংখ্যাটি ছিল মাত্র ৬৫। ২০২৩ সালে ছিল ৪২টি। অর্থাৎ এক বছরে তিন গুণের বেশি বেড়েছে শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিনাজপুরে (৪৩টি), রাজশাহী (৩৫টি) ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে (৩৪টি) বেশি। বাকি সাধারণ বোর্ডগুলোতে এমন প্রতিষ্ঠান ৪ থেকে ২০টির মধ্যে। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৩৭টি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২২টি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেননি। এক বছরের ব্যবধানে শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তিন গুণের বেশি বৃদ্ধি শিক্ষাব্যবস্থার করুণ চিত্রই তুলে ধরেছে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলের এবং বেসরকারি ও নন-এমপিও (সরকার থেকে অনুদান পায় না) এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাতে গোনা, ক্লাস অনিয়মিত, শিক্ষকসংকট চরম, অবকাঠামোও ভালো নয়।
আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দোকার এহসানুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। তথ্য পেলে ‘কেস টু কেস’ ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন২০২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই অকৃতকার্য১৬ অক্টোবর ২০২৫যেনতেন কলেজময়মনসিংহের ত্রিশালে সিটি রয়েল কলেজ থেকে এ বছর ১৩ জন পরীক্ষা দিয়ে কেউ পাস করতে পারেননি। গতকাল বেলা ১১টার দিকে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের ভেতরে চলছে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পাঠদান। প্রতিষ্ঠানটিতে টিনশেডের একটি স্থাপনা, দুটি আধা পাকা ভবন এবং একটি একতলাবিশিষ্ট ভবন। অধ্যক্ষের কক্ষে তালা। একটি একতলা ভবনে লেখা সিটি রয়েল কলেজ ডিজিটাল ল্যাব, সেটিও তালাবদ্ধ। পাশেই আইসিটি ল্যাবের দরজা খোলা থাকলেও কিছু টেবিলে ধুলার আস্তরণ পড়েছে। সেখানে কলেজের কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা গেল না। বাইরের ফটকে সিটি রয়েল কলেজ লেখা থাকলেও ভেতরে কিন্ডারগার্টেনের কার্যক্রম চলতে দেখা গেল। কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক কবির হোসাইন। তিনি আবার সিটি রয়েল কলেজের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
কলেজে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম হয় বলে জানালেন কবির হোসাইন। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় এমন অবস্থা বলেও তাঁর মত।
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে চারজন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। গতকাল সকালে ওই কলেজে গিয়ে জানা যায়, ১৯৪৯ সালে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক শাখা দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ২০১৩ সালে কলেজ শাখা চালু হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কাসেম বলেন, প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখা ও শিক্ষকেরা এমপিওভুক্ত নন। ফলে বেতন না হওয়ায় শিক্ষকেরা কলেজে আসেন না। শিক্ষার্থীও না আসায় কলেজে পাঠদানও হয় না।
ভোলা সদর উপজেলার মেদুয়া কলেজ ও ভাষাশহীদ কলেজে এইচএসসিতে কেউ পাস করেননি। ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকায় ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মেদুয়া কলেজ। একটি টিনশেড ভবনে চারটি কক্ষ নিয়ে কলেজটি। চলতি বছরে ৮৭ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন। ১৮ জন শিক্ষকের স্থলে ৭ জন শিক্ষককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল বলেন, তাঁরা প্রথমবার ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি করেছিলেন। যাঁদের কেউ কেউ চাকরি করেন, কেউ ছিলেন সংসারী।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ময়নাল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেননি। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ১৮ জন শিক্ষার্থী মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।
করণীয় কীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের উচিত শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক বিষয়গুলো যাচাই করা। এখানে শিক্ষকেরা একাডেমিক বিষয়গুলো দেখবেন আর শিক্ষা বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা প্রশাসনিক বিষয়গুলো দেখে প্রতিবেদন দেবেন। এতে যদি দেখা যায় আঞ্চলিকতার প্রয়োজনে কোথাও কোথাও কলেজ বা সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজন (যেমন চর এলাকা), তাহলে সরকারের উচিত হবে সেগুলোকে প্রণোদনা দিয়ে ভালোভাবে চলতে সহায়তা করা। আর যেগুলোর আঞ্চলিকতার বিবেচনায় প্রয়োজন নেই, সেগুলো পার্শ্ববর্তী অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত করা যেতে পারে।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ, ভোলা, বিরামপুর, দিনাজপুর ও মির্জাপুর, টাঙ্গাইল]