ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে চাঁদাবাজির সময় দুই পুলিশ সদস্যকে হাতেনাতে আটক করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। 

সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হলেন- ফেনী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শুক্কুর এবং কনস্টেবল জাহিদ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রবিবার রাত ২টার দিকে শহরের ট্রাংক রোডে দায়িত্বরত অবস্থায় পুলিশ উপ-পরিদর্শক শুক্কুর ও কনস্টেবল জাহিদ ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থী আজিজুর রহমান রিজভী, সৌরভ হোসেন ও ইমরান হোসেন তাদের হাতেনাতে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা সিএনজি অটোরিকশার গ্যাসের টাকা জোগাতে চালকের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করছেন বলে স্বীকার করেন। 

আরো পড়ুন:

কুয়েটের ৫ শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান-সচিব লাঞ্ছিত, ২ কর্মকর্তা বরখাস্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ফেনীর সন্তান আজিজুর রহমান রিজভী বলেন, “বাঁশ বোঝাই একটি ট্রাক থেকে এক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক কিছু নিচ্ছিলেন দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তখন চালককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে পাশে থাকা কনস্টেবল জাহিদ বলেন, গরিব মানুষ, ১০০-২০০ টাকা নিলে সমস্যা কি? তার এই মন্তব্যে উপস্থিত সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।”

তিনি আরো বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক জানান, এসআই শুক্কুর ও কনস্টেবল জাহিদ তাকে গ্যাস বিল বাবদ ২০০ টাকা নিতে বলেছেন। ঘটনাটি তাৎক্ষণিক ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছি।” 

পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, “এ ঘটনায় জড়িত দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে পুলিশ লাইন্সে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।”

ঢাকা/সাহাব/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বরখ স ত বরখ স ত র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি

রাজশাহীতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রুজুর আগে এজাহার ফাঁসের ঘটনায় এবার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) বদলি করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছাত্রদলের এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা চলছে।

নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে বদলি হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম এস এম রকিবুল ইসলাম। চাঁদাবাজির মামলার এজাহার থানায় রেকর্ড হওয়ার আগেই তিনি সেটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক ওরফে লিমনের কাছে। এমদাদুল হক রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব। ২৩ জুলাই রাতে আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এমদাদুল হকসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এজাহার ফাঁসের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সোমবার এসআই রকিবুলকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

এসআই রকিবুলের সঙ্গে সেই রাতে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করে দেন এমদাদুল হক নিজেই। হোয়াটসঅ্যাপের ওই কথোপকথন ভিডিও করে রেখেছিলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, এমদাদুল হক সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন। এসআই রকিবুল তাঁর উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘মামলা রেকর্ড হচ্ছে, হচ্ছে...রেকর্ডটা করতে দে।’ এমদাদুল জানতে চান, ‘আচ্ছা, ওর (মোস্তাফিজুর রহমানের) মামলাডা হলো, কে কে ভাই বলেন তো একটু। বলা যাবে?’ এসআই বলেন, ‘তুই ফোন দিছিস তোর পরে আমি গেছি। যায়ে এজাহার নিসি, তোরে দিসি। আমি জানি? কমিশনার অফিস থেকে এজাহার লিখিসে।’ এমদাদুল প্রশ্ন করেন, ‘ওখানেই এজাহার লিখেছে? কমিশনার অফিসে?’ এসআই বলেন, ‘হ্যাঁ, ওখান থাইকা অফিসে থেকে এজাহার পাঠায়ে দিসে। অপারেটর তাই কলো যে স্যার, পেনড্রাইভে করে এজাহার পাঠায় দিসে ফোর্স দিয়ে।’

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এমদাদুল বলেন, ‘ও, কমিশনার নিজেই লিখেছে?’ এসআই বলেন, ‘তা জানি না। সে (পুলিশ কমিশনার) তো আর নিজে লেখে না। ওই অফিস (আরএমপি সদর দপ্তর) থেকে পাঠায়ছে। আমি কাজ করতেছি, ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি। রাখো।’

পরে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি ও বাদীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। সেখানে মাইকে বাজিয়ে শোনানো হয় এসআই রকিবুল ও এমদাদুলের এই কল রেকর্ড।

এরপর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে পুলিশ। বিষয়টি বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনারকে তদন্ত করতে বলা হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসআই রকিবুল ইসলামকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গতকাল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, ‘রকিবুল ইসলামের গত তিন মাসের চাকরির পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় তাকে থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই কল রেকর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। আর কল রেকর্ডে সে যা বলেছে, তার ব্যাপারে অবশ্য ডিপার্টমেন্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’

পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে কোনো মামলার এজাহার পাঠানোর প্রসঙ্গে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনো হয় না। মামলার বাদী থানায় এসে লিখিত এজাহার ওসির কাছে জমা দেন অথবা লিখতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখে তা বাদীকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি তাতে সায় দিলে টিপসই নেওয়া হয়।’ কমিশনার কার্যালয় থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা পাঠানো হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনোই সম্ভব নয়। রাতে কমিশনার অফিসে কেউ থাকে না। তা ছাড়া আমি রেকর্ডটি শুনেছি। বলেছে, কমিশনার অফিস থেকে। এখন কমিশনার তো আরও আছে। সেটা ঠিক নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনে এসআইদের প্রতি ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান
  • রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি