ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিরলেন রূপকথার মতো
Published: 21st, January 2025 GMT
একের পর এক বিতর্ক, মামলায় দোষী সাব্যস্ত, দু’বার হত্যাচেষ্টাসহ অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় দুপুরে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটলে এ শপথ অনুষ্ঠান হয়। শপথ গ্রহণের পর দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প জানান, তাঁর লক্ষ্য শান্তি স্থাপন ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা। এ সময় তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে জো বাইডেন, বিল ক্লিনটনসহ কক্ষে থাকা সবাই দাঁড়িয়ে ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানান।
ভাষণের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকে সোনালি যুগে প্রবেশ করল। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে আমাদের দেশ উন্নতির পথে যাত্রা করবে; বিশ্বব্যাপী আবারও সম্মানিত হবে। বিশ্বের প্রতিটি দেশের ঈর্ষার কারণ হবো আমরা। আর কখনও জাতি হিসেবে আমরা নিজেদের প্রতারণার শিকার হতে দেবো না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হবে এমন একটি দেশ গঠন, যারা গর্বিত, সমৃদ্ধ ও স্বাধীন। যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত আগের চেয়ে আরও মহান, শক্তিশালী ও অনন্য হয়ে উঠবে।’
অভিষেকের আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বড় ভূমিকা রেখে বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন ট্রাম্প। আবার দেশের অভ্যন্তরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়ে সমালোচিতও হচ্ছেন। সব মিলিয়ে সাড়া জাগিয়েই দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরলেন ট্রাম্প।
প্রথম মেয়াদে দু’বার অভিশংসনের মুখে পড়েন এ রিপাবলিকান নেতা। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে যে হামলা হয়, তাতে তাঁর ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে নির্বাচিত হওয়া মার্কিন ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে করা বেশ কিছু মামলা এখনও বিচারাধীন। সব মিলিয়ে ট্রাম্প এভাবে ফিরবেন– এমনটা অনেকেই হয়তো ভাবেননি। এ প্রত্যাবর্তন রূপকথার মতোই।
প্রথা অনুযায়ী ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম লনে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান হলেও তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৬ ডিগ্রি নিচে থাকায় এবার তা ছাদের নিচে হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। রীতি অনুযায়ী হবু প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিনি চা পান করেন। এ সময় জিল বাইডেনও উপস্থিত ছিলেন। শপথের আগে ট্রাম্প ও জো বাইডেন একসঙ্গে একটি লিমুজিনে চড়ে হোয়াইট হাউস থেকে ক্যাপিটল হিলে পৌঁছান। দুপুর ১২টায় ক্যাপিটল রোটুন্ডায় অনুষ্ঠানে শপথ নেন ট্রাম্প। এর পর তিনি উদ্বোধনী ভাষণ দেন।
শুরুতে সাবেক প্রেসিডেন্টদের ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটন, জো বাইডেন, কমলা হ্যারিসসহ অনেকে। ছিলেন ফার্স্ট লেডিরাও। ট্রাম্পের সন্তান ইভানকা ট্রাম্প, ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, টিফানি ট্রাম্প, এরিক ট্রাম্প ও ব্যারন ট্রাম্প অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের ৯ বিচারপতি।
ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার সদস্যরাও শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের প্রধান হিসেবে রবার্ট এফ কেনেডি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনোনীত প্রধান ক্রিস্টি নোম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে মনোনীত মার্কো রুবিওসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
শপথ অনুষ্ঠান যখন চলছিল, তখন হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসকে ট্রাম্পের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল। সেখানে ন্যান্সি রিগানের ডিজাইন করা একটি কার্পেট ফিরিয়ে আনা হয়। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে এটি ব্যবহার করেছিলেন।
অভিষেক ভাষণে মামলা ও হত্যাচেষ্টা নিয়েও কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘গত আট বছরে আমাকে যেভাবে পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, এ দেশের ২৫০ বছরের ইতিহাসে আর কোনো প্রেসিডেন্টকে তা করা হয়নি। এ সময়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি।’ ভাষণে তিনি ‘গালফ অব মেক্সিকো’কে ‘গালফ অব আমেরিকা’ ঘোষণা করেন।
ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে অভিবাসন ও সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে কথা বলেন। তিনি মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেন। তাঁর বক্তব্যের মাঝে উপস্থিত অতিথিরা বারবার উঠে করতালি দিচ্ছিলেন। তবে বাইডেন, কমলা, ক্লিনটন ও হিলারিকে অনড় দেখা যায়। তারা কেউ দাঁড়াননি। কিন্তু ট্রাম্প যখন বললেন, বিশ্বব্যাপী তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ঐক্য স্থাপন করবেন, তখন তারাও দাঁড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন, করতালি দিয়েছেন।
অভিষেকের দিনই বেশ কিছু পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। আগের দিন রোববার তিনি বিজয় সমাবেশে এসব পরিবর্তনের বিষয়ে বলেন। ট্রাম্প জানান, শপথ নেওয়ার পরপরই তিনি বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে সই করবেন। এসব আদেশ হবে অভিবাসন, প্রত্যাবাসন ও ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার সম্পর্কিত। সূত্র জানায়, বৈধতার নথি না থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অভিযান পরিচালনার আদেশ দিতে পারেন। এর আগে নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প জানান, অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে তিনি প্রয়োজনে সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগাবেন। মেয়াদের শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করে জো বাইডেন প্রশাসন। ট্রাম্প জানান, তিনি এটি ফিরিয়ে আনবেন। সে অনুযায়ী গতকাল থেকে টিকটক চালু হয়েছে। এদিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেডি ভেন্সিও শপথ নিয়েছেন।
ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে উপস্থিত হন বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান। ছিলেন ব্যবসায়ীসহ বিশিষ্টজন। তাদের মধ্যে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলেই, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি উপস্থিত ছিলেন। রয়টার্স জানায়, আমন্ত্রণ পেলেও থাকেননি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যান ঝেঙ উপস্থিত ছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে দেশটির শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি ও তাঁর স্ত্রী নিতা আম্বানি ছিলেন। আমন্ত্রণ পেলেও পাসপোর্ট জটিলতায় থাকতে পারেননি ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জায়ার বলসোনারো। ধনকুবের ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জাকারবার্গ অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপস থ ত ছ ল ন শপথ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মবকে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে একে উসকে দেওয়া হয়েছে
আমাদের সমাজে মব সহিংসতা (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা) কেন ঘটছে? অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে এ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আমাকে। গবেষণা পর্যালোচনায় দেখা যায়, আমাদের ইতিহাসে আগেও মব সহিংসতার ঘটনাগুলো ছিল। তবে এখন এটা চরম আকার ধারণ করেছে। নানা আকারে হচ্ছে। কারণগুলো বিস্তৃত। সাধারণভাবে আপনি-আমিও কোনো অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতে পারি। কোনো ব্যক্তি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত দেখলে সোচ্চার হতে পারি। ওই ব্যক্তিদের পুলিশের হাতে আমরা তুলে দিতে পারি। অপরাধ প্রমাণিত হলে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করবে, পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সাধারণ জনগণ হিসেবে পুলিশে সোপর্দ করার দায়িত্ব পালন করা যেতে পারে। তার মানে এই নয় যে যাকে অপরাধী মনে করা হচ্ছে, তাকে গণপিটুনি দেওয়া যাবে, হেনস্তা করা যাবে, নির্যাতন করা যাবে। অথচ এই জিনিসটাই করতে দেখা যাচ্ছে। আপনি একটা মানুষকে গণপিটুনি দিতে পারেন না। আর এটা করতে গিয়ে বিভিন্ন আইনি অধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধ প্রমাণ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে অপরাধী বা আসামিও বলা যাবে না। আমাদের সংবিধান, ফৌজদারি আইন, দণ্ডবিধি—কোনো আইনে আপনাকে মব সৃষ্টি করে কারও বিচার করার অধিকার দেওয়া নেই। মবের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায় না। বরং সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়, বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। যতগুলো মব সৃষ্টি করা হয়েছে, ততবার বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এটা কোনো নাগরিকের কাম্য নয়। এটা একধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ির সামনে বসে মব তৈরি করতে দেখা গেছে। বাসার ভেতরে গিয়ে মব তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন অফিসে হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে দেখেছি। সবার আগে স্কুল-কলেজে শুরু হয়েছিল। প্রধান শিক্ষক বা জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বা প্রভাবশালী কাউকে হেনস্তা করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
তখন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছিল, এটা মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তাঁরা মনে করেছেন, এটা মব না, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এভাবে মবের ঘটনাকে অস্বীকার করে মবকে আরও উসকে দেওয়া হয়েছে। মবের মাধ্যমে মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে। মানুষ ভাবছে, বিচারব্যবস্থা খুবই দুর্বল। আমি ছেড়ে দিলে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ওই ব্যক্তি (যাকে অপরাধী ভাবা হচ্ছে) বের হয়ে যাবে। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, শাস্তি হবে না। যেটা করার আমাদেরই করতে হবে। আমাদেরই বিচার করতে হবে। মানুষ মনে করছে, বৈষম্য হচ্ছে। মানসিক হতাশা থেকে মানুষ রাস্তায় নামছে। মবের ঘটনার মধ্য দিয়ে তার অবস্থান ও মানসিক হতাশা প্রকাশ করতে চায়। মবের কোনো ঘটনার বিচার হতে দেখা যাচ্ছে না। কোনোটার বিচার দৃশ্যমান না। সে জন্য আরও বেশি ঘটনা ঘটছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও ভঙ্গুর দশায়।
মব সহিংসতার কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনেকগুলো রাজনৈতিকভাবে পরিকল্পিত। সেগুলোকে স্বাভাবিকীকরণের চেষ্টা করা হয়েছে। বাসায় ঢুকে ডাকাতি করা হয়েছে। দোকান লুটপাট করা হয়েছে। পুলিশের ভূমিকাও ছিল নিষ্ক্রিয় পর্যায়ে। পুলিশ নিজেও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। দু–একটা ঘটনায় পুলিশ নিজেও মবের শিকার হয়েছে। একটি প্রতিবেদনে দেখেছিলাম, ৪৭৭ জন পুলিশ মবের শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিক দলে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরও কার্যকর ভূমিকা রাখা দরকার মব সহিংসতার বিরুদ্ধে। অনেক সময় কোনো অপরাধের অভিযোগে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে এলে মব সৃষ্টি করা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। কেউ যখন দেখেন অপরাধ করলেও তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে, তখন ওই ব্যক্তি অপরাধ করতে আর ভয় পান না। শাস্তির ভয় থাকে না বলে অপরাধ করতে থাকেন।
আরও পড়ুন‘পানিও দিতে দেয় নাই’, মব তৈরি করে হত্যায় আসামি গ্রেপ্তার মাত্র ১.২৭%১১ ঘণ্টা আগেমব সহিংসতা বন্ধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও নাগরিকদের উদ্যোগ নিতে হবে। মব সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারকে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে। মব সহিংসতার ঘটনাগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মবের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে সরকার নির্দেশনা দিলে এবং সেই নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রচারের ব্যবস্থা নিলে মব সহিংসতা কমবে।
রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের আরও সচেতন হতে হবে। তাঁদের কর্মকাণ্ড মানুষ দেখছে। সামনে নির্বাচন। সব দলকে সাধারণ মানুষ পর্যবেক্ষণ করছে। কে কী ধরনের আচরণ করছেন, তা দেখা হচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের মব সহিংসতার মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়ানো উচিত নয়। কোনো বড় রাজনৈতিক দল যদি ঘোষণা দেয় যে আজ থেকে তারা মবের সঙ্গে থাকবে না। তাহলে তৃণমূলের একজন কর্মী তাঁর পদ হারানোর ভয়ে ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মব সহিংসতায় জড়ানোর আগে দুবার চিন্তা করবেন।
আরও পড়ুনগাইবান্ধায় চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা০২ নভেম্বর ২০২৫বিচারপ্রক্রিয়ার ত্রুটি দূর করতে হবে। থিওরি (তত্ত্ব) বলে, মানুষ যখন দেখে সে কোনোভাবে সমাজে তার ক্ষমতার চর্চা করতে পারছে না। পাশাপাশি দেখে যে একজন অপরাধী দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো সাজার সম্মুখীন হচ্ছে না। তখন মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিচারে গলদ থেকে গেলে মব সহিংসতা ঠেকানো যাবে না।
গণমাধ্যম মব সহিংসতার বিরুদ্ধে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। গণমাধ্যম মব সহিংসতার নেতিবাচক প্রভাব সহজভাবে বিশ্লেষণ করে মানুষকে বোঝাতে পারে। বিষয়গুলোকে আলোচনায় আনতে হবে। সহজভাবে বোঝালে মানুষ তা গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুনরূপলাল-প্রদীপকে হত্যায় অংশ নেয় যারা, কী বলছে পরিবার১৯ আগস্ট ২০২৫আমি নারী হিসেবে বলব, ধর্ষক আমার কাছে সবচেয়ে বড় অপরাধী। তারপরও বলব, ভুক্তভোগীর মতো ধর্ষকেরও আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। জনগণকে মব সহিংসতাবিরোধী অবস্থানে আসতে হবে। যেকোনো কিছু হলে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে যেন মব সহিংসতা করা না হয়। সব বিষয়ে জেনে–বুঝে সুনাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে সমাজে মব সহিংসতা ঘটবে না।
শাহারিয়া আফরিন,
সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়