সুনামগঞ্জে খেলার মাঠে মেলার আয়োজন, স্থানীয়দের ক্ষোভ
Published: 21st, January 2025 GMT
সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়াম মাঠে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলার আয়োজন চলছে। এতে স্থানীয় শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যাঘত ঘটছে।
স্থানীয় খেলোয়াড়দের অভিযোগ, জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও প্রশাসনের সহযোগিতায় ষোলঘর স্টেডিয়াম মাঠে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার মেলা হয়েছে। মেলার পর যথাসময়ের মধ্যে মাঠ খেলার জন্য প্রস্তুত করা হয়নি। খেলার উপযোগী হতে কয়েক মাস সময় লেগে গেছে।
চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি থেকে এক মাসব্যাপী এ মেলা শুরুর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত উদ্বোধন হয়নি। এতে প্রায় এক মাস ধরে মেলার নামে খেলার মাঠ দখলে রয়েছে।
গত ২০ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে ‘ষোলঘর খেলার মাঠে’ মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলার জন্য খুঁটি গাড়া হয়। এর প্রতিবাদে পরের দিন স্থানীয়রা মানববন্ধন করে। তারা মেলা অন্য স্থানে করার দাবি জানান। ২২ ডিসেম্বর মাঠ খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া ও মেলার অনুমতি না দিতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপির দেওয়া হয়। কিন্তু পরের দিন সুনামগঞ্জ শিল্প-পণ্য বাণিজ্যমেলার আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তিপ্রস্তরের উদ্বোধন করা হয়।
ষোলঘর মাঠের খেলোয়াড় মনোয়ার রফি আফিন্দী বলেন, সুস্থ বিনোদন চর্চার জন্য, শরীর চর্চার জন্য লোকজন এ মাঠে আসে। এ মাঠকে ঘিরে প্রতিটি বছর শীতকাল এলে যে অপতৎপরতা চলে সেটা দুঃখজনক। মেলার পর দেখা যাবে মাঠ খেলার জন্য প্রস্তুত করতে কয়েক মাস লেগে যাচ্ছে। এরপরও মাঠের মধ্যে পেরেক, ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো, বালি, পাথর, রড ইত্যাদি পড়ে থাকে। এতে খেলোয়াড়রা আহত হয়।
ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মুশারফ হোসেন বলেন, ষোলঘর খেলার মাঠের পাশে চারটি মসজিদ আছে। মসজিদের পাশে ৩ থেকে ৪টা মাদ্রাসা রয়েছে। এটি আবাসিক এলাকা। এটি এখানে একমাত্র খেলার মাঠ। যেখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করে। এ মাঠে খেলা বন্ধ করে মেলা অনুষ্ঠান তিনি মানতে পারেন না।
মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, মো.
তিনি আরো বলেন, ‘‘শহরের পশ্চিম দিকে অনেক খালি জায়গা পরে আছে, সেখানে মেলা করা যেতে পারে। কারো কোনো সমস্যা হবে না।’’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘‘দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাঁচিয়ে রাখা লাগবে। দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করা লাগবে। মানুষের আয়ের একটা পথ করে দেওয়ার জন্য এই মেলা করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, শব্দদূষণ ঘটলে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী বলেন, যদি কোনো খেলার মাঠে বা কিশোর-যুবকদের বিনোদনের স্থানে মেলার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে মেলা শেষে মাঠের পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। এটার তাদের দায়িত্ব এবং সেটাই করতে হবে।
ঢাকা/মনোয়ার/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন মগঞ জ ল র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।