রেল মন্ত্রণালয়ের আহ্বান এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকেও কর্মবিরতি প্রত্যাহারে রাজি হননি  রানিং স্টাফরা। সোমবার রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতিতে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। এতে তীব্র ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

১০৬টি আন্তঃনগর ট্রেনে ৭৫ হাজারের বেশি আসন রয়েছে। অধিকাংশ টিকিট আগাম বিক্রি হওয়ায়, ট্রেন না চললে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ হবে। লোকাল, কমিউটার, মেইল ট্রেনসহ দিনে রেলে তিন লাখ যাত্রী ভ্রমণ করেন। রেল মন্ত্রণালয় সোমবার বিজ্ঞপ্তিতে, যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানালেও কাজ হয়নি। 

রানিং স্টাফরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজে ফিরবেন না। লোকো মাস্টার (চালক), গার্ড, টিটি এবং অ্যাটেন্ডেন্টসদের রানিং স্টাফ বলা হয়। দিনে ১০০ মাইলের বেশি ট্রেন চালালে তারা একদিনের বেতনের সমান ভাতা পান, এর ৭৫ শতাংশ পেনশনে যোগ হয়।

২০২১ সালের ৪ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মতামত দেয়, ভাতা পেনশনে যোগ বেআইনি। যদিও রানিং স্টাফরা ১৮৬০ সাল থেকে এ সুবিধা পাচ্ছেন। তারা আন্দোলনে নামার পর ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট সিদ্ধান্ত হয়, দুই দিনের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় মতামত পাল্টাবে। 

তবে তা হয়নি জানিয়ে রেলওয়ে রানিং স্টাফ এবং কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো.

মুজিবুর রহমান সমকালকে বলেছেন, নতুন যোগ দেওয়া চালকদের মাইলেজ ভাতাও নেই। ৩১ অক্টোবর রেল সচিবের সঙ্গে বৈঠকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল ৩০ দিনের মধ্যে সমাধান হবে। তা না হওয়ায় ১ ডিসেম্বর থেকে দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করা বন্ধ করেন রানিং স্টাফরা। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে দুদিন পর আবার দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। ৩১ ডিসেম্বর বৈঠকে রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম ১০-১২ দিনের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। রানিং স্টাফরা ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন। এখন আর কিছু করার নেই। 

সোমবার কমলাপুরে গিয়ে রানিং স্টাফদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নাজমুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সমস্যার সমাধান অর্থ মন্ত্রণালয়ের হাতে। রেল সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে, যাতে আনুতোষিক পেনশনে যোগ হয়। কিন্তু রানিং স্টাফরা এ সুবিধা পুনর্বহালের আগে কাজে ফিরতে রাজি হয়নি।

মুজিবুর রহমান বলেছেন, রেল যদি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতে না পারে তাহলে উপদেষ্টা পদত্যাগ করুক। একাধিক রানিং স্টাফ সমকালকে বলেছেন, নিয়মানুযায়ী আট ঘণ্টা ট্রেন চালানোর পর আট ঘণ্টা পূর্ণ বিশ্রাম পাবেন কর্মীরা। কিন্তু জনবল সংকটে ১০-১২ ঘণ্টা ট্রেন পরিচালনার পর, তিন চার ঘণ্টা বিরতিতে আবার কাজ করতে হয়। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গুলিতে আহত ব্যবসায়ীর মৃত্যু, ছুরিকাঘাতে যুবক খুন 

রাজধানীর বাড্ডায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন (৪০) মারা গেছেন। গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এদিন শাহবাগে ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত এবং নীলক্ষেত এলাকার একটি হোস্টেল থেকে এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। 

বাড্ডায় নিহত আনোয়ারের গ্রামের বাড়ি বরিশালের হিজলা উপজেলায়। তিনি পরিবারের সঙ্গে বাড্ডার আনন্দনগর এলাকায় থাকতেন। স্বজনের অভিযোগ, গত ৮ মে রাত ১১টার দিকে বাড্ডার ভূঁইয়াবাড়ি টেকপাড়ায় শুটার সালাউদ্দিন, নুরা পাগলা, মাহিন, নয়ন, ইউসুফসহ কয়েকজন আনোয়ারকে মারধর করেন এবং পেটে গুলি করেন। 

বাড্ডা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গুলির ঘটনার পর আনোয়ারের পরিবারকে মামলা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা মামলা করেননি। গতকাল মারা যাওয়ার পর হত্যা মামলা করা হয়েছে। 

এদিকে, শাহবাগে ছুরিকাঘাতে মো. মোবারক (১৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে শাহবাগ শিশুপার্কের সামনে ফুট ওভারব্রিজের নিচে এই ঘটনা ঘটে। মোবারক শাহবাগ মেট্রো স্টেশনের নিচে থাকতেন। 

নিহতের চাচাতো ভাই রবিউল জানান, মোবারক শাহবাগ এলাকার এক মাদক কারবারি নবীর কাছ থেকে মাদক নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করত। সপ্তাহখানেক আগে তার কাছ থেকে মোবারক বাকিতে ৪ হাজার টাকার মাদক নিয়েছিল। নবী গতকাল বিকেলে রাতুল, রাজুসহ কয়েকজনকে মোবারকের কাছে টাকা আনতে পাঠায়। শিশুপার্ক ওভারব্রিজের নিচে মোবারকের কাছে টাকা চাইলে সে দিতে পারবে না বলে জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাজু ও রাতুল মোবারককে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে মোবারককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

অন্যদিকে, নীলক্ষেত এলাকার একটি নারী হোস্টেল থেকে গতকাল দুপুরে রিয়া আক্তার শান্তা (৩০) নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শান্তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল সদরের পলাশপুরে। তিনি অগ্রণী ব্যাংকে চাকরি করতেন। 

ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার তারিক লতিফ বলেন, দুপুর ১টার দিকে নীলক্ষেত নারী কর্মজীবী হোস্টেলে পুরাতন বিল্ডিং ৩০৭ নম্বর কক্ষ থেকে সিলিংফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় শান্তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ