রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা অস্ত্র আইনের মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু হয়েছে। একই সাথে জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার আদালত গত ১৬ জানুয়ারি এ আদেশ দেন। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী শাহাদাত আলী এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘‘অস্ত্র আইনের মামলায় গত ১৬ জানুয়ারি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন আদালত। তিনি জামিনে ছিলেন। তবে ওইদিন আদালতে হাজির হননি। আদালত জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে।’’

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তাকে নিয়ে দুপুর দেড়টার দিকে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ভেতর থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, পিস্তল ও বিরল প্রজাতির বন্য প্রাণীর চামড়া উদ্ধার করা হয়। বন্য প্রাণীর চামড়া রাখার দায়ে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই দিনই রাত পৌনে ৯টার দিকে সম্রাটকে কারাগারে নেওয়া হয়।

৭ অক্টোবর বিকেলে র‌্যাব-১ এর ডিএডি আব্দুল খালেক বাদী হয়ে রমনা থানায় অস্ত্র ও মাদক মামলা করেন। ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর অস্ত্র আইনের মামলায় সম্রাটের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১ এর উপপরিদর্শক শেখর চন্দ্র মল্লিক। 

ঢাকা/মামুন/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা দিচ্ছেন না সোয়া ৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী

আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী গতবারের চেয়ে ৮১ হাজার ৮৮২ জন কমেছে। তিন বছরের মধ্যে এবারই পরীক্ষার্থী সবচেয়ে কম। আরও আশঙ্কার বিষয়, দুই বছর আগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির পর রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করেও সোয়া চার লাখের বেশি শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষা দিচ্ছেন না। শতাংশের হিসাবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এই হার বেশি। আর সংখ্যায় তা এইচএসসিতে বেশি।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, একসঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা না দেওয়াটা উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দোকার এহসানুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, এমনিতেই দেখা যায় পর্যায়ক্রমে ওপরের শ্রেণিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়ে। এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে এই ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ হলো দারিদ্র্য এবং শিক্ষার্থীদের বিয়ে হয়ে যাওয়া। এসএসসি পাসের পর অনেক শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এটাও ঝরে পড়ার আরেকটি বড় কারণ। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের ওপর একটি জরিপ করতে গিয়ে তাঁরা এ রকম তথ্য পেয়েছেন। এখন উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও প্রকৃত কারণ জানার জন্য এ রকম একটি জরিপ করা হবে।

২৬ জুন শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন। এর মধ্যে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি। গতবারের তুলনায় এ বছর এইচএসসিতে প্রায় ৭৩ হাজার পরীক্ষার্থী কমেছে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন আলিমে পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় দুই হাজার। আলিমে এবার পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজারের বেশি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। কমেছে সাত হাজারের মতো।

এইচএসসি পর্যায়ে পড়াশোনা নানা কারণে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে, যেটা অনেক অভিভাবকের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থী কর্মে প্রবেশ করছে, অনেকেই কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যাচ্ছে। বিয়েও আরেকটি বড় কারণ। এস এম হাফিজুর রহমান, অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সোয়া ৪ লাখের বেশি পরীক্ষা দিচ্ছেন না

আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসা-কারিগরিসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধন করেছিলেন ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৯ জন। তাঁদের মধ্যে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন ১০ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। অবশ্য নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অনিয়মিত শিক্ষার্থী মিলিয়ে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী আরও বেশি।

শিক্ষা বোর্ড সূত্রমতে, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের আওতায় একাদশ শ্রেণিতে (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬৭ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮

লাখ ৭৬ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন। নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ লাখ ২০ হাজারের মতো (প্রায় ২৭

শতাংশ) পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেননি। এ রকম শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে, ৭৫ হাজারের বেশি। এই বোর্ডে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর নিবন্ধন করেছিলেন সোয়া তিন লাখের মতো শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন আড়াই লাখের মতো শিক্ষার্থী।

একই শিক্ষাবর্ষে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় আলিম প্রথম বর্ষে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭৫৯ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৭৯ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছেন। নিবন্ধন করা প্রায় ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেননি।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় একাদশ শ্রেণিতে (ভোকেশনালে) প্রায় ১ লাখ ৫৯ হাজার শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৯৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছেন। নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে সাড়ে ৬৩ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেননি। ফরম পূরণ না করা শিক্ষার্থীর হার প্রায় ৪০ শতাংশ।

বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এসএসসি পাসের পরও এইচএসসি পরীক্ষা না দেওয়ার বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ধারণা করা যায়, দারিদ্র্য একটি অন্যতম কারণ। এইচএসসি পর্যায়ে পড়াশোনা নানা কারণে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে, যেটা অনেক অভিভাবকের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থী কর্মে প্রবেশ করছে, অনেকেই কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যাচ্ছে। বিয়েও আরেকটি বড় কারণ।

এগুলোর প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, এসএসসি পাসের পর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী মাঝপথে হোঁচট খেল, এটা জাতির জন্য বিরাট ক্ষতি। এমনটা যেন না হয়, সে জন্য সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ