খুলনায় পাম্পগুলোতে তেল সংকট, ফরিদপুরে বন্ধ ঘোষণা
Published: 28th, January 2025 GMT
খুলনা বিভাগীয় ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলী আজিমকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকরা। ফলে খুলনা নগরীর খালিশপুর থানার কাশিপুর এলাকার পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও ১৬ জেলায় পরিবহন এখনও বন্ধ রয়েছে। এতে খুলনার পেট্রোল পাম্পে দেখা দিয়েছে জ্বালানি তেলের সংকট।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়ের মেঘনা মডেল সার্ভিস সেন্টার নামে পেট্রোল পাম্পে গিয়ে তেলের জন্য যানবাহনের ভিড় দেখা যায়।
পাম্পের কর্মচারী মো.
পাম্পের কর্মচারী ধীমান জানান, সকালে অকটেন শেষ হয়ে যায়। সামান্য পরিমাণ ডিজেল ও পেট্রোল রয়েছে। মোটরসাইকেল চালক হাফিজুর রহমান বলেন, অকটেন নিতে এসেছিলাম; কিন্তু পাইনি।
নগরীর অন্যান্য পেট্রোল পাম্পে গিয়েও তেল সংকটের কথা জানা যায়। পাম্পগুলো বলছে, রাতেই এগুলো জ্বালানি তেলশূন্য হয়ে পড়তে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকরা নতুন রাস্তার মোড়ে ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। খালিশপুরে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল ডিপোর সামনে গিয়ে কোনো ট্যাঙ্কলরি দেখা যায়নি।
ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান মিজু জানান, মহানগর হাকিম আদালতে সোমবার আলী আজিমের জামিন নামঞ্জুর হয়। মঙ্গলবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করা হলে সেখানে মামলার নথি না থাকায় শুনানি হয়নি।
খুলনা বিভাগীয় ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এনাম মুন্সী বলেন, বিএনপি অফিস ভাঙচুরের মামলায় ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির বর্তমান চার নেতা, সাবেক দুই নেতা এবং তিন সাধারণ সদস্যের বিরুদ্ধে গত ২১ আগস্ট খালিশপুর থানায় মামলা হয়। অথচ আলী আজিম বিএনপি নেতা। আলী আজিমের মুক্তি এবং ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর দাশকে একাধিকবার কল করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
এদিকে শ্রমিক নেতা আলী আজিমকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও জামিনের দাবিতে বৃহত্তর ফরিদপুরের সব তেলের পাম্প বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ফরিদপুর পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বিকেল ৪টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আমাদের সভায় সিদ্ধান্তের পরই বৃহত্তর ফরিদপুরের সব পাম্প মালিকদের বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া খুলনা বিভাগের দায়িত্বরত নেতারা তেল পাম্প মালিকদের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকরা আমাদের আলটিমেটাম দিয়ে বলেছিলেন, আপনারা যদি আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ না করেন এবং বিপদে পাশে না থাকেন, তাহলে আর গাড়ি চালাবেন না। পরে জরুরি বৈঠকে একাত্মতা ঘোষণা করে পাম্প বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক নেতার জামিন না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ট য ঙ কলর
এছাড়াও পড়ুন:
লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।
সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র
মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা
চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।
তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।
শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।
তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।
তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।
ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।
রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।
“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”
“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”
“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”
টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”
“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।”
সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।
ঢাকা/আমিনুল