বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ৬ষ্ঠ সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ড.

এম সাখাওয়াত হোসেন।

সভার সিদ্ধান্ত

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের লে-অফকৃত কোম্পানিগুলো কর্তৃপক্ষ বন্ধ করবে। শ্রম আইনের অধীনে শ্রমিকদের আইনানুগ পাওনাদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরিশোধ করা হবে। এ বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। বেক্সিমকোর লে-অফকৃত কোম্পানির বন্ধ প্রক্রিয়া নিয়ে উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত টিভি স্ক্রলে না পাঠানোয়; অর্থাৎ কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করায়, রিসিভারকে বরখাস্তসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। রিসিভার পরিবর্তনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঋণ দেওয়া জনতা ব্যাংকসহ সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কীসের ভিত্তিতে বা কী কী ডকুমেন্টের বিপরীতে এসব করেছে, অনিয়ম হয়েছে কি না; সে বিষয়ে ফরেনসিক অডিটসহ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত-পূর্বক বিভাগীয় এবং আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে আগামী রবিবার বিএসইসি, এফআইডি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসহ সভা করে বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর লিমিটেডের বন্ধকীকৃত শেয়ার বিক্রির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অর্থ বিভাগ পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

সভায় বলা হয়, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩২টি। অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৬টি। এগুলোর বিপরীতে ঋণ ১২ হাজার কোটি টাকা। লে-অফকৃত প্রতিষ্ঠান ১২টি,  চলমান ফ্যাক্টরি ৩টি; বেক্সিমকো এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড, বেক্সিমকো পিপিই লিমিটেড এবং আর আর ওয়াশিং লিমিটেড। ৩২টি ফ্যাক্টরির মোট ঋণ ২৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। বেক্সিমকো লিমিটেডের মোট ঋণ ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। জনতা ব্যাংকের ঋণ ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।

সভায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে আলোচনা হয়। এতে বলা হয়, সরকার কর্তৃক বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিক-কর্মচারীদের ৩ মাসের বকেয়া বেতন সংস্থান করা হয়েছে। যার পরিমাণ, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৫৫ কোটি টাকা; নভেম্বরে ৫৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা; ডিসেম্বরে ৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারির বেতন উপদেষ্টা পরিষদের পরবর্তী সিদ্ধান্তের আলোকে প্রদান করার প্রস্তুতি রয়েছে।

এ ছাড়া আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সরকার সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছে; অর্থ বিভাগ থেকে ৫০ কোটি টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সেপ্টেম্বর-২০২৪ থেকে অদ্যাবধি সরকার মোট ২২৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা প্রদান করেছে। 

এদিকে, আদালত কর্তৃক বেক্সিমকো গ্রুপের ৩টি কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে বলেও সভায় জানানো হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ রহণ করব উপদ ষ ট ব যবস সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ