Samakal:
2025-09-17@21:58:26 GMT

জনবল সংকটে বেহাল সেবা

Published: 1st, February 2025 GMT

জনবল সংকটে বেহাল সেবা

শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, পেট ব্যথাসহ নানা উপসর্গ নিয়ে ৯ দিন আগে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন ধল্লাকান্দির ৬৫ বছর বয়সী লুৎফর রহমান মণ্ডল। একই রোগে ভর্তি হন মোজাফ্‌ফপুরের সত্তরোর্ধ্ব হবিবর রহমান। তাদের ভাষ্য, শয্যার চেয়ে রোগী বেশি। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে এক চিকিৎসক রাউন্ডে এলেও দুপুরের পর থেকে আর তাদের দেখা মেলে না। একই ধরনের কথা বলেন পেটের ব্যথায় চার দিন আগে ভর্তি হওয়া রামপুরের পলাশ আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৮০ বছরের মোজাম্মেল ও আনারুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, শ্বাসকষ্ট ও ব্যথা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নিজ কাবিলপুরের সাজেদা ও শানেরহাটের আয়শা। মাথায় জ্বালাপোড়া ও ব্যথা নিয়ে সরলিয়ার কণিকাও ছিলেন অপেক্ষায়। তারা জানান, ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও চিকিৎসক দেখানোর টিকিট পাননি। চিকিৎসক ও জনবলের অভাবে তাদের মতো সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ২০১১ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার পর আসবাবসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। জনবল সংকটসহ নানা কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। 
শানেরহাটের ডায়াবেটিক রোগী সালমা বেগম, রোগীর স্বজন জাহাঙ্গীর আলম ও খাদিজা বেগমের অভিযোগ, বহির্বিভাগে টিকিট কেটে দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা পর চিকিৎসকের দেখা পেয়েছেন তারা। জানা গেছে, শুরুর দিকে গাইনি বিশেষজ্ঞ থাকায় সিজার হতো। ১৩ বছর ধরে তা বন্ধ ছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে ১০টি সিজার হলেও ফের বন্ধ হলে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা। এক সময় জরুরি প্রসূতি সেবার (ইওসি) আওতাভুক্ত হলেও এখন নেই। ফলে ৪৮ কিলোমিটার দূরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয় রোগীদের।
আরএমওর দায়িত্বে থাকা সহকারী সার্জন তারিকুল ইসলামের ভাষ্য, রবি থেকে বৃহস্পতিবার বহির্বিভাগে ছয়শ থেকে সাতশ রোগী থাকেন। ভর্তি থাকেন শতাধিক রোগী। বহু রোগীকে ওষুধ ছাড়া ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বিদায় করতে হয়। নিকটবর্তী হাসপাতালের চেয়ে সেবার মান ভালো হওয়ায় এখানে ভিড় বাড়ছে। এ জন্য বরাদ্দ বাড়ানো দরকার বলে তিনি জানান। 
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, চিকিৎসক সংকট এবং বেশি রোগী আসায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। সেবিকাদের সেবা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। ভর্তি ২০ জন খাবার পেলেও মান ভালো না হওয়ায় অনেকে ফেলে দেন। অথচ পথ্য ঠিকাদার প্রতিদিন ৫০ জন হিসেবে বিল তুলছেন। অভিযোগ দিলে একে অন্যকে দায়ী করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মচারীর অভিযোগ, ওষুধ ও পথ্য সরবরাহে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ফোন আসে। এতে কর্মকর্তারা হয়রানির শিকার হন। এগুলো বন্ধ হলে ওষুধ ও পথ্য সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি হবে।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২৩টি পদের বিপরীতে আছেন ১১ জন। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাগজে চিকিৎসকের ১৬ পদের বিপরীতে ১০ জন কর্মরত থাকলেও আছেন সাতজন। তিনজন ডেপুটেশনে অন্যত্র দায়িত্বে রয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিসিন, গাইনি, শিশু, অর্থোপেডিক, কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞসহ ইএমও, আইএমও, সহকারী সার্জন ও দুই মেডিকেল অফিসার আছেন। আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), অ্যানেসথেশিয়া, ফিজিক্যাল মেডিসিন, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞসহ সহকারী সার্জন, অ্যানেসথেশিস্ট, ডেন্টাল সার্জন, মেডিকেল অফিসার ও ইউনানি চিকিৎসক নেই।
১৬ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৯ মেডিকেল অফিসার পদে আছেন চারজন। সাত সহকারী সার্জনের পদে তিনজন রয়েছেন। জ্বালানি সংকটে অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া যায় না। অথচ পীরগঞ্জসহ সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাটের রোগীও এখানে আসেন। এতে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকায় উপজেলায় ভিড় বেশি। ২০২৩ সালে মাদারগঞ্জ ও খালাশপীরে ১০ শয্যার মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র উদ্বোধনের পর ১৭ মাসেও চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল নেই। ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে করা হাসপাতাল দুটি কাজে আসছে না।
আরএমওসহ চারজন বাদে সবাই জেলা সদর থেকে যাতায়াত করেন। ৫৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৫৪ জন সিএইচসিপি থাকলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। রয়েছে কর্মচারী সংকটও। তিনটি ওয়ার্ডবয়ের পদ থাকলেও আছেন দু’জন। পাঁচজন এমএলএসএসের স্থলে তিনজন কর্মরত আছেন। অ্যাসিস্ট্যান্ট মেডিকেল অফিসারের ১০টি, দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, দুই ফার্মাসিস্ট, সহ-স্বাস্থ্য পরিদর্শকের সাতটি, স্বাস্থ্য পরিদর্শক তিনটি, অফিস সহায়ক আটটি, তিন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, দুই নিরাপত্তা প্রহরী, দুই বাবুর্চি, আয়া, জুনিয়র মেকানিকসহ ৯৮ জনের পদ শূন্য রয়েছে।
জনবল ও চিকিৎসক সংকটে রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.

মো. মাসুদ রানা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর উপচে পড়া ভিড় থাকে, ১০০ শয্যা করা জরুরি। মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারীর ৫৫ পদের ৩৩টি শূন্য থাকায় ইপিআই কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গাইনি চিকিৎসক থাকলেও অ্যানেসথেশিয়া না থাকায় সিজার করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
চিকিৎসকদের কর্মস্থলে না থাকার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি মাসুদ রানা। তাঁর ভাষ্য, আগে অস্ত্রোপচার হলেও এখন বন্ধ। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে জটিল রোগী প্রজেক্টরে দেখিয়ে ঢাকার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়। ১৫টি ইউনিয়নের ৫৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা অনিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন।
পীরগঞ্জ নাগরিক কমিটি ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারি এবং ব্যবসায়ী ফোরামের সভাপতি এনামুল হক বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও অধিকাংশ সময় ৯০ জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে পাশের এলাকার বাসিন্দারা চিকিৎসা নিতে আসেন। এতে প্রায়ই ওষুধ, স্যালাইনসহ বিভিন্ন সামগ্রীর সংকট দেখা দেয়। উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষের স্বার্থে জরুরি এর সমাধান চান তিনি। জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ ও মজলিসে শূরার সদস্য এবং জেলা ওলামা বিভাগের সভাপতি নুরুল আমিন প্রশাসনিকভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করার দাবি জানিয়ে বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করে সেবার মান বাড়াতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স চ ক ৎসক র ব যবস থ থ কল ও স র জন সহক র উপজ ল রগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে আজ (সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার কারণে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

আরো পড়ুন:

ডিজিটাল ব্যাংকের আবেদনের সময় বাড়ল    

রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারে নামল

তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে বাজারে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে বাজার থেকেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। নিলামে বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত। নিলামের কাট অফ প্রাইস ধরা হয়েছে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা। এই কাট অফ প্রাইসেই ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার ফলে রিজার্ভ বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে মোট ১ হাজার ৭৪৭ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। এসব ডলার দেশের ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৭ দফায় ডলার কিনেছিল। এর মধ্যে গত ৪ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। ২ সেপ্টেম্বর একই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ ব্যাংক থেকে ৪৭.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। ১৩ জুলাই ১৮টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে এবং গত ১৫ জুলাই একই দরে ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২৩ জুলাই ডলার কিনেছে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। গত ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫  পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় এবং  গত ১০ আগস্ট ১১টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। এ কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমে গেছে। ডলারের দাম আরো কমে গেলে রপ্তানিকারকরা একদিকে সমস্যায় পড়বেন, অপরদিকে রেমিট্যান্স আয় বৈধ পথে আসা কমে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়, যা খুবই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তাতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকবে ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।

গত ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই ডলারের দর নির্ধারণ করছেন।

ঢাকা/নাজমুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাতে ভোট গণনাসহ ছাত্রদলের ৬ দাবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • যে হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ, বিদ্যুৎ–সংযোগ কিছুই নেই
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে