Samakal:
2025-08-01@04:50:53 GMT

জনবল সংকটে বেহাল সেবা

Published: 1st, February 2025 GMT

জনবল সংকটে বেহাল সেবা

শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, পেট ব্যথাসহ নানা উপসর্গ নিয়ে ৯ দিন আগে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন ধল্লাকান্দির ৬৫ বছর বয়সী লুৎফর রহমান মণ্ডল। একই রোগে ভর্তি হন মোজাফ্‌ফপুরের সত্তরোর্ধ্ব হবিবর রহমান। তাদের ভাষ্য, শয্যার চেয়ে রোগী বেশি। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে এক চিকিৎসক রাউন্ডে এলেও দুপুরের পর থেকে আর তাদের দেখা মেলে না। একই ধরনের কথা বলেন পেটের ব্যথায় চার দিন আগে ভর্তি হওয়া রামপুরের পলাশ আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৮০ বছরের মোজাম্মেল ও আনারুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, শ্বাসকষ্ট ও ব্যথা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নিজ কাবিলপুরের সাজেদা ও শানেরহাটের আয়শা। মাথায় জ্বালাপোড়া ও ব্যথা নিয়ে সরলিয়ার কণিকাও ছিলেন অপেক্ষায়। তারা জানান, ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও চিকিৎসক দেখানোর টিকিট পাননি। চিকিৎসক ও জনবলের অভাবে তাদের মতো সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ২০১১ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার পর আসবাবসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। জনবল সংকটসহ নানা কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। 
শানেরহাটের ডায়াবেটিক রোগী সালমা বেগম, রোগীর স্বজন জাহাঙ্গীর আলম ও খাদিজা বেগমের অভিযোগ, বহির্বিভাগে টিকিট কেটে দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা পর চিকিৎসকের দেখা পেয়েছেন তারা। জানা গেছে, শুরুর দিকে গাইনি বিশেষজ্ঞ থাকায় সিজার হতো। ১৩ বছর ধরে তা বন্ধ ছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে ১০টি সিজার হলেও ফের বন্ধ হলে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা। এক সময় জরুরি প্রসূতি সেবার (ইওসি) আওতাভুক্ত হলেও এখন নেই। ফলে ৪৮ কিলোমিটার দূরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয় রোগীদের।
আরএমওর দায়িত্বে থাকা সহকারী সার্জন তারিকুল ইসলামের ভাষ্য, রবি থেকে বৃহস্পতিবার বহির্বিভাগে ছয়শ থেকে সাতশ রোগী থাকেন। ভর্তি থাকেন শতাধিক রোগী। বহু রোগীকে ওষুধ ছাড়া ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বিদায় করতে হয়। নিকটবর্তী হাসপাতালের চেয়ে সেবার মান ভালো হওয়ায় এখানে ভিড় বাড়ছে। এ জন্য বরাদ্দ বাড়ানো দরকার বলে তিনি জানান। 
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, চিকিৎসক সংকট এবং বেশি রোগী আসায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। সেবিকাদের সেবা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। ভর্তি ২০ জন খাবার পেলেও মান ভালো না হওয়ায় অনেকে ফেলে দেন। অথচ পথ্য ঠিকাদার প্রতিদিন ৫০ জন হিসেবে বিল তুলছেন। অভিযোগ দিলে একে অন্যকে দায়ী করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মচারীর অভিযোগ, ওষুধ ও পথ্য সরবরাহে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ফোন আসে। এতে কর্মকর্তারা হয়রানির শিকার হন। এগুলো বন্ধ হলে ওষুধ ও পথ্য সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি হবে।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২৩টি পদের বিপরীতে আছেন ১১ জন। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাগজে চিকিৎসকের ১৬ পদের বিপরীতে ১০ জন কর্মরত থাকলেও আছেন সাতজন। তিনজন ডেপুটেশনে অন্যত্র দায়িত্বে রয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিসিন, গাইনি, শিশু, অর্থোপেডিক, কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞসহ ইএমও, আইএমও, সহকারী সার্জন ও দুই মেডিকেল অফিসার আছেন। আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), অ্যানেসথেশিয়া, ফিজিক্যাল মেডিসিন, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞসহ সহকারী সার্জন, অ্যানেসথেশিস্ট, ডেন্টাল সার্জন, মেডিকেল অফিসার ও ইউনানি চিকিৎসক নেই।
১৬ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৯ মেডিকেল অফিসার পদে আছেন চারজন। সাত সহকারী সার্জনের পদে তিনজন রয়েছেন। জ্বালানি সংকটে অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া যায় না। অথচ পীরগঞ্জসহ সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাটের রোগীও এখানে আসেন। এতে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকায় উপজেলায় ভিড় বেশি। ২০২৩ সালে মাদারগঞ্জ ও খালাশপীরে ১০ শয্যার মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র উদ্বোধনের পর ১৭ মাসেও চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল নেই। ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে করা হাসপাতাল দুটি কাজে আসছে না।
আরএমওসহ চারজন বাদে সবাই জেলা সদর থেকে যাতায়াত করেন। ৫৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৫৪ জন সিএইচসিপি থাকলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। রয়েছে কর্মচারী সংকটও। তিনটি ওয়ার্ডবয়ের পদ থাকলেও আছেন দু’জন। পাঁচজন এমএলএসএসের স্থলে তিনজন কর্মরত আছেন। অ্যাসিস্ট্যান্ট মেডিকেল অফিসারের ১০টি, দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, দুই ফার্মাসিস্ট, সহ-স্বাস্থ্য পরিদর্শকের সাতটি, স্বাস্থ্য পরিদর্শক তিনটি, অফিস সহায়ক আটটি, তিন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, দুই নিরাপত্তা প্রহরী, দুই বাবুর্চি, আয়া, জুনিয়র মেকানিকসহ ৯৮ জনের পদ শূন্য রয়েছে।
জনবল ও চিকিৎসক সংকটে রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.

মো. মাসুদ রানা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর উপচে পড়া ভিড় থাকে, ১০০ শয্যা করা জরুরি। মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারীর ৫৫ পদের ৩৩টি শূন্য থাকায় ইপিআই কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গাইনি চিকিৎসক থাকলেও অ্যানেসথেশিয়া না থাকায় সিজার করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
চিকিৎসকদের কর্মস্থলে না থাকার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি মাসুদ রানা। তাঁর ভাষ্য, আগে অস্ত্রোপচার হলেও এখন বন্ধ। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে জটিল রোগী প্রজেক্টরে দেখিয়ে ঢাকার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়। ১৫টি ইউনিয়নের ৫৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা অনিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন।
পীরগঞ্জ নাগরিক কমিটি ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারি এবং ব্যবসায়ী ফোরামের সভাপতি এনামুল হক বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও অধিকাংশ সময় ৯০ জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে পাশের এলাকার বাসিন্দারা চিকিৎসা নিতে আসেন। এতে প্রায়ই ওষুধ, স্যালাইনসহ বিভিন্ন সামগ্রীর সংকট দেখা দেয়। উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষের স্বার্থে জরুরি এর সমাধান চান তিনি। জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ ও মজলিসে শূরার সদস্য এবং জেলা ওলামা বিভাগের সভাপতি নুরুল আমিন প্রশাসনিকভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করার দাবি জানিয়ে বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করে সেবার মান বাড়াতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স চ ক ৎসক র ব যবস থ থ কল ও স র জন সহক র উপজ ল রগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়

জ্বালানিশক্তির হাত ধরেই মানবসভ্যতা এগিয়ে চলেছে। আগুনের ব্যবহার আয়ত্ত করা থেকে শুরু করে বাষ্পশক্তির ব্যবহার, পরমাণু বিভাজনের মতো মাইলফলক অর্জন—সবই জ্বালানিশক্তির অবদান।

আজ আমরা এক নতুন যুগের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের সামনে উঁকি দিচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির এক অপার সম্ভাবনা।

গত বছর নতুন করে যে বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে, তার প্রায় সবটাই এসেছে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ দুই ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে যা জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে ৮০০ বিলিয়ন ডলার বেশি।

সৌর ও বায়ুশক্তি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সাশ্রয়ী বিদ্যুতের উৎস, নবায়নযোগ্য খাতে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান, ত্বরান্বিত হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন। অথচ জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য এখনো অনেক বেশি ভর্তুকি দেওয়া হয়।

যেসব দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি আঁকড়ে ধরে আছে, তারা তাদের অর্থনীতিকে সুরক্ষা তো দিচ্ছেই না; বরং ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কারণ, তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা হারাচ্ছে এবং একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সুযোগ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানো মানে জ্বালানি সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জীবাশ্ম জ্বালানির বাজারমূল্য অনিশ্চিত, এর সরবরাহে বিঘ্ন ঘটা এবং কিংবা ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কবলেও পড়তে হতে পারে, যেমনটি আমরা দেখেছি রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনে আগ্রাসনের সময়; কিন্তু সূর্যালোকের বেলায় মূল্যবৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা নেই, বাতাসের ওপরও কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যায় না এবং প্রায় প্রতিটি দেশেই এত নবায়নযোগ্য সম্পদ আছে যে প্রত্যেকেই চাইলে জ্বালানিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে।

সর্বোপরি নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করে। বিদ্যুৎ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত লাখোকোটি মানুষের কাছে দ্রুত, সাশ্রয়ী ও টেকসই বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। বিশেষত অফ-গ্রিড ও ছোট ছোট সৌরবিদ্যুৎ প্যানেলগুলো এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখতে পারে।

সব মিলিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা এ মুহূর্তে অপ্রতিরোধ্য; কিন্তু এই রূপান্তর এখনো যথেষ্ট গতিশীল বা সবার জন্য সহজলভ্যও নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলো এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে।

২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর সব ডেটা সেন্টারগুলোর সম্মিলিত বিদ্যুৎ খরচ পুরো জাপানের বর্তমান বিদ্যুৎ খরচের সমান হবে। কোম্পানিগুলোর উচিত এ ডেটা সেন্টারগুলোর পরিচালনায় নবায়নযোগ্য উৎস কাজে লাগানোর অঙ্গীকার করা।

জ্বালানি খাতে এখনো জীবাশ্ম জ্বালানির আধিপত্য বিরাজ করছে, এবং কার্বন নিঃসরণ এখনো তার ঊর্ধ্বগতি বজায় রেখেছে। অথচ জলবায়ু–সংকটের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণতি এড়াতে চাইলে এগুলো হ্রাস করা ছাড়া উপায় নেই। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে আমাদের ছয়টি ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

প্রথমত, রাষ্ট্রগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি–নির্ভর ভবিষ্যতের প্রতি পুরোপুরি অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে, প্রতিটি দেশ নতুন জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনা জমা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) নামে পরিচিত।

এনডিসিতে পরবর্তী দশকের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। এ পরিকল্পনাগুলো অবশ্যই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। যেখানে সব ধরনের কার্বন নিঃসরণ ও সব খাতকে পর্যালোচনায় রাখতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুস্পষ্ট রূপরেখা হাজির করতে হবে।

জি–২০ দেশগুলো, যারা বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের প্রায় ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী, তাদেরই এর গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের জ্বালানিব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী করে। আধুনিক গ্রিড ও স্টোরেজ ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি তার পূর্ণ সম্ভাবনা বিকশিত করতে পারবে না; কিন্তু নবায়নযোগ্য উৎসে বিনিয়োগ করা প্রতি ডলারের মধ্যে মাত্র ৬০ সেন্ট ব্যয় হয় গ্রিড ও স্টোরেজ বাবদ। এ অনুপাতটিকে ১/১-এ উন্নীত করতে হবে।

তৃতীয়ত, রাষ্ট্রগুলোকে অবশ্যই বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা নবায়নযোগ্য উৎস থেকে মেটানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকেও নিজ নিজ ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে।

২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর সব ডেটা সেন্টারগুলোর সম্মিলিত বিদ্যুৎ খরচ পুরো জাপানের বর্তমান বিদ্যুৎ খরচের সমান হবে। কোম্পানিগুলোর উচিত এ ডেটা সেন্টারগুলোর পরিচালনায় নবায়নযোগ্য উৎস কাজে লাগানোর অঙ্গীকার করা।

চতুর্থত, আমাদের জ্বালানি রূপান্তরে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এর অর্থ হলো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি–নির্ভর আগামীর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করা; এবং সেই সঙ্গে জরুরি খনিজ সরবরাহ-শৃঙ্খল সংস্কার করা।

এ মুহূর্তে এগুলো অধিকার হরণ ও পরিবেশ ধ্বংসের কারণে জর্জরিত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো মূল্য-শৃঙ্খলের তলানিতে বন্দী হয়ে আছে। অবশ্যই এর অবসান ঘটাতে হবে।

পঞ্চমত, আমাদের বাণিজ্যকে জ্বালানি রূপান্তরের সহায়ক হাতিয়ার হিসাবে কাজে লাগাতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহের শৃঙ্খলটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত এবং এ মুহূর্তে বৈশ্বিক বাণিজ্য আর এককেন্দ্রিক থাকছে না। নতুন জ্বালানিব্যবস্থার যুগের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেশগুলোর উচিত সরবরাহে বৈচিত্র্য আনতে কাজ করা, নবায়নযোগ্য উৎসের পণ্যে শুল্ক কমানো এবং বিনিয়োগ চুক্তি আধুনিকীকরণ করা যাতে তারা এই রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে পারে।

ষষ্ঠত ও শেষত, আমাদের উচিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর দিকে বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া। আফ্রিকা গত বছর নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগের মাত্র ২ শতাংশ পেয়েছে, যদিও বিশ্বের সেরা সৌর শক্তির ৬০ শতাংশ উৎস এ মহাদেশে রয়েছে। আমাদের কিছু আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে—যাতে ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজেটে টান না পড়ে এবং বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলো যাতে তাদের ঋণদান ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে এবং অনেক বেশি বেসরকারি অর্থায়ন নিশ্চিত করতে পারে।

আমাদের ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো ও বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি মূল্যায়ন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে হবে, যাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতিশ্রুতি, জলবায়ু সংকটের ক্ষতিপূরণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পদ বিকল হয়ে পড়ার ঝুঁকির আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হয়।

এক নতুন জ্বালানি সম্ভাবনার যুগ আমাদের হাতছানি দিচ্ছে—এমন এক যুগ যেখানে সাশ্রয়ী, নবায়নযোগ্য, প্রাচুর্যময় জ্বালানি এক অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় সমৃদ্ধিশালী পৃথিবীকে শক্তি জোগাবে, যেখানে রাষ্ট্রগুলোর জ্বালানি স্বয়ংসম্পূর্ণতার নিশ্চয়তা থাকবে এবং বিদ্যুৎসেবা থাকবে সব নাগরিকের হাতের মুঠোয়।

ঠিক এ মুহূর্ত আমরা চাইলেই বৈশ্বিকভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে পারি। আসুন, আমরা এই সুযোগকে কাজে লাগাই।

আন্তোনিও গুতেরেস জাতিসংঘের মহাসচিব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • বেসরকারি ব্যাংক নেবে ম্যানেজার, নিয়োগ প্রধান কার্যালয়ে
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়