অনেক তো বিরহ হলো, এবার একটু অ্যাকশন হয়ে যাক...
Published: 2nd, February 2025 GMT
দীর্ঘ ৮ বছর ধরে অভিনয়ে নেই নায়ক বাপ্পরাজ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই যুগের প্রায় সমেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে তার সিনেমার সংলাপ। ফলে চর্চায় উঠে আসেন তিনি। তার সিনেমার সংলাপ দিয়ে মিম বানানো হয়, ব্যার্থ প্রেমের নায়ক হিসেবে ট্রল করাও হয়। যদিও এসবই ভালোবাসার বহি:প্রকাশ বলেই দেখেন বাপ্পরাজ।
৮ বছর ধরে অভিনয়ে না থাকার কারণ জানিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বাপ্পারাজ বলেছিলেন মন:পুত চরিত্র ও গল্প না পাওয়াতেই তার ফেরা হয়নি। এবার ওয়েব সিরিজ ‘রক্তঋণ’ দিয়ে ফিরছেন এই নায়ক।
সম্প্রতি সিরিজটির একঝলক ফেসবুকে শেয়ার করে নায়ক জানিয়ে দিয়েছেন তার ফেরার কথা।
বাপ্পার পোস্ট করা ‘ক্যারেক্টার টিজার’- এ শুরুতেই দেখা যায়, একটি দরজা খুলে যায়। ভেতর থেকে ভেসে আসে ‘প্রেমের সমাধি’ শিরোনামের গানটি। পাশে একটি চায়ের কাপ থেকে ধোঁয়া উঠছে। পাশে রাখা একটি পিস্তল। জানা যায়, তার পরিচয় তিনি সায়েম জোব্বার। পেছন থেকে দেখা যায়, এই সায়েম একটি লেজার লাইট ধরে আছেন সামনের বোর্ডে। সেখানে পত্রিকার খবরগুলো সাঁটানো। পরে শোনা যায় সেই পুলিশ কর্মকর্তার কণ্ঠ- ‘এই হাফিজ, বন্ধ করো। অনেক তো বিরহ হলো। এবার একটু অ্যাকশন হয়ে যাক।’
চমকে দিয়ে সেই জোব্বার চরিত্রে সামনে আসেন বাপ্পারাজ। ‘ক্যারেক্টার টিজার’- এ সংলাপ দেখে বোঝা যায়, ক্রাইম থ্রিলার কোনো গল্প। যেখানে একের পর এক ঘটনাক্রমে খুন হয় চিকিৎসকেরা। কেন এই রহস্যজনক খুন, সেটাই পুলিশ হয়ে বের করবেন বাপ্পারাজ।
এই নায়কের সংলাপে সেটা পরিষ্কার হয়, ‘শোন হাফিজ, সব ক্রাইমের একটা হোল থাকে। আমাদের কাজ সেই অপরাধের ফুটোটা বের করা। সবাই পায় না। সবাইকে দিয়ে সব কাজ হয় না হাফিজ।’
ওয়েব সিরিজটির কাজ এখনো চলছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বাপ্পারাজ। বেশ কিছু অংশের শুটিংয়েও অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখনও কাজ শেষ হয়নি। কাজ চলছে। আরও কিছু কাজ গুছিয়ে নিই, তখন বিস্তারিত জানাবো কাজটি নিয়ে।’
‘রক্তঋণ’ ওয়েব সিরিজটি পরিচালনা করেছেন তরুণ নির্মাতা মোস্তফা খান সিহান। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময় দেখেছি বাপ্পারাজ ভাইয়ের সংলাপ, গল্প নিয়ে প্রচুর মিম তৈরি হয়েছে। কখনও কখনও ট্রলও হয়েছে। বলা হয়েছে ব্যর্থ প্রেমের নায়ক। বিরহের সিনেমার জন্য তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। তার সেই ভাবমূর্তিকে পাশ কাটিয়ে একদমই থ্রিলার রহস্য গল্পে নিয়ে আসছি। দর্শকদের আমরা রিপ্লাই দিতে চাই বাপ্পারাজের নতুন চরিত্র দিয়ে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব প পর জ
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।
আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা।
আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।
আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।
অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।
আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।
এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।
এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।
বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।
লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল