কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনা ঘিরিয়া যেই তোলপাড় ও প্রতিবাদ চলমান, উহা অস্বাভাবিক নহে। মানবাধিকার ও নাগরিক মর্যাদাবোধের অঙ্গীকার সম্মুখে রাখিয়া সংঘটিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েও এইরূপ অঘটন কেন ঘটিবে? বিগত সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভয়ংকররূপে বৃদ্ধি পাইয়াছিল। অন্যান্য বিষয়ের সহিত এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিও শিক্ষার্থী-জনতাকে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান সংঘটনে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল। আর বর্তমান সরকার ওই গণঅভ্যুত্থানেরই ফসল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনরোষের অন্যতম কারণ যথা আইনি হেফাজতে প্রাণহানি; ঐ সরকারের পতনের পরও উহার ধারাবাহিকতা চলিবে কেন?

নিহতের ভ্রাতাকে উদ্ধৃত করিয়া সমকাল জানাইয়াছে, চট্টগ্রামের কর্মস্থল হইতে বাড়ি আসিয়া তৌহিদ যখন পিতার কুলখানি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখন সেনাবাহিনীর কয়েক সদস্য সাদা পোশাকের পাঁচ যুবকসহ আসিয়া অস্ত্র অনুসন্ধানের কথা বলিয়া তাঁহাকে তুলিয়া লইয়া যান। পরদিন শুক্রবার তাঁহাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হইলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তৌহিদকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়াছিল স্থানীয় থানার পুলিশ; তবে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলিয়াছেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ হইতে পুলিশের নিকট হস্তান্তরকালেই তৌহিদ ‘অচেতন’ ছিলেন। তদুপরি, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট ছিল বলিয়া তাঁহার স্বজন জানাইয়াছেন। 

স্পষ্টত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতেই তৌহিদের মৃত্যু ঘটিয়াছে, যাহা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত নহে, বিদ্যমান নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ অনুসারে দণ্ডযোগ্য অপরাধও বটে। কার্যত যৌথ বাহিনীর হেফাজতে তৌহিদের প্রাণহানির অভিযোগ এমন সময়ে জনসমক্ষে উপস্থিত, যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশেষত পুলিশের সক্ষমতার ঘাটতির কারণে যৌথ বাহিনীর দিকে সকলেই নির্নিমেষ। এমনকি মানবাধিকার সংস্থাসমূহের সমালোচনা সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সেনাসদস্যদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা হইয়াছে। 
যাহা আরও হতাশাজনক, মানবাধিকার লঙ্ঘনের এহেন জঘন্য ঘটনা এমন সময়ে ঘটিল, যখন দেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীন, যাহার অন্যতম প্রতিশ্রুতি সকল প্রকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করা। তদুপরি, দেশের শীর্ষ মানবাধিকারকর্মীরা সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সমাসীন। 

বস্তুত নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনীই যখন ঘাতকরূপে আবির্ভূত, তখন নাগরিকদের অসহায়ত্বের কোনো সীমা থাকে না। উপরন্তু, এই প্রকার অঘটন প্রতিকারহীন থাকিলে সাধারণ জনগণের মধ্যে আইন স্বহস্তে তুলিয়া লইবার প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়। ইহারই ফলস্বরূপ সমাজে গণপিটুনির ন্যায় ঘটনা বৃদ্ধি পায়, যাহা সমাজকে এক পর্যায়ে আইনহীনতায় নিমজ্জিত করে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ সরকারের আমলে উহা কাম্য হইতে পারে না।

আশার বিষয়, সরকার তৌহিদের প্রাণহানির ঘটনা দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়াছে। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে বলা হইয়াছে, অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে যেই কোনো ধরনের নির্যাতন ও হত্যার কঠোর নিন্দা জানায়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরও (আইএসপিআর) বিবৃতি দিয়া সংশ্লিষ্ট সেনাক্যাম্পের কমান্ডারকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার, তৎসহিত এই ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক’ ঘটনা তদন্তে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানাইয়াছে। উপরন্তু, আইএসপিআর মৃত্যুর সঠিক কারণ উদ্ঘাটনে একটি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠনেরও কথা জানাইয়া বলিয়াছে, তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার এবং আইএসপিআর প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়িত হইবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র তদন ত ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি

‎নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল  সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।

সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে  একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য। 

সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের  গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি,  সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।

‎‎মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর)  শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

‎দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।

‎‎জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।

‎‎এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।

‎‎তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।

‎‎এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
  • নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
  • ১৭ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ, নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই হাজার সদস্য
  • ফরিদপুরে অবরোধ শনিবার পর্যন্ত স্থগিত
  • পাকিস্তানে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ৫ সেনা নিহত
  • আসন্ন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের