গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
Published: 31st, October 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘গণভোট নিয়ে উত্তাপ জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। রাজনৈতিক দল থাকলে মতবিরোধ থাকবে, আমি এক কথা বলব, আরেকজন আরেক কথা বলবে—এটাই নিয়ম। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ এবং প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে সিদ্ধান্ত যে রকমই হোক না কেন, জাতীয় নির্বাচন আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
প্রেস সচিব আজ শুক্রবার দুপুরে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। শফিকুল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিচ্ছে। জাতির জন্য যেটা সবচেয়ে মঙ্গলজনক, সে কাজটাই প্রধান উপদেষ্টা করবেন। এখানে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। অনেক বড় বড় কাজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করে এসেছে। জুলাই ঘোষণা দিয়েছে, জুলাই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর হয়েছে। নির্বাচনের কাজ পুরো গতিতে চলছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ভালো। আপনারা একটি-দুটি মৃত্যু হলে, চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনা ঘটলেই বলতে থাকেন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ। আপনারা একটু ভালোভাবে দেখেন পরিস্থিতি কেমন। আপনারা নিজেরা বিচার করে একটা সিদ্ধান্ত নিন। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। পুলিশ খুব ভালোভাবে কাজ করছে। অন্যান্য বাহিনীও ভালো কাজ করছে। রাজনৈতিক সংঘাতও গত মাসে কম হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আওয়ামী লীগ তো অনেক টাকা বাংলাদেশ থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে। মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তারা নিয়ে গেছে। ওই ডলার তারা খরচ করছে। এখন যে কেউ একটা ঝটিকা মিছিল করলেন, হয়তোবা তাঁর অ্যাকাউন্টে ডলার জমা পড়ছে। আওয়ামী লীগ এ রকম ঝটিকা মিছিল করে আগামী ৫০ বছরেও কিছু করতে পারবে না।
এর আগে জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশনের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ ছিল মেয়েদের। আমাদের নারীরা, মেয়েরা তাঁদের ভাইদের বুলেট নিজেরা বুক পেতে নিয়েছেন। জুলাই কন্যারা যে বাংলাদেশ বানাতে চেয়েছেন, সেই বাংলাদেশ আমরা বানাতে পারছি কি না, সেটা অবশ্য অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন। আমি বলব, আমাদের চেষ্টা আছে, আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশ এমন একটা দেশ হোক, যেখানে কোনো ধরনের বৈষম্য থাকবে না।’
জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশনের সভাপতি জান্নাতুল নাঈম প্রমির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসমাইল, সহ–উপাচার্য রেজাওয়ানুল হক ও নোয়াখালী জেলা অতিরিক্ত প্রশাসক মুহাম্মদ ইসমাঈল, প্রক্টর এ এফ এম আরিফুর রহমান, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূর উদ্দিন জাহাঙ্গীর, জুলাই শহীদ নাছিমার বোন কোহিনুর আক্তার প্রমুখ।
বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বার্ষিক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। এর আগে তিনি সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।
 লক্ষ্মীপুরে স্বর্ণালংকার লুটের জন্য মা-মেয়েকে হত্যা, জানাল পুলিশ
লক্ষ্মীপুরে স্বর্ণালংকার লুটের জন্য মা-মেয়েকে হত্যা, জানাল পুলিশ