কয়েক দিন আগে আলো ঝলমলে দুনিয়াকে বিদায় জানিয়ে সন্ন্যাসিনী হয়েছেন নব্বই দশকের লাস্যময়ী ও সাহসী অভিনেত্রী মমতা কুলকার্নি। সন্ন্যাসিনী হওয়ার পরও আখড়ার নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ফলে, তাকে নিয়ে জোর চর্চা চলছে ভারতীয় মিডিয়ায়।

এ পরিস্থিতিতে ইন্ডিয়া টিভিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মমতা কুলকার্নি। এ আলাপচারিতায় বেশ কিছু প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। দুই যুগ আগে সকালে যজ্ঞ করে, রাতে মদ্যপান করা নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন। এ সাক্ষাৎকারে সেই প্রসঙ্গ তোলা হয়।

মমতা কুলকার্নি বলেন, “বলিউডে থাকাকালীন খুব নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে থাকতাম। যখন শুটিংয়ে যেতাম, আমার সঙ্গে তিনটি ব্যাগ থাকত। একটিতে আমার পোশাক আর অন্য দুটোতে পোর্টেবল মন্দির। আমার ঘরে, টেবিলের ওপর এই ঠাকুরের মন্দির স্থাপন করতাম। আমি পূজা দিয়ে শুটিংয়ে যেতাম।”

আরো পড়ুন:

নোরা ফাতেহির মৃত্যুর গুঞ্জন, ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা কতটা?

ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে জয়ী তারা

নবরাত্রিতে পালনের কথা জানিয়ে মমতা কুলকার্নি বলেন, “আমি নবরাত্রি পালন করতাম। তাই ঠিক করেছিলাম, উপবাস পালন করব এবং প্রতিদিন ৩টি যজ্ঞ করব। একটি সকালে, একটি দুপুরে আর একটি সন্ধ্যায়। ৯ দিন শুধু পানি খেতাম। চন্দনকাঠ দিয়ে যজ্ঞ করতাম।”

মদ্যপানের ঘটনা বর্ণনা করে মমতা কুলকার্নি বলেন, “সেই সময়ে আমার ডিজাইনার একদিন এসে বললেন, ‘মমতা তুমি এসব কী করছ? তুমি তো বেশি সিরিয়াস হয়ে গিয়েছ? এবার তুমি ওঠো, নয় দিন যথেষ্ট!”

মদ্যপান করার পর শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মমতা কুলকার্নি। তা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “এরপর আমরা দুজন মিলে তাজ হোটেলে যাই। দুই-একটা নবরাত্রিতে এমনটা হয়েছে। এরপর স্কচ (মদ) খাই। কিন্তু ২ পেগ খাওয়ার পরই আমাকে বাথরুমে ছুটতে হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, পুরো মদই আমার মাথায় উঠে গিয়েছে। ৯ দিন উপবাসে থাকা, শরীরে কোনো খাবার না থাকা, সব যেন আমাকে তোলপাড় করে দিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছিল। বাথরুমে ৪০ মিনিট বসেছিলাম।”

গত ২২ বছর গুরুর নির্দেশ অনুযায়ী আড়ালে ছিলেন মমতা কুলকার্নি। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেখুন, এসব কিছুই হয়েছে ১৯৯৬-৯৭ সালে। এই দুই বছর আমার গুরু বুঝতে পেরেছিলেন, বলিউড আমাকে এই পথে (সন্ন্যাস) থাকতে দেবে না। সে কারণে উনি আমার জন্য এমন একটা জায়গা বেছে দেন, যেখানে কেউ আমার সঙ্গে ২২ বছর দেখা করতে পারবে না।”

গত ২৪ জানুয়ারি মহাকুম্ভের কিন্নর আখড়াতে ‘মহামণ্ডলেশ্বর’ রীতির মাধ্যমে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন মমতা। এদিন পিণ্ডদানও করেন তিনি। এই রীতির মাধ্যমে নতুন নামও গ্রহণ করেছেন। তার নতুন নাম— শ্রী ইয়মাই মমতা নন্দ গিরি।

২০১৬ সালে থানে পুলিশ ২ হাজার কোটি রুপির একটি মাদক পাচার চক্রের তদন্ত শুরু করে; যেখানে মমতার নাম জড়িয়ে পড়ে। মূলত, মমতা কুলকার্নি ও তার সঙ্গী কথিত মাদক সম্রাট ভিকি গোস্বামীকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। এ নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। গত বছরের শেষের দিকে এ মামলা থেকে খালাস পান এই অভিনেত্রী। কিন্তু ২৪ বছর এই অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদেশে কাটিয়ে গত বছর ভারতে ফিরেন মমতা।

১৯৯২ সালে রাজ কুমার ও নানা পাটেকরের ‘তিরঙ্গা’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনয়জীবন শুরু করেন মমতা কুলকার্নি। নব্বইয়ের দশকে ‘করণ অর্জুন’, ‘ওয়াক্ত হামারা হ্যায়’, ‘ক্রান্তিবীর’, ‘সাবছে বড় খিলাড়ি’-এর মতো হিট সিনেমার নায়িকা তিনি। অক্ষয় কুমার, আমির খান, সালমান খান, গোবিন্দ, সঞ্জয় দত্তের মতো তারকা শিল্পীদের সঙ্গে জুটি বেঁধে পর্দায় ঝড় তুলেছেন মমতা।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন মমত

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ