সকালে যজ্ঞ, রাতে মদ্যপান: মুখ খুললেন বিতর্কিত মমতা
Published: 7th, February 2025 GMT
কয়েক দিন আগে আলো ঝলমলে দুনিয়াকে বিদায় জানিয়ে সন্ন্যাসিনী হয়েছেন নব্বই দশকের লাস্যময়ী ও সাহসী অভিনেত্রী মমতা কুলকার্নি। সন্ন্যাসিনী হওয়ার পরও আখড়ার নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ফলে, তাকে নিয়ে জোর চর্চা চলছে ভারতীয় মিডিয়ায়।
এ পরিস্থিতিতে ইন্ডিয়া টিভিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মমতা কুলকার্নি। এ আলাপচারিতায় বেশ কিছু প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। দুই যুগ আগে সকালে যজ্ঞ করে, রাতে মদ্যপান করা নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন। এ সাক্ষাৎকারে সেই প্রসঙ্গ তোলা হয়।
মমতা কুলকার্নি বলেন, “বলিউডে থাকাকালীন খুব নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে থাকতাম। যখন শুটিংয়ে যেতাম, আমার সঙ্গে তিনটি ব্যাগ থাকত। একটিতে আমার পোশাক আর অন্য দুটোতে পোর্টেবল মন্দির। আমার ঘরে, টেবিলের ওপর এই ঠাকুরের মন্দির স্থাপন করতাম। আমি পূজা দিয়ে শুটিংয়ে যেতাম।”
আরো পড়ুন:
নোরা ফাতেহির মৃত্যুর গুঞ্জন, ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা কতটা?
ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে জয়ী তারা
নবরাত্রিতে পালনের কথা জানিয়ে মমতা কুলকার্নি বলেন, “আমি নবরাত্রি পালন করতাম। তাই ঠিক করেছিলাম, উপবাস পালন করব এবং প্রতিদিন ৩টি যজ্ঞ করব। একটি সকালে, একটি দুপুরে আর একটি সন্ধ্যায়। ৯ দিন শুধু পানি খেতাম। চন্দনকাঠ দিয়ে যজ্ঞ করতাম।”
মদ্যপানের ঘটনা বর্ণনা করে মমতা কুলকার্নি বলেন, “সেই সময়ে আমার ডিজাইনার একদিন এসে বললেন, ‘মমতা তুমি এসব কী করছ? তুমি তো বেশি সিরিয়াস হয়ে গিয়েছ? এবার তুমি ওঠো, নয় দিন যথেষ্ট!”
মদ্যপান করার পর শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মমতা কুলকার্নি। তা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “এরপর আমরা দুজন মিলে তাজ হোটেলে যাই। দুই-একটা নবরাত্রিতে এমনটা হয়েছে। এরপর স্কচ (মদ) খাই। কিন্তু ২ পেগ খাওয়ার পরই আমাকে বাথরুমে ছুটতে হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, পুরো মদই আমার মাথায় উঠে গিয়েছে। ৯ দিন উপবাসে থাকা, শরীরে কোনো খাবার না থাকা, সব যেন আমাকে তোলপাড় করে দিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছিল। বাথরুমে ৪০ মিনিট বসেছিলাম।”
গত ২২ বছর গুরুর নির্দেশ অনুযায়ী আড়ালে ছিলেন মমতা কুলকার্নি। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেখুন, এসব কিছুই হয়েছে ১৯৯৬-৯৭ সালে। এই দুই বছর আমার গুরু বুঝতে পেরেছিলেন, বলিউড আমাকে এই পথে (সন্ন্যাস) থাকতে দেবে না। সে কারণে উনি আমার জন্য এমন একটা জায়গা বেছে দেন, যেখানে কেউ আমার সঙ্গে ২২ বছর দেখা করতে পারবে না।”
গত ২৪ জানুয়ারি মহাকুম্ভের কিন্নর আখড়াতে ‘মহামণ্ডলেশ্বর’ রীতির মাধ্যমে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন মমতা। এদিন পিণ্ডদানও করেন তিনি। এই রীতির মাধ্যমে নতুন নামও গ্রহণ করেছেন। তার নতুন নাম— শ্রী ইয়মাই মমতা নন্দ গিরি।
২০১৬ সালে থানে পুলিশ ২ হাজার কোটি রুপির একটি মাদক পাচার চক্রের তদন্ত শুরু করে; যেখানে মমতার নাম জড়িয়ে পড়ে। মূলত, মমতা কুলকার্নি ও তার সঙ্গী কথিত মাদক সম্রাট ভিকি গোস্বামীকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। এ নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। গত বছরের শেষের দিকে এ মামলা থেকে খালাস পান এই অভিনেত্রী। কিন্তু ২৪ বছর এই অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদেশে কাটিয়ে গত বছর ভারতে ফিরেন মমতা।
১৯৯২ সালে রাজ কুমার ও নানা পাটেকরের ‘তিরঙ্গা’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনয়জীবন শুরু করেন মমতা কুলকার্নি। নব্বইয়ের দশকে ‘করণ অর্জুন’, ‘ওয়াক্ত হামারা হ্যায়’, ‘ক্রান্তিবীর’, ‘সাবছে বড় খিলাড়ি’-এর মতো হিট সিনেমার নায়িকা তিনি। অক্ষয় কুমার, আমির খান, সালমান খান, গোবিন্দ, সঞ্জয় দত্তের মতো তারকা শিল্পীদের সঙ্গে জুটি বেঁধে পর্দায় ঝড় তুলেছেন মমতা।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।
সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র
মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা
চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।
তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।
শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।
তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।
তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।
ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।
রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।
“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”
“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”
“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”
টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”
“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।”
সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।
ঢাকা/আমিনুল