রাজশাহীর বাঘায় এক আওয়ামী লীগের নেতার বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। হামলাকারীরা বাড়ির এসিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার কিশোরপুর গ্রামের হাজামপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এরপরই গ্রামের হিন্দুপাড়ায় এক শিক্ষকের বাসায় তারা হামলা করে লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের ওই নেতার নাম আবদুর রহমান। তিনি বাঘার পাকুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। দ্বিতীয় বাড়ির মালিক একজন স্কুলশিক্ষক। তাঁর নাম প্রদীপ কুমার সরকার। তিনি হরিরামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। এ ছাড়া হামলাকারীরা হিন্দুপাড়ার গৌরচন্দ্র ও চিন্ময় সরকারের বাড়িতেও হামলার চেষ্টা করে।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আবদুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। ততক্ষণে বাড়ির টিনের চালা পুড়ে যায়। তিন ঘরের সব আসবাব পুড়ে গেছে। জমির কাগজসহ মজুত করা কয়েক মণ মসুর, শর্ষে, কলাই ও গম পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়িতে ৩০০ কবুতর ছিল। আগুনে কিছু কবুতর পুড়ে গেছে। কিছু উড়ে যেতে পেরেছে আর দামি কবুতরগুলো লুট করা হয়েছে বলে পরিবারের লোকজন দাবি করছেন। হামলাকারীরা বাড়ির এসি, কীটনাশক ছিটানো মেশিন, ১৫ হাজার টাকার কীটনাশকসহ আরও কিছু জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

আব্দুর রহমানের ছেলে রাজশাহী শহরের একটি মাদ্রাসায় পড়ে। ছেলের পড়াশোনার কারণে মা–বাবাও সেখানে থাকেন। এই বাড়িতে আবদার আলী নামের একজন তত্ত্বাবধায়ক থাকেন। তিনি রাত নয়টার দিকে বাসায় আসেন। বৃহস্পতিবার তাঁর আসার আগেই ঘটনা ঘটে গেছে। বাড়িটি দোতলা। ছাদের একাংশ টিন দিয়ে ছাওয়া। সন্ধ্যা সাতটার পরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

আব্দুর রহমানের স্ত্রী লাভলী বেগম রাজশাহীতে ছেলের কাছেই ছিলেন। গতকাল রাতে তাঁর ননদের ফোন পেয়ে সকালে বাড়িতে আসেন। তিনি বলেন, ‘বাড়িত আইসি দেখছি আমার সবকিছু পুইড়ি শেষ হয়্যা গিচে। জমির কাগজপত্র পর্যন্ত পুইড়ি গিচে। সবচাইতে দুঃখের বিষয়, আমার ছেলির শখের ৩০০ কবুতর ছিল। দামি দামি কবুতর। একটার দামই ৫ হাজার টাকা। ছেলি এত ভালোবাসে কোনো দিন একটা জবাই করতে দেয় না। সেই কবুতর কিছু পুইড়ি গিছে। দামিগুলো লুট কইরি লিয়া গিচে। কিছু উইড়ি ইদিকউদিক চইলি গিছে। বাড়িত আর ব্যবহার করার মতো কিচ্ছু নাই।’

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বললেন, ‘১৫ থেকে ২০ জন হামলাকারী ছিল। তারা সবাই হেলমেট পরে ছিল। সবার মুখ ঢাকা ছিল। লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র লিয়া মোটরসাইকেলে করে আসে। ওরা এলাকার কোনো মানুষেক ঢুকতে দেয়নি। মুখ খারাপ কইরি গালাগাল করতে থাকে। কেউ কাছে ভিড়তে পারেনি। আসার চেষ্টা করলেও সবাইকে ওরা খেদাই দিচে। ভাঙচুর লুটপাট করার পরে পেট্রল দিয়ে সারা বাড়িতে আগুন জ্বালাইয়ে দিয়ে তারা চলে গেল।’

শুক্রবার দুপুরে এই বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, সব জিনিসপত্র পুড়ে কালো হয়ে গেছে। মেঝেতে শুধু ছাই পড়ে আছে। হিন্দুপাড়ার প্রদীপ কুমার সরকারের বাড়িতে শুধু তাঁর বোন প্রমিলা সরকার ছিলেন। প্রদীপর সরকার তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ভারতে রয়েছেন। প্রমিলা সরকার বললেন, গেট ভাঙার চেষ্টা করে পারেনি। ব্যালকনিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন বেশি ছড়ায়নি। একপর্যায়ে তারা ব্যালকনির দরজা ভেঙে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। তাদের বাড়িতে সমাজের অনুষ্ঠানের যত জিনিসপত্র ছিল, সব হামলাকারীরা লুট করে নিয়ে যায়।

গৌচন্দ্র ও চিন্ময় সরকারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, হামলাকারীরা গেট ভাঙার চেষ্টা করেছে। স্টিলে পাতের গেটে হামলার চিহ্ন রয়েছে।

বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। ততক্ষণে আব্দুর রহমানের বাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। আর প্রদীপ মাস্টারের বাড়ির বারান্দার আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিল। সেটা সেভাবে জ্বলেনি। তাঁরা নিজেদের মতো করে তদন্ত করছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র রহম ন র জ ন সপত র ল ট কর আওয় ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প
  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স