বাঘায় আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন
Published: 7th, February 2025 GMT
রাজশাহীর বাঘায় এক আওয়ামী লীগের নেতার বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। হামলাকারীরা বাড়ির এসিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার কিশোরপুর গ্রামের হাজামপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এরপরই গ্রামের হিন্দুপাড়ায় এক শিক্ষকের বাসায় তারা হামলা করে লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের ওই নেতার নাম আবদুর রহমান। তিনি বাঘার পাকুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। দ্বিতীয় বাড়ির মালিক একজন স্কুলশিক্ষক। তাঁর নাম প্রদীপ কুমার সরকার। তিনি হরিরামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। এ ছাড়া হামলাকারীরা হিন্দুপাড়ার গৌরচন্দ্র ও চিন্ময় সরকারের বাড়িতেও হামলার চেষ্টা করে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আবদুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। ততক্ষণে বাড়ির টিনের চালা পুড়ে যায়। তিন ঘরের সব আসবাব পুড়ে গেছে। জমির কাগজসহ মজুত করা কয়েক মণ মসুর, শর্ষে, কলাই ও গম পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়িতে ৩০০ কবুতর ছিল। আগুনে কিছু কবুতর পুড়ে গেছে। কিছু উড়ে যেতে পেরেছে আর দামি কবুতরগুলো লুট করা হয়েছে বলে পরিবারের লোকজন দাবি করছেন। হামলাকারীরা বাড়ির এসি, কীটনাশক ছিটানো মেশিন, ১৫ হাজার টাকার কীটনাশকসহ আরও কিছু জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
আব্দুর রহমানের ছেলে রাজশাহী শহরের একটি মাদ্রাসায় পড়ে। ছেলের পড়াশোনার কারণে মা–বাবাও সেখানে থাকেন। এই বাড়িতে আবদার আলী নামের একজন তত্ত্বাবধায়ক থাকেন। তিনি রাত নয়টার দিকে বাসায় আসেন। বৃহস্পতিবার তাঁর আসার আগেই ঘটনা ঘটে গেছে। বাড়িটি দোতলা। ছাদের একাংশ টিন দিয়ে ছাওয়া। সন্ধ্যা সাতটার পরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
আব্দুর রহমানের স্ত্রী লাভলী বেগম রাজশাহীতে ছেলের কাছেই ছিলেন। গতকাল রাতে তাঁর ননদের ফোন পেয়ে সকালে বাড়িতে আসেন। তিনি বলেন, ‘বাড়িত আইসি দেখছি আমার সবকিছু পুইড়ি শেষ হয়্যা গিচে। জমির কাগজপত্র পর্যন্ত পুইড়ি গিচে। সবচাইতে দুঃখের বিষয়, আমার ছেলির শখের ৩০০ কবুতর ছিল। দামি দামি কবুতর। একটার দামই ৫ হাজার টাকা। ছেলি এত ভালোবাসে কোনো দিন একটা জবাই করতে দেয় না। সেই কবুতর কিছু পুইড়ি গিছে। দামিগুলো লুট কইরি লিয়া গিচে। কিছু উইড়ি ইদিকউদিক চইলি গিছে। বাড়িত আর ব্যবহার করার মতো কিচ্ছু নাই।’
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বললেন, ‘১৫ থেকে ২০ জন হামলাকারী ছিল। তারা সবাই হেলমেট পরে ছিল। সবার মুখ ঢাকা ছিল। লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র লিয়া মোটরসাইকেলে করে আসে। ওরা এলাকার কোনো মানুষেক ঢুকতে দেয়নি। মুখ খারাপ কইরি গালাগাল করতে থাকে। কেউ কাছে ভিড়তে পারেনি। আসার চেষ্টা করলেও সবাইকে ওরা খেদাই দিচে। ভাঙচুর লুটপাট করার পরে পেট্রল দিয়ে সারা বাড়িতে আগুন জ্বালাইয়ে দিয়ে তারা চলে গেল।’
শুক্রবার দুপুরে এই বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, সব জিনিসপত্র পুড়ে কালো হয়ে গেছে। মেঝেতে শুধু ছাই পড়ে আছে। হিন্দুপাড়ার প্রদীপ কুমার সরকারের বাড়িতে শুধু তাঁর বোন প্রমিলা সরকার ছিলেন। প্রদীপর সরকার তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ভারতে রয়েছেন। প্রমিলা সরকার বললেন, গেট ভাঙার চেষ্টা করে পারেনি। ব্যালকনিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন বেশি ছড়ায়নি। একপর্যায়ে তারা ব্যালকনির দরজা ভেঙে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। তাদের বাড়িতে সমাজের অনুষ্ঠানের যত জিনিসপত্র ছিল, সব হামলাকারীরা লুট করে নিয়ে যায়।
গৌচন্দ্র ও চিন্ময় সরকারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, হামলাকারীরা গেট ভাঙার চেষ্টা করেছে। স্টিলে পাতের গেটে হামলার চিহ্ন রয়েছে।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। ততক্ষণে আব্দুর রহমানের বাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। আর প্রদীপ মাস্টারের বাড়ির বারান্দার আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিল। সেটা সেভাবে জ্বলেনি। তাঁরা নিজেদের মতো করে তদন্ত করছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র রহম ন র জ ন সপত র ল ট কর আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।
সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’
সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’