কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান ৩৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ, অর্থ পাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিষয়ে এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। সেগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। অনুসন্ধানে কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর (এস কে সুর) ব্যক্তিগত লকার খুলে ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকার অর্থসম্পদ পায় দুদক। ঢাকায় তাঁর বাসায় তল্লাশিকালে ১৬ লাখের বেশি টাকা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখা গোপন লকারের তথ্য পায় সংস্থাটি। এরই সূত্র ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা (কয়েন) ভল্টে অন্য কর্মকর্তাদের লকার খোলার ব্যাপারে আদালতের অনুমতি নিয়েছে দদুক।

আজ রোববার ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের উপস্থিতিতে দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশেষ টিমের সদস্যরা লকারগুলো খুলবেন। পরে লকারের অর্থসম্পদের তালিকা করে দুদকের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালতকে জানানো হবে।

আদালত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষণ করা লকার খোলার অনুমতি দেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কর্মকর্তাদের একাংশ লকার খোলার বিপক্ষে মতামত দিয়েছে। অবশ্য অন্য অংশ চাচ্ছে, কর্মকর্তারা অতীতে অপকর্ম করে থাকলে, তা প্রকাশ পাক।

দুদক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক দুই গভর্নর ড.

আতিউর রহমান ও মো. আবদুর রউফ তালুকদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে। সংস্থার আতশি কাচে রয়েছেন ডেপুটি গভর্নর মোছা. নুরুন্নাহার, ড. হাবিবুর রহমান, কাজী সাইদুর রহমান, উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের, নির্বাহী পরিচালক ড. সায়েরা ইউনুস, পরিচালক ইমাম আবু সাঈদ, পরিচালক (এফপিআইবি) সরোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক আবদুর রউফ, মঞ্জুর হোসেন খান, মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম পরিচালক সুনির্বাণ বড়ুয়া, জোবায়ের হোসেন, নিক তালুকদার, রুবেল চৌধুরী, লেলিন আজাদ পলাশ, উপমহাব্যবস্থাপক তরুণ কান্তি ঘোষ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ ফেরদৌস কবির, পদস্থ কর্মকর্তা এ বি এম মোবারক হোসেন, উপপরিচালক হামিদুল আলম সখা, সহকারী পরিচালক মো. কাদের ও সহকারী ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন।

দুদকের তালিকায় সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, খুরশিদ আলম, সাবেক পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ, সাবেক উপপরিচালক মোফাজ্জল হোসেন, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বরখাস্ত) সিকদার লিয়াকত ছাড়াও বিএফআইইউর তিন অতিরিক্ত পরিচালক, দুই যুগ্ম পরিচালক ও এক উপপরিচালক রয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান কর্মকর্তা মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি গত বছর ৫ আগস্টের পর ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভ ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, সেসব আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক। ২০০৬ সাল থেকে যেসব কর্মকর্তা বিএফআইইউতে কর্মরত ছিলেন বা এখনও আছেন, তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ সম্পদ অর্জন, জালিয়াতি করে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, প্রতারণার মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে টাকা আত্মসাৎ, রিজার্ভের অর্থে গঠিত তহবিল তছরুপের অভিযোগও অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি। ফলে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে লকার রয়েছে, তারা চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নরসিংদীতে চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে কলেজছাত্র নিহত

নরসিংদীর রায়পুরায় তিতাস কমিউটার ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মো. রওনক (১৭) নামের এক কলেজশিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রায়পুরার পলাশতলী ইউনিয়নের আশারামপুর এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।

নিহত মো. রওনক রায়পুরা সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সে উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামের মইনুল হোসেনের ছেলে।

রেলওয়ে পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত ব্যক্তির স্বজন সূত্র জানায়, মুঠোফোনের ব্যাটারি মেরামত করতে গতকাল দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নরসিংদী শহরের উদ্দেশে রওনা হয় রওনক। বেলা সাড়ে তিনটায় মেথিকান্দা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকাগামী তিতাস কমিউটারের ছাদে চেপে বসে। যাত্রাবিরতি শেষে ট্রেনটি আবার যাত্রা শুরুর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে যায় রওনক। রেললাইনের পাথরে আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে তাঁর লাশ রেললাইন থেকে সরিয়ে আনে ও ঘটনাটি নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে জানান। খবর পেয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মো. জহুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করেন। এরই মধ্যে তাঁর স্বজনেরা ঘটনাস্থলে এসে লাশ শনাক্ত করেন।

নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ঢাকাগামী তিতাস কমিউটার ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য আব্দুস সাত্তার কারাগারে
  • দুদকের মামলায় যশোর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুস সাত্তার কারাগারে
  • প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় স্কুলছাত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, যুবক গ্রেপ্তার
  • নরসিংদীতে চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে কলেজছাত্র নিহত