Prothomalo:
2025-07-31@07:25:11 GMT

বোতলজাত সয়াবিন উধাওয়ের পথে

Published: 9th, February 2025 GMT

চট্টগ্রাম নগরের বড় বাজারগুলোর একটি বহদ্দারহাট। সেই বাজারে পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে অন্তত ৩০টি দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়। গতকাল শনিবার এসব দোকান ঘুরে শুধু একটিতে সয়াবিন তেল পাওয়া গেল। তা–ও দুটি পাঁচ লিটারের বোতল।

ঢাকার চিত্র মোটামুটি একই। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে সব মুদিদোকানেই বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়, সেখানে এখন সয়াবিন তেল খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে। বড় দোকান থেকে পাঁচ লিটারের বোতল নিলে সাধারণত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) থেকে কিছুটা ছাড় পাওয়া যেত। এখন দিতে হচ্ছে নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি। অনেক ক্ষেত্রে তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য করছেন দোকানদার। অন্যদিকে বাড়তি চাহিদার সুযোগে খোলা তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া হাউজিং কাঁচাবাজার থেকে গতকাল দুপুরে পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল কিনতে যান মাহফুজুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দোকানদার তাঁকে যে ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল দিচ্ছিলেন, সেই ব্র্যান্ডের তিন কেজি সুগন্ধি চালও নিতে হবে বলে শর্ত দেন। তিনি তেল নেননি।

সয়াবিন বীজের আমদানিও বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে তিন লাখ টন, যা গত এক বছরে এত বেশি সয়াবিন বীজ আমদানির রেকর্ড নেই।

সংসারে অতি জরুরি নিত্যপণ্যের একটি ভোজ্যতেল। নগরের বেশির ভাগ মানুষ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল কেনেন। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে বছরে প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে, যার বড় অংশ আমদানি করে মেটানো হয়। দেশীয় বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ও বীজ আমদানি করে তা থেকে তেল উৎপাদন করে বাজারে ছাড়ে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি। সয়াবিন বীজের আমদানিও বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে তিন লাখ টন, যা গত এক বছরে এত বেশি সয়াবিন বীজ আমদানির রেকর্ড নেই।

তারপরও কেন বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না, জানতে চাইলে ভোজ্যতেল সরবরাহকারী শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বাজারে তেল সরবরাহ করছি। প্রতিদিন যা সরবরাহ করছি, তা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও মনিটরিং সেলকে জানাচ্ছি। কিন্তু সরবরাহ সংকট কেন, তা বলতে পারব না।’

ভোজ্যতেলের বাজারের আরেক শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপমহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, শীতের শেষ দিকে সয়াবিন তেলের চাহিদা কমার কথা। এখন তো সরবরাহে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।

ভোজ্যতেলের বাজারে আটটির মতো আমদানি, পরিশোধন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সক্রিয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সবার সরবরাহ স্বাভাবিক নয়। অনেকেরই ঘাটতি আছে বলে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। অন্যরা তার সুযোগ দিচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ট্যারিফ কমিশন কোম্পানিগুলোর কাছে সরবরাহের তথ্য চেয়েছে। শিগগিরই তাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে। বাণিজ্যসচিবের দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, বোতলজাত তেলের সরবরাহ সংকটের বিষয়টি তাঁদের জানা। আজ রোববার একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।

আমরা নিয়মিত বাজারে তেল সরবরাহ করছি। প্রতিদিন যা সরবরাহ করছি, তা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও মনিটরিং সেলকে জানাচ্ছি। কিন্তু সরবরাহ সংকট কেন, তা বলতে পারব না।সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা

অবশ্য বোতলজাত তেলের এই সংকট গত দু-চার দিনের নয়, গত প্রায় চার মাস ধরে চলছে। নভেম্বরে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এরপর সরকার সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমায়। তারপরও সংকট না কাটায় গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়। তাতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৭৫ টাকা।

রাজধানীর কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও হাতিরপুল বাজার এবং চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ও খাতুনগঞ্জ বাজারে খোঁজ নিয়ে গতকাল জানা যায়, এসব বাজারের বেশির ভাগ দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খোকন জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মো.

হুমায়ুন কবির বলেন, গতকাল তিনি পাইকারি দোকান থেকে পাঁচ লিটারের পাঁচটি বোতল কিনেছেন। এসব বোতলের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৮৫০ টাকা। তিনি কিনেছেন ৮৬০ টাকায় এবং বিক্রি করেছেন ৮৬৫-৮৭০ টাকা করে।

হুমায়ুন বলেন, ‘এখন শুধু পরিচিতদের কাছে বেশি দামে কেনা সয়াবিন তেল বিক্রি করি। না হলে ক্রেতাদের সঙ্গে বাড়তি দাম নিয়ে অযথা তর্ক হয়।’

বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ৬১ ডলারে, যা গত নভেম্বরের চেয়ে ১০০ ডলারের মতো কম। যদিও বাংলাদেশে দাম বাড়ছে। বোতলজাত তেল না থাকায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম এক সপ্তাহে লিটারপ্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এ তথ্য জানিয়ে বলছে, এখন খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৮০-১৮২ টাকা।

ঢাকার মৌলভীবাজারের ভোজ্যতেলের পাইকারি বিক্রেতা আবুল হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোম্পানিগুলো আমাদের জানিয়েছে, এক মাসের মধ্যে সরবরাহ ঠিক হবে। তবে রমজান মাস আসার আগে সংকট না কাটলে আমরা পরিস্থিতি কোনোভাবে সামাল দিতে পারব না।’

এখন শুধু পরিচিতদের কাছে বেশি দামে কেনা সয়াবিন তেল বিক্রি করি। না হলে ক্রেতাদের সঙ্গে বাড়তি দাম নিয়ে অযথা তর্ক হয়।বিক্রেতা মো. হুমায়ুন কবির

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরবর হ করছ ভ জ যত ল র সরবর হ স গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।

ঢাকা/হাসনাত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়
  • ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে জয় হচ্ছে বোয়িংয়ের
  • বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি অসম্ভব উদ্বেগের জায়গায় যাচ্ছে