এশিয়ার বাজারে এলএনজির দাম দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ
Published: 9th, February 2025 GMT
এশিয়ার দেশগুলোতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) যথেষ্ট মজুত থাকলেও স্পট মার্কেটে দাম দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ইউরোপের বাজারে এলএনজির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব এশিয়ার বাজারেও পড়েছে।
উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় মার্চ মাসের সরবরাহের চুক্তির ক্ষেত্রে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির গড় মূল্য গত সপ্তাহে ছিল ১৪ ডলার ৯০ সেন্ট, যা ডিসেম্বরের শুরুর পর সর্বোচ্চ। তার আগের সপ্তাহে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ছিল ১৩ ডলার ৮০ সেন্ট। খবর বিজনেস রেকর্ডার।
ইউরোপের বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম গত সপ্তাহে ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, শীতকালে এমনিতে এলএনজির ব্যবহার বাড়ে। সেই সঙ্গে মজুত কমে যাওয়ার কারণেও এলএনজির দাম বেড়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলেন, ইউরোপে এখনো এলএনজি কেনাবেচা বাড়ছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ইউরোপে ঠান্ডা বেশি পড়া এবং গত দুই সপ্তাহে মজুত থেকে ব্যবহার বাড়ছে, আগামী দুই সপ্তাহ এই ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে। তাই মজুত পূরণে ভবিষ্যতে আমদানি বাড়াতে পারে দেশগুলো।
কেপলারের এলএনজি অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস অ্যানালিস্ট গো কাতায়ামা বলেন, তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার দুটি প্রকল্প থেকে সরবরাহ ব্যাহত কারণে চলতি সপ্তাহে এলএনজির দাম বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পর্যাপ্ত মজুত আছে। এ ছাড়া পূর্বাভাস অনুযায়ী মার্চে স্বাভাবিকের তুলনায় তাপমাত্রা বেশি থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটস গত বৃহস্পতিবার মার্চ মাসে সরবরাহ হবে, এই চুক্তিতে নর্থওয়েস্ট ইউরোপ এলএনজি মার্কার (এনডব্লিউএম) বাজার মানদণ্ডে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম নির্ধারণ করেছে ১৫ ডলার ৯৬ সেন্টে। এ ছাড়া একই মাসের সরবরাহ চুক্তিতে টিটিএফে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজিতে ৫৫ সেন্ট ছাড় দেওয়া হয়েছে।
আরগাস প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির মূল্য নির্ধারণ করেছে ১৬ ডলার ৯ সেন্ট। অন্যদিকে স্পার্ক কমোডিটিজ ফেব্রুয়ারির সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম নির্ধারণ করেছে প্রায় ১৬ ডলার।
ব্রেইনচাইল্ড কমোডিটি ইন্টেলিজেন্সের বাজার বিশ্লেষক ক্লাস ডোজেম্যান বলেন, এশীয়ার বাজার এখনো শিথিল বলেই মনে হচ্ছে। চীনা ব্যবসায়ীরা চান্দ্র নববর্ষের কারণে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত বেচাকেনা করবেন না। এ ছাড়া এশিয়ার দেশগুলোতে ঠান্ডা আবহাওয়া আরও কিছুদিন থাকতে পারে, মজুতও আছে পর্যাপ্ত।
এদিকে এলএনজি পরিবহন ব্যয় এখনো রেকর্ড পরিমাণ কম। স্পার্ক কমোডিটিজের বিশ্লেষক কাসিম আফগান জানান, গত শুক্রবার আটলান্টিক মহাসাগর পথে এলএনজির পরিবহন ব্যয় কমে দৈনিক ৩ হাজার ৭৫০ ডলারে নেমে এসেছে। প্রশান্ত মহাসাগর পথে তা কমে দৈনিক ৯ হাজার ৭৫০ ডলারে নেমে এসেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এলএনজ র দ ম সরবর হ কম ড ট ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪