চলতি বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন মেহেদী হাসান খান। তিনি অভ্র কি–বোর্ডের কারিগর হিসেবে পরিচিত। এই কি–বোর্ড তৈরি করতে গিয়ে তাঁর ও সহযোগীদের পথচলা তুলে ধরেছেন মেহেদী হাসান। বলেছেন, এই পথচলায় স্বার্থহীন মানুষ যুক্ত ছিলেন বলে স্বার্থপর লোকজন তাঁদের আটকাতে পারেননি।

আজ রোববার অভ্র কি–বোর্ডের ফেসবুক পেজে এ কথা বলেছেন মেহেদী হাসান। এর আগে আজ সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে জানান, অভ্র তৈরিতে ভূমিকা রাখা তিন বন্ধু রিফাত নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম ও শাবাব মুস্তাফাকে ছাড়া পুরস্কার নিতে চাননি মেহেদী হাসান। তাই চারজনকেই দলগতভাবে একুশে পদকে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অভ্র কি–বোর্ডের শুরুর দিকের কথা তুলে ধরতে গিয়ে ফেসবুকে মেহেদী হাসান খান লেখেন, ‘২০০৩ সালে যখন অভ্রর কাজ শুরু করলাম, তখন অভ্র বা আমাকে কেউই চিনত না। একটা ফোরাম বানালাম মানুষের টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান দেওয়ার জন্য। ইউনিকোডের ব্যবহার তখনো নতুন, হাজারটা সমস্যা। ধীরে ধীরে মানুষ জমতে শুরু করল অনলাইন ফোরামে। তাঁরা সমস্যা নিয়ে আসেন, আমি সমাধান বের করার চেষ্টা করি অথবা বাগ (ত্রুটি) থাকলে ঠিক করে নতুন রিলিজ দিই। কিছু মানুষ, আমি যাদের চিনি না, তারাও আমাকে চেনে না, এরা শুধু সমস্যা নিয়ে আসার বদলে ধীরে ধীরে বাকিদের সমস্যা সমাধানে আমার সঙ্গে যোগ দেওয়া শুরু করল। একসময় অনলাইন ফোরামের বাইরে এদের সঙ্গে দেখা করলাম। সবাই ছাত্র তখন আমরা। কোনো কারণে অভ্রর মিশনটায় তারা বিশ্বাস করেছে, এর বাইরে আর কোনো চাওয়া–পাওয়া নেই তাদের।’

মেহেদী হাসান লেখেন, ‘ফোরাম থেকে শুরু হয়ে বাংলা ফন্ট বানানো, সফটওয়্যার বানানো, সবকিছু একসঙ্গে করলাম আমরা। বিভিন্ন সময়ে এ রকম অবদান রাখা অনেকে এসেছেন, চলেও গিয়েছেন নানা কারণে। কিন্তু কোনো কারণে হাতে গোনা কয়েকজন লেগে থাকলাম আমরা বছর দশকের ওপর। স্বার্থহীন এমন মানুষজন একসঙ্গে ছিল দেখে স্বার্থপর লোকজন চেষ্টা করেও আমাদের আটকাতে পারেনি।’

আরও পড়ুনএকুশে পদক পাচ্ছেন ১৪ বিশিষ্টজন ও জাতীয় নারী ফুটবল দল০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

একুশে পদক প্রসঙ্গে মেহেদী হাসান খান বলেন, ‘আমি সবাইকে খুশি করতে পারব না। কিন্তু দলের কাজের কৃতিত্ব একক ব্যক্তি না পাক, আমার সামর্থ্য দিয়ে এটুকু চেষ্টা করতে পারি। একুশে পদক ঘোষণার পরে অ্যাডভাইজার (উপদেষ্টা) ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হলো। ওনাকে ব্যাপারটা বোঝাতে খুব বেশি চেষ্টা করতে হয়নি, সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ২০০৩ সাল থেকে অনেকে অভ্র কাজে সাহায্য করেছেন, এদের সবার অবদান আছে। কিন্তু শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত আমরা যারা একসঙ্গে কাজ করেছি—রিফাত, সিয়াম, শাবাব, এদের ছাড়া আমি অভ্রর নামে একুশে পদক গ্রহণ করতে পারব না। উনি মেনে নিয়েছেন, বাকিদেরও রাজি করিয়েছেন। ওনাদের কথা ছিল, পদক গ্রহণ করা বা না করার কথা পরে, রাষ্ট্রের কাজ জানানো যে আপনাদের কাজের জন্য রাষ্ট্র কৃতজ্ঞ। তাঁরা তাই করেছেন। আমিও মেনে নিয়েছি। পরের প্রজন্মের জন্য অভ্রর মিশনটা যদি রেখে যেতে হয়, সঙ্গে আমাদের টিমওয়ার্কটাও উদাহরণ হিসেবে থাকুক। একা একা তো বেশি দূর যাওয়া যায় না।’

আরও পড়ুনমেহেদী হাসানের সঙ্গে অভ্রর জন্য একুশে পদক পাচ্ছেন আরও ৩ জন২ ঘণ্টা আগে

এবার বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকেও একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মেহেদী হাসান বলেন, ‘ভালো হলো শেষমেশ। ওনারা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকেও পদক দিচ্ছেন। দলকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই সংস্কৃতি চালু থাকুক। অভ্রর জন্য একুশে পদকের দাবি নিয়ে অনেকে অনেক বছর ধরে অনলাইনে ক্যাম্পেইন (প্রচার) করছেন, আপনাদের দাবি পূরণ হলো।’

আরও পড়ুননারী ফুটবলের টালমাটাল সময়ে এল একুশে পদক০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য সমস য ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।

আরো পড়ুন:

নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি

শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 

এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”

খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”

পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”

প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”

তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”

গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।

শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।

ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের কাছে তেল বিক্রি করতে পারে পাকিস্তান, খোঁচা দিলেন ট্রাম্প
  • কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোর ডিনার, গুঞ্জন
  • শিক্ষার্থী সাজিদ স্মরণে ইবিতে ব্যতিক্রমী আয়োজন
  • ৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী