রূপায়ণ টাউনে চাঁদার অভিযোগ করতে গিয়ে উল্টো ফেঁসে গেলো আজমেরীর ক্যাডার রাজ
Published: 10th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভুইগড়ে চাঁদাবাজি অভিযোগ করতে গিয়ে উল্টো ফেঁসে গেলেন আজমেরী ওসমানের ক্যাডার এম এ হুসাইন রাজ। তথ্যমতে, বিগত আওয়ামী শাসনামলে ওসমান পরিবার শীর্ষ ক্যাডার আজমেরী ওসমানের ক্যাশিয়ার গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আত্মগোপনে ছিল।
গত জানুয়ারি ২০২৫ এ উক্ত ব্যক্তি রূপায়ণ টাউনে এম এ হুসাইন রাজের সেলটারে তার ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া হিসেবে অবস্থান নেয়। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সে খবর জানাজানি হলে রাজ কৌশলে উক্ত ভাড়াটিয়াকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। এরো পূর্বে উক্ত ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে কাজ করে দেয়ার নাম করে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণে টাকা হাতিয়ে নেয়।
সে সকল পাওনাদাররা উক্ত ব্যক্তির তথ্য পেয়ে তার বাড়ি মালামাল আটকাতে চাইলে তাতেও বাধা প্রদান করে রাজ। এরূপ পরিস্থিতিতে লিটন সহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের হস্তক্ষেপে এর সমাধানের চেষ্টা করা হলে রাজের সাথে লিটনের কথা কাটাকাটি হয়। সে সময় রাজ তাদের দেখে নেবে বলে হুমকি প্রদান করে।
ঘটনা তদন্তে জানা যায়, বিগত আওয়ামী শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ নিজামসহ মেম্বার আল মামুন মিন্টু যুবলীগ নেতা সাব্বির আহমেদ জুলহাসসহ তাদের পালিত বাহিনী রূপায়ণ টাউন নিয়ন্ত্রণ করত এবং তাদের নেতৃত্বে রূপায়ণ ভুইঘর মামুদপুর সহ আশেপাশের এলাকায় মাদক বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো।
অবৈধ কাজের থেকে অর্জিত টাকার একটি ভাগও পেতো রাজ। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে চলে গেলে খোলস পাল্টে এখন ছাত্র সমন্বয়ক সাজার চেষ্টায় এবং পুনরায় রূপায়ণকে নিজের কব্জা কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় রাজ লিপ্ত। এছাড়াও রাজএর রূপায়নের অফিসে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেক কাটা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
তার হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে বাধা প্রদান করাতেই সে লিটন সহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনের নামে থানায় একটি হয়রানি মূলক মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। উল্লেখ্য গত ২৩ জুলাই লিটনকে নাশকতার মামলায় ষড়যন্ত্র করে গ্রেফতার করা হয় এবং ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে ৬ আগষ্ট মুক্তি পান লিটন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মাজিদুল ইসলাম জানান, ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন সাজসহ আশেপাশের লোকজনের দেয়া তথ্য মতে অভিযোগের উল্লেখিত তথ্য ও মিথ্যা বলে জানান স্থানীয়রা।
সেই সাথে সাজ্জাদ ওপেন চ্যালেঞ্জ করে বলেন, এধরনের কোন তথ্য বা অভিযোগের সম্পর্কে কেউ কোনরূপ সত্যতার প্রমাণ দিতে পারবে না তাছাড়া লিটন বা নিজ নাম সহ অন্যান্যদের নামে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছেও এই ধরনের কোন অভিযোগ নাই বলে ওপেন চ্যালেঞ্জ করেন সাজ।
স্থানীয়রা জানান, তোফায়েল হোসেন লিটন অত্যন্ত ভদ্র, সামাজিক ও অর্থবিত্ত সম্পন্ন সম্ভ্রান্ত লোক। তার নামে এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ এবং চাঁদাবাজির মত নোংরা ঘটনা একেবারেই অসম্ভব। এই ধরনের নোংরা ও অপবাদ মূলক অভিযোগের নিন্দা জানার স্থানীয়রা।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।