নদী নিয়ে শহীদ আবরারের স্বপ্ন কি বাস্তবায়িত হবে
Published: 12th, February 2025 GMT
আজ শহীদ আবরারের জন্মদিন। আমাদের এই ছোট ভাইটি ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধঘোষিত) নৃশংস নির্যাতনে শহীদ হয়েছিল। ফেনী নদীর পানি ভারতের উত্তোলনের বিরোধিতা করে ফেসবুকে সে একটি পোস্ট দিয়েছিল, সেটিই তার জন্য কাল হয়েছিল।
আমরা প্রতিবেশীদের জন্য দারুণ ভালো দেশ। উজানের পানিও তারা নিয়ে যাবে, আবার একমাত্র যে নদী বাংলাদেশ থেকে উৎপত্তি হয়েছে, তার পানিও আমরা দিয়ে দিই। ফলাফল, আমাদের এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রতিবছর খরায় গড়ে ক্ষতি ২ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা (কালের কণ্ঠ, ১৬ নভেম্বর ২০২২) এবং বন্যায় গড়ে প্রতিবছর ক্ষতি হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা (জাগো নিউজ টোয়েন্টিফোর, ২৮ জুন ২০২২)। প্রাণহানির কথা তো বাদই দিলাম।
সেই ফেনী নদীর চুক্তি আজও বাতিল হতে দেখলাম না। অবশ্য ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী কোনো চুক্তিই এখনো বাতিল হয়নি। এমনকি সবার সামনে প্রকাশ করাও হয়নি। এই সরকার কাদের বাঁচানোর জন্য এই চুক্তি লুকিয়ে রেখেছে?
এটা তো গেল দেশবিরোধী চুক্তির কথা, আমাদের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কি ছয় মাসে এমন কোনো কাজ করেছে, যা নদীবান্ধব হিসেবে বিবেচিত হবে? আমি অনেক খুঁজেও কোনো নতুন নদী খনন প্রকল্প দেখতে পেলাম না। খাল পুনঃখনন কিছুদিন আগে শুরু হলো, তা শুধু ঢাকার জন্য। গোটা দেশে বিভিন্ন জেলায় নদী ও খাল পুনরুদ্ধার করা হবে বলে শুনে আসছি। কিন্তু তা কখন শুরু হবে? আগের সরকার তো নদী ও খালখেকো ছিল, এখনকার সরকার কী করছে? যদি কোনো সরকারি কর্মচারীর জন্য কাজ আটকে থাকে, তাঁদের কেন রাখা হয়েছে? আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অজুহাত আর কত শুনতে হবে আমাদের?
ভারতের সঙ্গে অভিন্ন ৫৪টি নদীর ৫৩টিতেই বাঁধ দেওয়া হয়ে গেছে। আরও নতুন নতুন বাঁধের প্রকল্প নিতে যাচ্ছে ভারত। দেশটির ন্যাশনাল রিভার লিংকিং প্রজেক্টের (এনআরএলপি) আওতায় ৯ হাজার ৬০০ কিলোমিটার খাল খননের মাধ্যমে নিজ সীমানার ৪৪টি নদীকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। আমরা নিজেদের আত্মরক্ষায় কী করছি?
১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত আন্তর্জাতিক জলপ্রবাহ-সংক্রান্ত কনভেনশনে আমরা এখনো স্বাক্ষর করিনি। এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকে তাদের আমরা বলে এসেছি এই কনভেনশনে স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ আমরা এখন পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না।
কয়েক কোটি মানুষ আজ ভারতের নদীনীতি ও আমাদের নদী অব্যবস্থাপনার ভুক্তভোগী। নদীভাঙা মানুষের চাপ সইতে হচ্ছে বড় শহরগুলোকে। অথচ একসময় জমিজিরাত ও ঘরবাড়ি নিয়ে তাদের সুখের সংসার ছিল। নদী নিয়ে কার্যকর সমাধানে আসতেই হবে। এ সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। যত দিন যাবে, তত দেরি হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বড় বড় সংকটও তৈরি হয়ে গেছে। আমরা হয়তো শহীদ আবরারকে স্মরণ করে যাব, কিন্তু নদী নিয়ে তার স্বপ্ন পূরণে কবে সচেষ্ট হব?এই কনভেনশনে স্বাক্ষর না করার কারণে আমরা আমাদের বিভিন্ন ক্ষতিপূরণ দাবিও করতে পারি না। সামনে আরেকটি বর্ষা আসছে, আবারও বন্যায় ডুববে দেশের অনেক এলাকা। একবার নয়, কয়েকবার করে ডুববে। কিন্তু আমাদের সরকার এর জন্য কী করছে?
এই ছয় মাসে যৌথ নদী কমিশনের কোনো বৈঠক কি হয়েছে? নদী কমিশন কি পুনর্গঠিত হয়েছে? আমরা কি আমাদের চাওয়া তাদের জানিয়েছি? পত্রিকায় এ–সংক্রান্ত কিছু দেখিনি।
কয়েক দিন আগে প্রথম আলোয় তিস্তার নদী ভাঙন প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো। আমরা জানতে পারলাম, তিস্তা মহাপরিকল্পনার মুলা ঝুলিয়ে এখানে কোনো কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। বাস্তবতা হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো সমীক্ষাও হয়নি। কিন্তু চীন এখনো সেখানে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু সে ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা কী, তা আমরা এখনো জানি না।
দক্ষিণবঙ্গের মানুষের বহুদিনের দাবি গঙ্গা ব্যারাজ। যার সমীক্ষা থেকে শুরু করে সবকিছু হয়ে আছে। শুরু করাটা এখন শুধু বাকি। যখন বন্যা হবে, আবারও এই বাঁধের কথা উঠবে, মানুষ নতুন নতুন ফর্মুলা দিয়ে পানি ঠেকানোর কথা বলবে। কিন্তু যে প্রজেক্ট ১৯৮০ সালেই আমরা নিয়ে রেখেছিলাম, তার বাস্তবায়নের কোনো কথা উঠে আসবে না।
আবরার ফাহাদ অল্প বয়সেই নদী নিয়ে আমাদের অধিকার ও অব্যবস্থাপনার কথা বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু আমাদের উপদেষ্টা বা আমলারা তা বুঝতে পারছেন না। বুঝলেও চোখ বন্ধ করে রেখেছেন।
দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের কোনো রাজনৈতিক দলের চিন্তাভাবনাতেও নদী নিয়ে পরিকল্পনা নেই। অথচ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাই আছে যে শুধু সুপেয় পানির জন্যই আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে আমরা নিজেদের অক্ষমতার এবং লোভের কারণে দেশকে মরুভূমির দিকে ঠেলে দিচ্ছি।
কয়েক কোটি মানুষ আজ ভারতের নদীনীতি ও আমাদের নদী অব্যবস্থাপনার ভুক্তভোগী। নদীভাঙা মানুষের চাপ সইতে হচ্ছে বড় শহরগুলোকে। অথচ একসময় জমিজিরাত ও ঘরবাড়ি নিয়ে তাদের সুখের সংসার ছিল। নদী নিয়ে কার্যকর সমাধানে আসতেই হবে। এ সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। যত দিন যাবে, তত দেরি হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বড় বড় সংকটও তৈরি হয়ে গেছে। আমরা হয়তো শহীদ আবরারকে স্মরণ করে যাব, কিন্তু নদী নিয়ে তার স্বপ্ন পূরণে কবে সচেষ্ট হব?
সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট।
ই–মেইল: [email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।