রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনঃখননের উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দুর্বলতা প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। মিরপুরের বাউনিয়া খালের বাস্তবতা তারই একটি উদাহরণ। এই খাল পুনঃখননে নানা অব্যবস্থাপনা দেখা যাচ্ছে।
পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা খননের মূল উদ্দেশ্য হলেও বাউনিয়া খালের ক্ষেত্রে খনন করা মাটি খালের মধ্যেই স্তূপ করে ফেলে রাখতে দেখা যাচ্ছে। এতে প্রকল্পের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, কারণ বৃষ্টি হলেই এই মাটি আবার খালে গিয়ে পড়বে এবং খাল আগের অবস্থায়ই ফিরে যাবে।
এই প্রকল্পে দেখা যাচ্ছে, মাটি অপসারণের জন্য কোনো বিকল্প স্থান নির্ধারণ করা হয়নি এবং সময়মতো পন্টুন ব্যবহার করাও সম্ভব হচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, এক পাশ গভীর করার পর পন্টুন ব্যবহার করে মাটি সরানো হবে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতির এবং তত দিনে বৃষ্টির কারণে আবার মাটি খালে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
খালের পাশে বসবাসকারীরা খনন করা মাটি নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন। এটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে পরিকল্পিতভাবে মাটি অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। খননকাজের সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট স্থানে মাটি স্থানান্তরের কার্যকর উদ্যোগও প্রয়োজন। যদি পানি কম থাকায় পন্টুন ব্যবহার সম্ভব না হয়, তবে অন্যান্য পরিবহনব্যবস্থা ব্যবহার করে দ্রুত মাটি সরানোর বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
এই প্রকল্পকে কার্যকর করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে তদারকি নিশ্চিত করতে হবে এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর কঠোর নজরদারি রাখতে হবে, যাতে তারা সময়মতো কাজ শেষ করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করা ও খালের পাশে মাটি স্তূপ না করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়াও জরুরি।
ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য খাল সংস্কার অপরিহার্য। তবে সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অভাবে তা অপচয়ে পরিণত হতে পারে। বাউনিয়া খালের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে অবিলম্বে রাজধানীর অন্যান্য খালের খনন প্রকল্পে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এতে প্রকল্পগুলো সফল হবে এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য খাল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ আরও সুচারুভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ছুটি না পেয়ে অসুস্থ শ্রমিকের মৃত্যু, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুর এলাকায় লারিজ ফ্যাশনের পোশাক কারখানায় অসুস্থ হয়ে রিনা আক্তার (৩২) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে তারা মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, রিনা আক্তার অসুস্থ অবস্থায় কারখানায় কাজ করছিলেন। রোববার তিনি বেশি অসুস্থতা অনুভব করলে ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। তবে, কর্তৃপক্ষ ওই শ্রমিকের আবেদনে সাড়া না দিয়ে কাজ করতে বাধ্য করেন। ওই নারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে সহকর্মীরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অবরোধকারী শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য মালিকপক্ষ দায়ী। রিনা অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন তিনি।
লারিজ ফ্যাশনের মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তাদেরকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে লারিজ ফ্যাশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শিমুল বলেছেন, আমাদের একজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয়। এতে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেছেন, সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য গার্মেন্টস মালিকপক্ষ দায়ী, এমন অভিযোগ করে শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও আছে। শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে গেছেন। যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
ঢাকা/অনিক/রফিক