তোমার হলো শুরু, আমার হলো সারা! ওমর মারমুশকে এই কথা গুলোই এখন বলতে পারেন লিভারপুলের মিশরীয় তারকা মোহাম্মদ সালাহ। অলরেডদের সঙ্গে সামনের জুন পর্যন্ত চুক্তি আছে সালাহর। ধারণা করা হচ্ছে এরপর সৌদি প্রো লিগে পাড়ি জমাবেন এই ৩২ বছর বয়সী উইঙ্গার। সেক্ষেত্রে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে (ইপিএল) শেষ ৮ বছরের মিশরীয় রাজত্ব শেষ হয়ে যেত। তবে ইপিএলে তৃতীয় ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে নিজের জাত চেনালেন মারমুশ।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) ইপিএলে উড়তে থাকা নিউক্যাসলকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে ম্যানচেস্টার সিটি। মাত্র ১৪ মিনিটের মধ্যে তিন গোল করে দলের জয়ে অসামান্য ভূমিকা রাখেন মারমুশ।
ঘরের মাঠ ইতিহাদে এদিন ছয়টি পরিবর্তন এনে প্রথম একাদশ সাজান পেপ গার্দিওলা। বের্নার্ডো সিলভা ও কেভিন ডি ব্রুইনার মতো অভিজ্ঞদের স্থান হয়েছিল বেঞ্চে। তবে ম্যাচের শুরু থেকেই সফরকারী নিউক্যাসলের ওপর দাপট ছিল সিটির।
আরো পড়ুন:
উড়তে থাকা বোর্নমাউথকে হারিয়েও অস্বস্তিতে লিভারপুল
সালাহর ‘একশর’ দিনে লিভারপুলের দাপুটে জয়
স্বাগতিক দর্শকরা উৎসবে মাতেন ১৯ মিনিটে। সিটির ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এডারসনের বাড়ানো বল হেড দিয়ে ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন ক্যাসল ডিফেন্ডার। দুরন্ত গতিতে গিয়ে বক্সের মুখ থেকে নেওয়া শটে মারমুশ নিজের গোলের খাতা খোলেন। এ নিয়ে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে গোলরক্ষক হিসেবে সর্বোচ্চ ৬ গোলে অ্যাসিস্ট করলেন এডারসন। পাঁচ মিনিট পরই মারমুশ দ্বিতীয় গোল পেয়ে যান ইলকাই গুন্দোয়ান। পাস থেকে। এরপর স্যাভিনিওর অ্যাসিস্টে ৩৩তম মিনিটে হ্যাটট্রিকও পূর্ণ করেন ২৬ বছর বয়সী এই মিশরীয়।
ম্যাচের ৮৪ মিনিটে আর্লিং হালান্ডের হেড থেকে গোল করে নিউক্যাসলের কফাইন শেষ পেরেকটা ঠুকে দেন জেমস ম্যাকাটি। এই জয়ে ২৫ ম্যাচে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে ইপিএল পয়েন্ট টেবিলের চারে অবস্থান করছে ম্যানসিটি। এক ম্যাচ কম খেলা লিভারপুল ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে। সমান ২৫ ম্যাচে ৫৩ ও ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে টেবিলের দুই ও তিনে রয়েছে আর্সেনাল ও নটিংহ্যাম ফরেস্ট।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।