নড়াইলে এক বৃদ্ধার বসতভিটা ভাঙচুর করে তাঁকে উচ্ছেদ করেছে প্রতিপক্ষ। স্বামীর ভিটা হারিয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। নিজ ভিটায় ফিরতে তাই ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে।  
ঘটনাটি নড়াইল সদরের চণ্ডিবরপুর ইউনিয়নের রতডাঙ্গা গ্রামের। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শুভা রানী বিশ্বাস ১২ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন একই গ্রামের মৃত গোবিন্দ অধিকারীর ছেলে শুসান অধিকারী ও সমীর অধিকারী। 
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শুসান ও তাঁর ভাই সমীর ভূমিহীন। ২০-২২ বছর আগে থেকে তারা শুভা রানীদের বাড়িতে থেকে তাদের জমিতে কাজকর্ম করতেন। কয়েক বছর আগে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বছরখানেক আগে শুভার স্বামী গৌর বিশ্বাস মারা যান। শুভার দুই সন্তান দেশে না থাকায় তিনি একাই ওই বাড়িতে থাকেন। ১২ ফেব্রুয়ারি শুসান ও সমীর হঠাৎ লোকজন নিয়ে তাঁর বাড়িতে এসে টিনের এক চালা ঘর ভেঙে ফেলেন। 
শুভা রানী জানান, বসতঘর ভাঙতে এলে তিনি বাধা দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা শোনেনি। পরে বাধ্য হয়ে ওই দিনই সদর থানায় অভিযোগ দিয়ে বাড়িতে ফিরে দেখেন ঘর ভেঙে ফেলে মেঝের মাটি পর্যন্ত কেটে নিয়ে গেছে তারা। ছয়-সাতটি ফলদ ও বনজ গাছ কেটে ফেলেছে। তারা তাঁর জমিতে ঘরের নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি পাশের এক বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, তাঁর স্বামী কাউকে জমি লিখে দিলে তিনি জানতেন। অভিযুক্তরা এ জমির জাল দলিল করায় তিনি চার বছর আগে আদালতে মামলা করেন। 
অভিযুক্ত শুসান অধিকারী বলেন, শুভার স্বামীর কাছ থেকে পাঁচ বছর আগে বাড়িসহ ৯ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি। তাঁকে জমিতে উঠতে না দেওয়ার জন্য তারা মিথ্যা মামলা করেছেন। আদালত তাঁকে জমিতে উঠতে নিষেধ করেননি। তাই তিনি শুভার বাড়ি ভেঙেছেন। 
নড়াইল সদর থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, এ জমি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। (আজ) বুধবার দু’পক্ষকে থানায় ডাকা করা হয়েছে। তাদের কাগজপত্র দেখে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ড় দখল

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ