শরীয়তপুর সদর উপজেলায় বিয়ের দাওয়াতকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কাজিকান্দি এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত সামসুল হক সরদারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিনোদপুর এলাকায় দুটি পক্ষের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। শুনেছি, দুই পক্ষের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। যেহেতু এটি পারিবারিক ঘটনা, তাই দু’পক্ষই থানায় এসেছেন। এখনও কোনো মামলা হয়নি, তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।’

পুলিশ, হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৮ ফেব্রুয়ারি ইমামুল হক সরদারের মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তিনি তাঁর ভাই আজিজুল সরদারের পরিবারকে দাওয়াত দেননি। প্রতিশোধ হিসেবে আজিজুল সরদারও তার ছেলের বিয়েতে ইমামুলের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানাননি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইমামুল সরদারের লোকজন দেশীয় অস্ত্র, রামদা, বাঁশ ও লাঠি নিয়ে আজিজুল সরদারের বাড়িতে হামলা চালায় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ জন শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, বাকিরা বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গুরুতর আহত সামসুল হক সরদারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি আহতরা হলেন- আব্দুর রহমান কাজী (৫০), ইউপি সদস্য, ৫ নম্বর ওয়ার্ড, বিনোদপুর ইউনিয়ন, মনোয়ার কাজী (৩২), সাবেক ইউপি সদস্য, বোরহান কাজী (৫০) আজিজুল সরদার (৫০)।

আজিজুল সরদারের পক্ষের আহত ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান কাজী বলেন, ‘এনামুল তাঁর মেয়ের বিয়েতে আমাদের দাওয়াত দেয়নি। কিন্তু আমরা তাদের দাওয়াত দিতে চেয়েছিলাম। তবুও তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’

তিনি বলেন, ‘এনামুল সরদার ও খলিল মাদবরের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন লোক আমাদের বাড়িতে হামলা চালায় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমাদের কয়েকজন কুপিয়ে-পিটিয়ে আহত করে।’

অন্যদিকে, এনামুল সরদারের বড় ভাই গুরুতর আহত সামসুল হক সরদার বলেন, ‘ওরা দু'জনই আমার ভাই। আমি কেন হামলা চালাব? আমি বিনোদপুরে ইউপি নির্বাচন করব, তাই এলাকায় গিয়েছিলাম। শুনতে পেলাম, আমার দুই ভাইয়ের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। তখন আমি থামাতে গেলে আমার ওপর হামলা হয়। আমার মাথা ও হাতে আঘাত লেগেছে। আমার পক্ষ থেকে কোনো হামলা চালানো হয়নি।’

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা.

আব্দুর রশিদ বলেন, ‘হাসপাতালে ৪ জন ভর্তি আছেন, বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। গুরুতর আহত সামসুল হক সরদারকে রাত ১১টা ১০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে। মাথা, পিঠ, পা ও হাতে বেশি আঘাত পেয়েছেন। সবারই রক্তক্ষরণ হয়েছে। মূলত ধারালো অস্ত্র, ভোতা অস্ত্র ও লাঠির আঘাতে আহতদের শরীরে জখমের চিহ্ন রয়েছে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এনামুল ও আজিজুলের মধ্যে জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধও রয়েছে, যা এই সংঘর্ষের একটি বড় কারণ হতে পারে।

পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ আহত ল সরদ র র আম দ র স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ
  • হতাহতের ছবি-ভিডিও সরাতে ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে রিট, আদেশ ৩ আগস্ট
  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ