মুখে মাস্ক, হাতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ মোটরসাইকেলে এসে টোল বক্সের ম্যানেজারকে গুলি
Published: 19th, February 2025 GMT
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বালুঘাটের টোল বক্সের ম্যানেজারকে গুলি করে টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিতে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের গড়াই নদের সৈয়দ মাছ উদ রুমী সেতুর নিচে এ ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তদের গুলি ও টাকা লুটের ৫ মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গুলিবিদ্ধ ম্যানেজার মো. সবুজ হোসেনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে আজ সকাল থেকে তাকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। তিনি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জগতি এলাকার শহিদুলের ছেলে। এ ঘটনার পর বালুঘাট বন্ধ রয়েছে। পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১১টার দিকে একদল অস্ত্রধারী হঠাৎ মোটরসাইকেলে করে গড়াই নদের সৈয়দ মাছ উদ রুমী সেতুর নিচে আসে। তাদের সবার হাতে অস্ত্র ছিল। তাদের দেখেই কয়েকজন পালিয়ে যায়। এসেই তারা সেখানকার শ্রমিকদের জিম্মি করে। এ সময় একটি ট্রাক টোল দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। ভয়ে এক ব্যক্তি ট্রাকে উঠে পড়ে। এরপর টোল বক্সের ক্যাশ থেকে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। সে সময় শ্রমিকরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ম্যানেজার সবুজের পায়ে গুলি করে টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা এলোপাতাড়ি কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে দ্রুত চলে যায়।
শ্রমিকরা বলেন, সবার কাছে অস্ত্র ছিল। প্রত্যেকেই মুখোশ পরা ছিল বলে কাউকেই চেনা যায়নি।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১০টা ৫২ মিনিটে কাশেমপুরের দিক থেকে ১১ সশস্ত্র মুখোশধারী গুলি ছুড়তে ছুড়তে সৈয়দ মাছ উদ রুমী সেতুর নিচ দিয়ে বালু ঘাটের টোল বক্সের দিকে আসছে। তাদের প্রত্যেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। এরপর টোল বক্সের সামনে থাকা শ্রমিক ও ম্যানেজার সবুজকে মারধর করতে দেখা যায়।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ মো.
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, বালুঘাটে দুর্বৃত্তদের গুলিতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ছিনতাই করার জন্য তারা এ ঘটনা ঘটায়। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ করেনি।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুন মাসে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা টেন্ডারের মাধ্যমে গড়াই নদের ড্রেজারকৃত বালু অপসারণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স প্রিয়াঙ্কা ব্রিকস। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বালু অপসারণের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।