রাউজানে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যুবলীগ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা
Published: 20th, February 2025 GMT
চট্টগ্রামের রাউজানে এক যুবলীগ কর্মীকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত। নিহত ওই যুবলীগ কর্মীর নাম মুহাম্মদ হাসান (৩৫)। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট বাজারের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
মুহাম্মদ হাসানের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। হাসানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ি জানিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে হাসান যুবলীগের মুহাম্মদ মোবারকের সহযোগী ছিলেন। ২০১৩ সালে মোবারককে একদল সন্ত্রাসী কুপিয়ে হত্যা করে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতা-কর্মীর মতো হাসানও আত্মগোপনে ছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে হাসান বাড়িতে যান। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে চৌধুরীহাট বাজারের এক পাশে নিয়ে তাঁকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে নোয়াপাড়া পথেরহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক হাসানকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ঝিনু আকতার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যার আগে একদল মুখোশধারী লোক দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে হাসানকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যান। রাত ১০টার পর খবর পেয়ে তিনি চৌধুরীহাট বাজারে গিয়ে দেখেন, একটি অটোরিকশায় তাঁর স্বামী পড়ে আছেন।
এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেবেন—জানতে চাইলে ঝিনু আকতার বলেন, ‘যে যাবার সে গেছে। নিজেরা নিরাপদে থাকতে চাই। তাই মামলা বা অভিযোগ নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’
তবে তিন বছর আগে হাসান রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান বলে দাবি করেন তাঁর মামতো ভাই ফার্নিচার ব্যবসায়ী আবু তাহের।
এ বিষয়ে আজ সকালে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, যুবলীগের এক সন্ত্রাসীর সহযোগী ছিলেন হাসান। তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছে একদল সন্ত্রাসী। জেলা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। হাসানের নামে মামলা আছে কি না, সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য বল গ
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে সীতা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে বিগত এক মাস ধরে অবস্থান করছেন একদল বন্যহাতি। ১৭ (সতের) দলের এই বন্যহাতির তাণ্ডবে এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগান শ্রমিকদের ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত কাঁচা সড়ক।
এদের তাণ্ডবে বাগানের ২নং সেকশনে বসবাসকারী চা শ্রমিকরা এরইমধ্যে নিজ নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে কর্ণফুলি নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থান নিয়েছে। এই সেকশনে থাকা বহু ঘর হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওয়াগ্গা টি লিমিটেডের পরিচালক খোরশেদুল আলম কাদেরী বলেন, “হাতির তাণ্ডবে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগানের নিজস্ব বোট চালক সানাউল্লাহর বসতবাড়ি। এসময় তিনিসহ তার স্ত্রী-সন্তানেরা ঘর হতে বের হয়ে কোনরকমে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।”
বোট চালক সানাউল্লাহ বলেন, “সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আমি হাতির গর্জন শুনতে পাই। এসময় একটি বড় হাতি আমার ঘর ভাঙার চেষ্টা চালায়। আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই। সেসময় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ঘরের পেছন দিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বোটে করে এপারে চলে আসি।”
চা বাগানের টিলা বাবু চাথোয়াই অং মারমা বলেন, “বিগত এক মাস ধরে ১৭টি হাতির একটি দল বাগানে অবস্থান করছে। মাঝে মাঝে দলটি সীতা পাহাড়ে চলে গেলেও হঠাৎ বাগানে চলে এসে আসে এবং বাগানের গাছপালা, বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের চা শ্রমিকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।”
ওয়াগ্গা চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী বলেন, “বিগত এক মাস ধরে হাতির একটি দল ওয়াগ্গা চা বাগানে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দলে সদস্য সংখ্যা সতেরো ১৭টি। সম্প্রতি দুটি নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে। শিশু হস্তী শাবককে আশীর্বাদ করার জন্য সীতা পাহাড়ের গভীর অরণ্য থেকে আরো একদল হাতি যোগদান করেছে।”
হাতি খুবই শান্তিপ্রিয় জীব। নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে। অনেকে বলে থাকেন, মামারা বেরসিক বাদ্য বাজনা, বাঁশির সুর, গলাফাটা গান, গোলা বারুদ, ড্রামের শব্দ পছন্দ করে না। তারা কোলাহল এড়িয়ে চলে।
গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) স্বচক্ষে দেখা হলো। আমাদের টিলা বাবু চাই থোয়াই অং মারমা শ্রমিকদের নিয়ে পাহাড়ের উপর বাঁশির সুর তুলেছে। সুর ও বাদ্য বাজনা এড়িয়ে মামারা (হাতি) চা বাগান পেরিয়ে সদলবলে বাঁশবনের গভীর থেকে গভীরে হারিয়ে গেলো। হয়তো আবার ফিরে আসবে।
কাপ্তাই বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসার ওমর ফারুক স্বাধীন বলেন, “দিন দিন হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার ফলে হাতি খাবারের সন্ধানে প্রায়ই লোকালয়ে এসে হানা দিচ্ছে। আমাদের উচিত হাতির আবাসস্থল ধ্বংস না করা।”
ঢাকা/রাঙামাটি/এস