দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাজেক ভ্যালিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছিল রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। তবে, একদিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই ভ্রমণে দেওয়া সেই বিধি-নিষেধ তুলে নিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ।
এর আগে, গতকাল সোমবার রাতে রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পাঠান মো.
আরো পড়ুন:
খুলছে দেবতাখুম ভ্রমণের দুয়ার
মাউন্ট একঙ্কাগুয়া অভিযানে যাচ্ছেন জাফর সাদেক
মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সাজেকে পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। সাজেক রিসোর্ট কটেজ ব্যবসায়ীদের একটি আবেদন আমরা পেয়েছি। তারা বলেছেন, যেহেতু পর্যটন মৌসুম শেষের দিকে এবং পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে, তাই এই কয়েকদিন তারা ব্যবসা করতে না পারলে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
তিনি আরো বলেন, “এখনো সাজেকের অনেক রিসোর্ট কটেজ অক্ষত আছে, তাই আমরা সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভ্রমণে নিরুৎসাহিতকরণের বিষয়টি তুলে নেওয়া হয়েছে।”
এই বিষয়ে কটেজ এন্ড রিসোর্ট এসোসিয়েশন অব সাজেকের সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন বলেন, “অগ্নিকাণ্ডের কারণে আমরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত। তার ওপর এখন যদি নিরুৎসাহিতকরণের কারণে পর্যটক আসা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমরা পথে বসে যাব। প্রশাসনের নিরুৎসাহিতকরণ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রশাসনের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”
গতকাল সোমবার দুপুরে সাজেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৯৫টি রিসোর্ট-কটেজ, দোকান ও বাড়ি পুড়ে যায়।
ঢাকা/শংকর/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ রমণ ভ রমণ ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।
কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।
ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।
রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’
কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা।
আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।