ওয়ালটন এসি সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু
Published: 25th, February 2025 GMT
দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রাহকদের সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করতে মাসব্যাপী কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু করেছে। সারা দেশের প্রায় ৪ হাজার সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান ও ভেন্ডর এই প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন।
গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টারে আয়োজিত এই কর্মশালা ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসব্যাপী চলবে। ওয়ালটন লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এবং এসি সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করেছে।
সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিশেষ উদ্যোগ এই কর্মশালায় এসি সার্ভিসিং, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, গ্রাহকসেবার উন্নয়ন, নিরাপত্তা বিধি ও পেশাদার আচরণ বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ওয়ালটনের বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষকরা অংশগ্রহণকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, দ্রুত ও মানসম্মত গ্রাহকসেবা দেওয়ার কৌশল শেখাবেন।
ওয়ালটনের চিফ বিজনেস অফিসার (সিবিও) তানভীর রহমান বলেন, ‘‘ওয়ালটন শুধু পণ্য উৎপাদনই করছে না, বরং গ্রাহকদের সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিতে প্রশিক্ষিত সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা উন্নত করতে কাজ করছে।’’
ওয়ালটনের চিফ সার্ভিস অফিসার নিয়ামুল হক বলেন, ‘‘গ্রাহক সন্তুষ্টিই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মানসম্মত সার্ভিস নিশ্চিত করতে আমরা সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি।’’
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘‘ওয়ালটন শুধু পণ্য বিক্রিই করে না, বরং গ্রাহকদের উন্নততর বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক দ্বারা সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে।’’
ওয়ালটনের এসি রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (আরঅ্যান্ডআই) বিভাগের প্রধান আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘‘ওয়ালটন বাংলাদেশে প্রথম সম্পূর্ণ সিএফসি ও এইচএফসি গ্যাসমুক্ত পরিবেশবান্ধব এসি উৎপাদন করছে। সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের সচেতনতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্যই এই কর্মশালার আয়োজন।’’
ওয়ালটনের এসি সার্ভিস সেকশনের প্রধান আরিফুজ্জামান পিনন বলেন, ‘‘প্রতি বছরের মতো এবারো সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, সার্ভিস পার্টনারদের আরো পারদর্শী করা, যেন তারা গ্রাহকদের দ্রুত ও কার্যকর সেবা দিতে পারেন।’’
ওয়ালটনের ট্রেইনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের রওশন আলী বুলবুল বলেন, ‘‘টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশব্যাপী উন্নত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’’
ওয়ালটন আশা করছে, এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা বাড়বে এবং তারা গ্রাহকদের আরো উন্নত, দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সেবা দিতে পারবেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সার্ভিস সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে ওয়ালটনের এসি সার্ভিস সেকশন।
ওয়ালটনের এই উদ্যোগ দেশের এসি সার্ভিসিং খাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ঢাকা/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত কর গ র হকদ র ত করত
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।