দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রাহকদের সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করতে মাসব্যাপী কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু করেছে। সারা দেশের প্রায় ৪ হাজার সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান ও ভেন্ডর এই প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন।

গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টারে আয়োজিত এই কর্মশালা ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসব্যাপী চলবে। ওয়ালটন লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এবং এসি সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করেছে।

সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিশেষ উদ্যোগ এই কর্মশালায় এসি সার্ভিসিং, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, গ্রাহকসেবার উন্নয়ন, নিরাপত্তা বিধি ও পেশাদার আচরণ বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ওয়ালটনের বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষকরা অংশগ্রহণকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, দ্রুত ও মানসম্মত গ্রাহকসেবা দেওয়ার কৌশল শেখাবেন।

ওয়ালটনের চিফ বিজনেস অফিসার (সিবিও) তানভীর রহমান বলেন, ‘‘ওয়ালটন শুধু পণ্য উৎপাদনই করছে না, বরং গ্রাহকদের সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিতে প্রশিক্ষিত সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা উন্নত করতে কাজ করছে।’’

ওয়ালটনের চিফ সার্ভিস অফিসার নিয়ামুল হক বলেন, ‘‘গ্রাহক সন্তুষ্টিই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মানসম্মত সার্ভিস নিশ্চিত করতে আমরা সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি।’’

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘‘ওয়ালটন শুধু পণ্য বিক্রিই করে না, বরং গ্রাহকদের উন্নততর বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক দ্বারা সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে।’’

ওয়ালটনের এসি রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (আরঅ্যান্ডআই) বিভাগের প্রধান আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘‘ওয়ালটন বাংলাদেশে প্রথম সম্পূর্ণ সিএফসি ও এইচএফসি গ্যাসমুক্ত পরিবেশবান্ধব এসি উৎপাদন করছে। সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের সচেতনতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্যই এই কর্মশালার আয়োজন।’’

ওয়ালটনের এসি সার্ভিস সেকশনের প্রধান আরিফুজ্জামান পিনন বলেন, ‘‘প্রতি বছরের মতো এবারো সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, সার্ভিস পার্টনারদের আরো পারদর্শী করা, যেন তারা গ্রাহকদের দ্রুত ও কার্যকর সেবা দিতে পারেন।’’

ওয়ালটনের ট্রেইনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের রওশন আলী বুলবুল বলেন, ‘‘টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশব্যাপী উন্নত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’’

ওয়ালটন আশা করছে, এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা বাড়বে এবং তারা গ্রাহকদের আরো উন্নত, দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সেবা দিতে পারবেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সার্ভিস সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে ওয়ালটনের এসি সার্ভিস সেকশন। 

ওয়ালটনের এই উদ্যোগ দেশের এসি সার্ভিসিং খাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

ঢাকা/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত কর গ র হকদ র ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ